রিজওয়ান বার্তা=২০০২

রিজওয়ান বার্তা=২০০২

সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়

রিজওয়ান ২০০২

 

বিশ্বের বাহা’ইদের প্রতি

সুপ্রিয় বন্ধুগণ,

সাংগঠনিক যুগের পঞ্চম ধাপের (ঊচঙঈঐ) সূচনালগ্নে ধর্মের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে ঘটনাসমূহের বেগবান সম্মুখ প্রবাহ আমাদের সামনে এমন একটি দৃশ্য উপস্থিত করে যা সম্ভ্রম উদ্দীপক। ধর্মের অভ্যন্তরে গত মে মাসের ঘটনাগুলির (যা কার্মেল পর্বতের অট্টলিকাসমূহের নির্মাণ কার্য সম্পন্ন হওয়ার নির্দেশক ছিলো)ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুভূতিকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়, কেননা তার প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে উপগ্রহের মাধ্যমে সারা গ্রহব্যাপী সম্প্রচার হয় এবং গণমাধ্যমে তার প্রচার আজ পর্যন্ত অন্য কোন বাহা’ই অনুষ্ঠানকে দেয়া প্রচারের চেয়ে ব্যাপক ছিলো। যখন কার্মেলের ফলকলিপির বাস্তব উন্মোচনের সর্বশেষ সাক্ষ্যসমূহ তার শ্বাসরোধক উজ্জ্বল্যের সাথে পূর্ণরূপে বিশ্বের চোখের সামনে প্রকাশিত হয় তখন বাহা’উল্লাহ্্র ধর্ম অজ্ঞাত অবস্থা থেকে তার উত্থানের চলমান প্রক্রিয়ায় পরিচিতি একটি নতুন স্তরে দ্রুত চলে আসে। এইরূপ, ধর্মের ইতিহাসে একটি অমোচনীয় অধ্যায় লিপিবদ্ধ হয়।

আমাদের অদম্য ধর্মকে যে শক্তি প্রাণচাঞ্চল্য প্রদান করে তার এই বহিঃপ্রকাশের পরিপূরক ছিলো অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াসমূহের দিক যা গত রিজওয়ানে পাঁচসালা পরিকল্পনার সূচনা থেকে কার্যরত ছিলো। তাই আমরা জাতীয় কনভেনশনসমূহে সমবেত প্রতিনিধিগণ এবং সারা বিশ্বের বাহা’উল্লাহ্্র সকল অনুসারীদেরকে আমাদের সাথে পরিকল্পনার কার্যকালের প্রথম বৎসরে কতিপয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ দিকগুলির প্রতি গভীর চিন্তা-ভাবনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।এই বিশেষ দিকগুলি হৃদয়কে আনন্দিত এবং যে পথে পরিকল্পনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার অপরিমেয় সম্ভাবনাসমূহের প্রতি আত্মবিশ্বাস যোগাবেই।

পরিকল্পনার প্রয়োজনগুলির প্রতি তাদের উৎসাহপূর্ণ সাড়া হিসেবে জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ রিজওয়ানের পূর্বে এবং তার পর পরই মহাদেশীয় উপদেষ্টাগণের সাথে পরপর কয়েকটি সভায় মিলিত হয়। এই সভাগুলি (পরিকল্পনার) একটি বলিষ্ঠ সূচনার গতি নির্ধারণ করে দিলো, যার বৈশিষ্ট্য ছিলো দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়ায় একটি নতুন উপাদান কার্যকর করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ। প্রতিটি জাতীয় সমাজে, বাহা’ই প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের দেশের পদ্ধতিগত পর্যালোচনা আরম্ভ করে, যার লক্ষ্য ছিলো তাকে ক্লাস্টারগুলিতে (গুচ্ছ) ভাগ করা, যার প্রত্যেকটির গঠন ও আকার তাদের কার্যক্রমের মাত্রার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বৃদ্ধি ও উন্নতির ক্ষেত্রে হবে নিয়ন্ত্রণসাধ্য। এই ধরনের এলাকা ভাগ, যা ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫০টি দেশ থেকে (আমাদেরকে) জানানো হয়েছে, একটি সুশৃঙ্খল বৃদ্ধি এবং দৃঢ়করণের ধারাকে বাস্তবরূপ দেয়াকে সম্ভবপর করে। এইভাবে পদ্ধতিগত বৃদ্ধির তত উন্নতি একটি সম্যক দৃষ্টিকোণ বা দূরদৃষ্টি সৃষ্টি হয়, যাতে কোন দেশে ক্লাস্টার থেকে ক্লাস্টারে সমস্ত অঞ্চলে অব্যাহত রাখা যেতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মের জন্য উন্মুক্ত হয় নাই এমন ক্লাস্টারগুলি, অতীতে যেভাবে উন্মুক্ত হয় নাই সেরূপ চিহ্নিত অঞ্চলগুলির মত স্বদেশীয় পথিকৃতদের লক্ষ্য হয়ে যায়। অপরদিকে উন্মুক্ত ক্লাস্টারসমূহ তাদের অভ্যন্তরীণ উন্নতির প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেÑএই প্রক্রিয়া পরিকল্পনার তিনটি পরস্পরকে শক্তিদানকারী উপাদান ঃ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সমাজ দ্বারা চালিত।

এটা খুবই উৎসাহজনক যে এই কাজের অগ্রগতি প্রশিক্ষণ ইনিষ্টিটিটিউট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধিক শক্তিশালী হয়েছে, এই প্রক্রিয়া গত বছরে অনেক দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিউটরদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে লক্ষ্যণীয় মাত্রায় দৃঢ় হয়েছে। যেখানে প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট সুপ্রতিষ্ঠিত এবং অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেখাানে তিনটি মূল কার্যক্রমÑঅধ্যয়নচক্র, ভক্তিমূলক সভাসমূহ এবং শিশু ক্লাস-তুলনামূলকভাবে সহজে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিঃসন্দেহে, অনুসন্ধানকারীদের তাদের বাহা’ই বন্ধুদের আমন্ত্রণে ক্রমবর্দ্ধমান সংখ্যায় এই সব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এই (কার্যক্রমসমূহের) উদ্দেশ্যকে একটি নতুন মাত্রা প্রদান করেছে, ফলস্বরূপ (ধর্মে) নতুন অন্তর্ভূক্তি হচ্ছে। এখানে নিশ্চিতরূপে শিক্ষাদান কাজে একটি অত্যন্ত বৃহৎ সম্ভাবনাময় দিক রয়েছে। এই মূল কার্যক্রমসমূহ যা সূচনাতে মূলত স্বয়ং বিশ্বাসীদের সুবিধার জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছিলো তা স্বাভাবিকভাবেই দলে দলে যোগদানের সিংহদ্বারে পরিণত হচ্ছে। অধ্যয়নচক্র, ভক্তিমূলক সভা এবং শিশুদের ক্লাসগুলিকে ক্লাস্টারসমূহের কাঠামোর সাথে যুক্ত করার ফলে কর্মপন্থার একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নমুনা তৈরী হয়েছে যা ইতিমধ্যেই গঠনমূলক ফলাফল প্রদান করছে। আমরা নিশ্চিত যে, এই আদর্শের (নমুনার) বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ আগামী বছরগুলোতে ধর্মের প্রগতির জন্য অপরিমেয় সম্ভাবনা বহন করে।

বিশ্ব সমাজের পদ্ধতিগত বৃদ্ধির ধারণাকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষা কেন্দ্র দ্বারা প্রচুর কর্মশক্তি ব্যয় করার কারণে এই রোমাঞ্চকর প্রত্যাদেশাগুলি আরো অধিক সম্ভাবনাময় হয়ে উঠে। সম্প্রতি শুরু হওয়া সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যদের নতুন মেয়াদের সুযোগ নিয়ে শিক্ষা কেন্দ্র বছরের শেষ মাসগুলিতে পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা দানের জন্য ১৬টি আঞ্চলিক সম্মেলনের আহ্বান জানান। প্রত্যেকটিতে তারা তাদের দুইজন সদস্যকে প্রেরণ করেন। সম্মেলনগুলিতে কয়েকজন ছাড়া বিশ্বের সমস্ত সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যগণ অংশগ্রহণ করে ছিলেন, “প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট এবং পদ্ধতিগত বৃদ্ধি” বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রিভূত করায় অংশগ্রহণকারীগণকে প্রচুর তথ্য প্রদান করে যা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সমস্ত সমাজের কাঠামোতে ছড়িয়ে পড়বে।

এমন সমৃদ্ধ, এমন অভিজ্ঞ, ঐশী নির্দেশনা দ্বারা অনুপ্রাণিত কর্মপন্থার প্রতি এমন একাগ্রচিত্ত একটি সমাজ এমন এক পৃথিবীর দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করেছে যার অধিবাসীগণ মে ২০০১ সালে পবিত্র ভূমিতে সংঘঠিত ঘটনাবলীর পর থেকে আরো গভীরভাবে বহুমুখি অরাজকতার চোরাবালিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তথাপি, ঠিক এমনই প্রতিকূল অবস্থায় ধর্মের অগ্রগতি লাভ করার কথা এবং এইরূপ বিস্তার লাভ করবেও। সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রন্থ ঞযব ঝঁসসড়হং ড়ভ ঃযব খড়ৎফ ড়ভ ঐড়ংঃং (দেবদূতগণের প্রভুর আহ্বান) যাতে পৃথিবীর রাজন্যবর্গ এবং শাসকদের প্রতি বাহা’উল্লাহর ফলকলিপির সম্পূর্ণ পাঠ রয়েছে, অন্যায়, নিপীড়ন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সতর্কবাণী উপেক্ষা করার যে চরম পরিণাম হতে পারে তা আমাদেরকে সুন্দরভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়। সর্বত্র মানুষের চেতনার যে প্রচ- আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে তা তাঁর প্রস্তাবিত চিকিৎসার অত্যাবশ্যকীয়তাকেই বুঝিয়ে দেয়। আমরা, তাঁর বিশ্বস্ত সেবকদের ছড়িয়ে থাকা দলগুলি, এইভাবে আর একবার দুর্নিবার সম্ভাবনার মুখোমুখি হচ্ছিÑ তাঁর ধর্মের শিক্ষাদানের সম্ভাবনাসমূহ, তাঁর আশ্চর্যজনক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ও ত্যাগের সাথে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বন্তুগত উপাদানসমূহ দান করার সম্ভাবনাÑযার উপর আধ্যাত্মিক কার্যকলাপের সম্পাদন অবশ্যম্ভাবীরূপে নির্ভরশীল।

আমাদের অপরিহার্য্য কর্তব্য হচ্ছে, কোন ভীতি বা দ্বিধা ছাড়া, সেই একমাত্র বার্তার প্রচার এবং তার পরিবর্তন সাধনকারী গুণকে প্রদর্শিত করার জন্য বর্তমান গোলযোগকে কাজে লাগানো। পুতঃপবিত্র সুষমা আমাদেরকে কি ক্ষমতাবান করেন নাই এবং শক্তিশালী বাণীর মাধ্যমে আশ্বাস প্রদান করেন নাই? তাঁর প্রেমপূর্ণ উপদেশ হলো “এই জগতের ঘটনাগুলিকে তোমাদিগকে বিষন্ন করিতে দিও না” তিনি আরো বলেন “আমি ঈশ্বরের শপথ করিয়া বলিতেছি, আনন্দের সাগরে তোমার নৈকট্য লাভ করিবার জন্য ব্যাকুল, কেন না প্রত্যেকটি ভাল বস্তু তোমার জন্য সৃষ্টি করা হইয়াছে এবং সময়ের প্রয়োজন অনুসারে তোমার নিকট প্রকাশিত করা হইবে।”

কোন সন্দেহ দ্বারা বাধাগ্রস্থ না হয়ে বা কোন প্রতিবন্ধকতা দ্বারা বিলম্বিত না হয়ে, বর্তমান পরিকল্পনা নিয়ে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যান।

সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়