রিজওয়ান বার্তা=১৯৯৯
চারশালা পরিকল্পনার সমাপ্তিপূর্ব ঘটনা বহুল বিগত বছরের অর্জিত সাফল্যসমূহ বিবেচনা করে আমাদের হৃদয়সমূহ আশায় উদ্দীপ্ত হয়েছে। ৮ম আন্তর্জাতিক বাহা’ই সম্মেলনের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলিতে বাহা’ই বিশ্বে সৃষ্ট কর্মচাঞ্চল্যের এক উর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে, যা দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আমাদের সমাজ প্রশংসনীয়ভাবে বর্ধিত হয়েছে। ইহার মানবসম্পদ ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। সম্প্রসারণ প্রকল্পসমূহ থেকে দৃঢ়করণের প্রচেষ্টাসমূহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক থেকে বহিঃসম্পর্ক বিষয়, যুবদের সেবাকার্য থেকে শৈল্পিক পরিবেশনা ধর্মের বিশ্বকেন্দ্র থেকে দূরবর্তী গ্রাম বা নগরসমূহ-প্রকৃত পক্ষে যে কোন দিক দিয়ে সমাজকে দেখা হোক না কেন অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। পরিকল্পনার দৃশ্যাবলী মনমুগ্ধকর।
৮ম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সৃষ্ট গতিশীলতা অনতিবিলম্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টাগণের সম্মেলনে সঞ্চারিত হয়ে উহার অক্লান্ত অংশগ্রহণকারীগণকে আরও উদ্দীপ্ত করে এবং মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় কনভেনশনসমূহের কার্যাদি পরিচালনায় শক্তি যোগায়। তন্মধ্যে সাবাহ্্ সারাওয়াক ও স্লোভাকিয়া রয়েছে। যারা প্রথমবারের মত মিলিত হয়ে জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ গঠন করেন। সেই একই শক্তি আন্তর্জাতিক শিক্ষাদান কেন্দ্রে সঞ্চারিত হয় যাঁরা বা’ব এর ঘোষণা বার্ষিকীতে উহার ৬ষ্ঠ কার্যকাল শুরু করে অতি অল্প সময়ে খুবই প্রশংসনীয় কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। উপদেষ্টা সদস্যগণ তাদের প্রতিষ্ঠানকে সুবিন্যস্ত শক্তিশালীকরণের মনোনিবেশ করতে গিয়ে এই প্রথম বছরে তাদের নিয়মিত ভ্রমণ থেকে বিরত থাকেন। তবে আশা করা যাচ্ছে যে, এরপর থেকে তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণে যেতে শুরু করবেন। যাতে করে তাদের শক্তিসঞ্চারকারী প্রভাব চারসালা পরিকল্পনার সফলতাপূর্ণ সমাপ্তি প্রভাবিত করতে পারে।
পবিত্র ভূমিতে এই ঘটনাবলী ছাড়াও কার্মেল পর্বতের ওপর নির্মিয়মান প্রকল্পসমূহ, আন্তর্জাতিক কনভেনশনে আগত প্রতিনিধিগণ এতই আবেগ-আপ্লুত বিষ্ময়ের সাথে অবলোকন করেন, উহা শতাব্দীর সমাপ্তির সঙ্গে সম্পন্ন করার পূর্বে নির্ধারিত সময়ের প্রতি আরও বেগবান হয়েছে। গত রিজওয়ানে সকল নির্মাণ এলাকা উন্মোচিত হওয়ার পর কাজের গতি নতুন মাত্রায় পৌঁচেছে। গ্রন্থসমূহের অধ্যয়ন কেন্দ্র এবং লিপি সংরক্ষনাগারে সম্প্রসারিত অংশ ব্যবহারের জন্য কয়েক সপ্তাহের মধ্যে খুলে দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক শিক্ষাদান কেন্দ্রের বহিঃঅংশ মার্বেল পাথরের আচ্ছাদান সম্পূর্ণ হয়েছে, একই সময়ে, ভেতরের সকল অংশের সমাপনী কাজ এগিয়ে চলছে। যে পথ সেতুটি বা’ব-এর সমাধির ধাপের সমতল ভূমিসমূহকে রাস্তার উভয় পার্শ্বে সংযুক্ত করেছে, সেটির স্থান সংকুলানের জন্য হাটজিওনাট এভেন্যুকে নিচু করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং তা স্বাভাবিক যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সমতল ভূমিসমূহের নয়নার্ভিরাম দৃশ্যের উন্মোচনের ফলে জনসাধারণের মনোযোগ এত বেশি আকৃষ্ট হয়েছে যে, পর্বতোপরি ১৯তম সমতল ভূমি দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে যা এক কৃতজ্ঞ জনতার উৎসাহপূর্ণ সাড়া দিতে হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে। শহরের প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টার অংশ স্বরূপ, হাইফার পৌরসভা বা’ব-এর সমাধি এবং পর্বতোপরি সমতল ভূমিসমূহের দৃশ্য সম্বলিত একটি তথ্য পুস্তিকা প্রকাশ করেছে যা হিব্রু ছাড়াও ৫টি প্রধান ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্বকেন্দ্রে সম্পন্ন হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির এমন আরও দুইটি উন্নয়নের উল্লেখ একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছি। প্রথমতঃ তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা প্রতি দলে ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ এ উন্নিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ‘সর্বমহান পবিত্রপত্র’ এর সমাধিস্থল সংলগ্ন রাস্তার বিপরীতে অবস্থিত সদ্য অধিগ্রহণকৃত অট্টলিকার সংস্কার কাজ চলছে, সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হবে। ইহাতে একটি তীর্থযাত্রী সভাস্থল এবং সম্প্রসারিত তীর্থ ভ্রমণ কর্মসূচীর সুবিধাসমূহ থাকবে। দ্বিতীয়তঃ বাহা’উল্লাহ্্র লেখনীসমূহের অনুবাদ এবং তাঁর লেখাসমূহ ইংরেজীতে পুস্তকাকারে প্রকাশের পরিকল্পনাতে যদিও এ প্রক্রিয়া অনিবার্যভাবে ধীরগতি সম্পন্ন এতে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে। সুরা-ই-মুলূক এবং সুরা-ই-হায়েক্ল্্ এর মত প্রধান ফলকলিপিসমূহ ছাড়াও বিভিন্ন রাজা ও শাসকদের প্রতি লেখা পৃথক পৃথক ফলকলিপিসমূহের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ প্রদানের জন্য প্রচেষ্টা চলছে। এ ছাড়াও এতে সুরা-ই-রা-ইস, লোহ্্্-ই-রা-ইস এবং লোহ্্-ই-ফু-আদ সংযোজনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
পদ্ধতিগত প্রচেষ্টার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বর্ধিতহারে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং তার ব্যবহারের মাধ্যমে বাহা’উল্লাহ্্র ধর্ম অপ্রতিরোধ্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে আরও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ফলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। এদের সংখ্যা বর্তমানে ৩৪৪টি, যার ফলস্বরূপ উত্তর আমেরিকা ও ইরান ব্যতীত যেখানে অসংখ্য শিক্ষাক্রম কার্যকর হয়েছে, ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ হাজার ব্যক্তি কমপক্ষে একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাক্রম সম্পন্ন করেছেন, এর সবকিছু ধর্মের সুনিশ্চিত এবং স্বক্রিয় সমর্থকদের বর্ধিষ্ণু সমষ্টিতে অবদান রাখছে। এই অগ্রগতির অব্যক্ত শক্তিসমূহের একটি উদাহরণ, চাঁদ থেকে প্রাপ্ত এক তথ্যবিবরণীতে পাওয়া যায় সেখানে একটি এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীগণের ব্যক্তি উদ্যোগের ফলস্বরূপ ১ হাজারের অধিক ব্যক্তি ধর্মগ্রহণ করেন। মানবসম্পদ উন্নয়নের পদ্ধতিগত কারণের আবশ্যকতা সর্বত্র দৃঢ় হচ্ছে।
প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের কাক্সিক্ষত ফলসমূহ সুনির্শ্চিত করতে, কয়েকটি নির্বাচিত দেশে যেখানকার অবস্থার প্রেক্ষিতে একান্ত প্রয়োজন এবং সম্ভব ছিল, সেখানে আঞ্চলিক বাহা’ই কাউন্সিল বাস্তবায়িত হয়েছে।
একটি কাউন্সিল এবং একটি শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে এমন স্থানে ঐ অঞ্চলের সম্প্রসারণ এবং দৃঢ়করণের প্রক্রিয়াসমূহে দ্রুত সংহতি সাধনে এবং স্থানীয় সমাজসমূহের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানসমূহের বাস্তবমুখী শিক্ষাদান সেবার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। এছাড়াও কার্যবিধি অনুযায়ী মহাদেশীয় উপদেষ্টাগণ এবং কাউন্সিলের মধ্যে সরাসরি সহযোগিতা উহার প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ককে আরো উন্নত করেছে যা একই সময়ে কাউন্সিলকে জাতীয় ও স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের সাথে সংযুক্ত করে আঞ্চলিক পর্যায়ে কার্যসমূহের এক গতিশীল সমন্বয় সাধন করে।
যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের কাজে শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য এবং মহিলাদের উন্নয়নের মত বিষয়সমূহে মনযোগ দিচ্ছে, তারা চিরবর্ধনশীল সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকা-সমূহকেও লাভবান করেছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যালয়ের আরও ব্যাপক প্রচেষ্টাসমূহ হচ্ছে, এই প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের সংখ্যা বৃদ্ধির দ্বারা বাহা’ই নীতিসমূহের সাথে সংগতিপূর্ণ বিশ্বজনীন শিক্ষা প্রক্রিয়ার উন্নয়ন সাধন। স্পষ্টভাবেই উন্নয়ন কর্মসূচীসমূহ বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা শক্তিশালী হচ্ছে। বাহা’ই প্রতিষ্ঠানসমূহের গৃহীত প্রকল্পসমূহ এবং ধর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত ব্যক্তি প্রচেষ্টাসমূহে উহা দৃশ্যমান। শেষোক্তটির একটি বিশিষ্ট উদাহরণ হচ্ছে; ইউনিটি কলেজ। প্রথমতঃ ইহা ইথিওপিয়ার একটি পরিবার দ্বারা ত্বরান্বিত হয় এবং ১৯৯৮ এর শেষ থেকে যা দেশের একমাত্র ব্যক্তিমালিকনাধীন কলেজ, যার ছাত্র সংখ্যা বিগত বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। আরেকটি উদাহরণ ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও উহার গুরুত্ব কোনভাবেই কম নয় যা হচ্ছে, নিউইয়র্কের বাফেলের একটি পরিবারের গৃহীত উদ্যোগ। এখানে তারা তাদের বাড়ীতে শহরের বেশ কিছু শিশু ও যুবকদেরকে আচরণবিধিসহ বাহা’ই আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষাদানের দ্বারা তাদের উন্নয়নে সাহায্য করেছেন, যাতে তারা দারিদ্র ও বর্ণবাদের দ্বারা সৃষ্ট আত্মঘাতী মনোভাব ত্যাগ করতে পারে।
বহিঃসম্পর্কের ক্ষেত্রে ইরানের সংঘঠিত দুইটি মর্মান্তিক ঘটনা দ্বারা প্রাণবন্ত কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত জুলাই এ মাশ্্হাদে জনাব রুহুল্লাহ্্ রুহানীর অকস্মাৎ মৃত্যুদ- দেওয়ার ঘটনা যা সরকারীভাবে গত ৬ বছরে প্রথম, বিশ্ববিবেককে প্রবলভাবে নাড়া দেয়, সরকারসমূহ এবং জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠনসমূহে নজিরবিহীন ক্ষোভের সৃষ্টি করে, সেপ্টেম্বরের শেষদিকে বাহা’ই উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর গোয়েন্দা বিভাগ এক আক্রমন পরিচালনা করে, এ সময় তারা ৩৬ জন অনুষদ সদস্যকে গ্রেফতার করে দেশব্যাপী ৫ শতের অধিক বাড়িতে হানা দেয়। শেষোক্ত ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদমুখর জনমত গড়ে তোলে, যা এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, সংঘসমূহ, শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রদলসমূহ অংশ নিচ্ছেন এবং সংবাদ মাধ্যমসমূহ বিশেষ মনযোগ দিয়েছে তন্মধ্যে লে মন্ডে, দি নিউইয়র্ক টাইমস, এবং অন্যান্য বহুল প্রচারিত পত্রিকাসমূহ বেশ কিছু প্রবন্ধের দ্বারা বিষয়টি তুলে ধরেছে। গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইরানের ওপর গৃহীত আরেকটি প্রস্তাব সাফল্যের অনর অধ্যায় যাতে বাহা’ইদের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে যা অবশ্যই এই দুইটি ধর্মীয় নির্দয় নির্যাতনের ঘটনাবলী স্পষ্ট উপস্থাপনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকবে।
আমাদের অবরুদ্ধ ভাইদের রক্ষার্থে বিশ্বের সর্বত্র বন্ধুদের দাবিসমূহ প্রবল হওয়ার পাশাপাশি, বহিঃসম্পর্ক বিষয়ক প্রচেষ্টাসমুহের ব্যাপকতা বৃদ্ধিতে আরও মনযোগ দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার শিক্ষার বিকাশে, বাহা’ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জাতিসংঘ কার্যালয়ের আহ্বানে, বেশকিছু জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের প্রচেষ্টায় সার্বজনীন বিচারালয়ের একজন দূত মি. জিওভান্নী বালেরিও, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহে চারমাস ব্যাপী এক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি ২২ জন রাষ্ট্রপ্রধান, ৫ জন সরকার প্রধান, ৪০ জনেরও অধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বাহা’ই সমাজের নিমন্ত্রিত অথিতিরূপে ট্রুথ এন্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের সভাসমূহে যোগদেন এবং জাতিগত বৈষ্যমের বছরগুলিতে তাদের মধ্যে বিরাজমান অব্যাহত প্রমাণাদি তুলি ধরতে সক্ষম হন। বলাবাহুল্য, বহিঃসম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভিত্তিক উদ্যোগসমূহে সমাজের নিয়োজিত শক্তিসমূহের উদাহরণ স্বরূপ গণতথ্য প্রকল্পসমূহ সকল মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার লাভ করে।
একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনা ছিল ইউরোপে ধর্মের শতবার্ষিকী উদ্্যাপনের জন্য প্যারিসের অনুষ্ঠানে সংগীত শিল্পকলার মত সৃজনশীল মাধ্যমের ব্যবহার । ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে ৬৮ সদস্য বিশিষ্ট বাহা’ই শিল্পীদলের পরিবেশনা ৮টি ইউরোপীয় শহরে অগণিত দর্শকের চিত্তবিনোদন করে এবং বিপুল সংখ্যকের কাছে ধর্মের বাণী পৌঁছে দেয়। গত সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ডে ভার্সাই উৎসব নামে পরিচিত সংগীত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যা সুইডেনের রাণী উদ্বোধন করেন। সেখানে নরওয়ের বাহা’ই কবি লাছেফোরেছেন লিখিত “লাইট এন্ড ফায়ার” এর পূর্ণাঙ্গ নৃত্যাভিনয় সাফল্যজনকভাবে পরিবেশিত হয়। এ শিল্পকর্মটি ইরানের সাম্প্রতিক শহীদের বীরত্ব গাথা নিয়ে রচিত যা দর্শকদের মাঝে ধর্মের ধারণা যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়েছে। প্রচেষ্টাসমূহের এই বিশেষ ক্ষেত্রে ইউরোপের দর্শনীয় অগ্রণী ভূমিকার আরও স্বীকৃতি পাওয়া গেছে, যখন অষ্ট্রিয়ান চেম্বার মিউজিক উৎসবে মি. খাদেম মিসাগ যিনি একজন বেহালাবাদক এবং সংগঠিত পরিচালককে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি অষ্ট্রিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান অষ্ট্রিয়ান ক্রস ফর সায়েন্স এন্ড আর্টস পদকে ভূষিত করেন। একই উৎসবের একটি অনুষ্ঠানে বাহা’ইসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের পবিত্র বাণীসমূহ আবৃত্তি করা হয়। এছাড়াও বিশ্বের সর্বত্র বাহা’ই যুবগণ ধর্মের প্রচারে শিল্পকলার ব্যবহার দ্বারা যে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন তার কথা অবশ্য উল্লেখ করতে হয়। বিশেষভাবে নৃত্যাভিনয়ের দ্বারা বক্তব্য তুলে ধরার প্রচেষ্টাসমূহ বাহা’ই সমাজে এবং ইহার বাইরে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
অতঃপর, আমরা দলে দলে অন্তর্ভূক্তির প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একটি গতিশীল সমাজ হিসেবে এই রিজওয়ান মৌসুমে প্রবেশ করছি।
এভাবে আমরা ইউরোপের তিনটি দেশ লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও মেসেডোনিয়ায় প্রথমবারের মত জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ গঠনের নির্বাচনী সম্মেলনের দ্বারা প্রশাসনিক শক্তি নিয়ে পরিকল্পনার শেষ বর্ষে প্রবেশ করছি, এর ফলে সার্বজনীন বিচারালয়ের স্তম্ভের সংখ্যা ১৮২তে উন্নিত হবে। তবুও এই উৎসবমুখর মুহূর্তসমূহের উর্ধ্বে কিছু প্রত্যাশা পূরণের জন্য অপেক্ষমান তালিকার প্রথম ও সর্বাগ্রে রয়েছে; ২০০০ সালের রিজওয়ানে চারশালা পরিকল্পনার সমাপ্তি। অতঃপর একই বছরে অঙ্গিকার দিবসে মহাদেশীয় উপদেষ্টা পরিষদের নতুন কার্যকাল শুরু হবে, যখন উহার সকল সদস্যকে বাহা’ই বিশ্বকেন্দ্রে এক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে, এতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাদান ও দৃঢ়করণের পরবর্তী পরিকল্পনাসমূহের পর্যালোচনা করা হবে। উপদেষ্টাগণের সম্মেলন আন্তর্জাতিক শিক্ষাদান কেন্দ্রকে উহার স্থায়ী আসনরূপে প্রতিষ্ঠিত করবে। এ উপলক্ষে সারা বিশ্বের সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্য মহাদেশীয় উপদেষ্টাগণের সাথে যোগ দিতে পবিত্র ভূমিতে নিমন্ত্রিত হবেন। ততদিনে কার্মেল পর্বতের প্রকল্পসমূহ সমাপ্ত হবে এবং উহাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটির প্রস্তুতিসমূহ সুসম্পন্ন হবে, এর জন্য ২০০১ সালের ২২ ও ২৩শে মে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। যে সময়ে প্রত্যেক জাতীয় বাহা’ই সম্প্রদায়ের বেশ কিছু প্রতিনিধিকে এতে যোগ দিতে নিমন্ত্রণ করা হবে। এ অনুষ্ঠানের বিস্তারিত যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে।
এই অভাবনীয় ঘটনাসমূহের চিত্র বিংশ শতাব্দী এবং নবজাগরণের সাধারণ যুগ নামে খ্যাত নতুন সহ¯্রবর্ষের সময়কে দ্বিধাগ্রস্থ করেছে। একটি আলোকিত সম্প্রদায়ের দ্বারা গঠনমূলক প্রচেষ্টাসমূহ এবং আতঙ্কগ্রস্থ কোটি কোটি জনতা, যারা সে দিবসের সম্বন্ধে অবগত নন যে দিবসে তারা বসবাস করছেন, তাদের পার্থক্যসমূহ তুলে ধরতে ব্যর্থতার চিত্র। এই শতাব্দীসমূহে বিচ্ছুরিত হবে সে সম্বন্ধে অতি নগণ্য উপলব্ধি নিয়ে প্রকৃত পথ নির্দেশ হারিয়ে ইহার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাসমূহে হতাশাগ্রস্থ হয়ে, তারা শতাব্দীর তীব্র আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে। তারা গ্রহের সর্বত্র সংঘটিত সামাজিক অস্থিরতার কারণসমূহ চিহ্নিত করতে ব্যর্থ, বিভ্রান্তির প-িতদের পরামর্শ নিয়ে এবং হতাশার গভীরে নিমজ্জিত হচ্ছে। শেষ বিচারের ভবিষ্যৎ বাণীতে বিচলিত হয়ে, তারা ভ্রান্তভাবে প্রাপ্ত কল্পনার অপচ্ছায়ার সাথে যুদ্ধ করছে। যুগ প্রভু যে পরিবর্তনশীল দূরদৃষ্টি দিয়েছেন, তার সম্বন্ধে কিছুই না জেনে ঈশ্বরের নতুন দিবসের অতুলনীয়তার প্রতি অন্ধ থেকে তারা হোচট খেয়ে চলছে।
একটি পরিকল্পনার সেই উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নে, যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সেই প্রক্রিয়াকে বেগবান করা যার দ্বারা আরও অধিক সংখ্যক বিশ্ববাসী তাদের অন্বেষণের লক্ষ্য খুঁজে পেতে পারে এবং একটি একতাবদ্ধ শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী জীবন গড়তে পারে তাতে আমাদের সকলের দ্রুত সক্রিয়তা এবং অপ্রশমিত সক্রিয়তা ব্যতিত কোন কিছু হৃদয় ও মনের দুঃখভারাক্রান্ত অবস্থার পরিবর্তন সাধনে সক্ষম নয়।
প্রিয় বন্ধুগণ, একটি তারার ঝিকিমিকির মতই দিনগুলো চলে যাচ্ছে। পরিবর্তনের এই দুর্লভ যুগসন্ধিক্ষণে এতে আপনার চিহ্ন এঁকে দিন যার সমতুল্য যুগ আর কখনোই ফিরে আসবে না। আপনার কাজের দ্বারা সে চিহ্ন সৃষ্টি করুন যা আপনাকে স্বর্গীয় করুণার নিশ্চিয়তা দেবে……….সমগ্র মানবজাতির জন্য সকলে জাগতিক ধারণার উর্ধ্বে একটি ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা আপনি পাবেন।