রিজওয়ান বার্তা=২০১২
একশত বছর পূর্বে রিজওয়ান উৎসবের একাদশ দিবসের মধ্যঅপরাহ্নে, আব্দুল-বাহা, কয়েকশত লোকের এক শ্রোতাম-লীর সম্মুখে দাড়িয়ে শক্ত হাতে একজন শ্রমিকের কুঠার তুলে নিয়েছিলেন এবং উত্তর শিকাগোর গ্রোস পয়েন্টের উপাসনালয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানের ঘাষের চাবড়া ভেদ করেছিলেন। সেই বসন্ত দিবসে তাঁর সাথে মাটি খুঁড়তে যারা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন তারা বৈচিত্রময় শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে এসেছিলেন – তাদের মধ্যে নরওয়েবাসী, ভারতীয়, ফরাসী, জাপানী, পারস্যবাসী, আমেরিকার আদিবাসী কয়েকজন মাত্র ছিলেন। এমন মনে হচ্ছিল যেন, উপাসনালয়টি-তখনও অনির্মিত-মাস্টারের ইচ্ছাগুলি পূরণ করে চলেছে, যা তিনি উদ্বোধনের প্রাক্কালে এইরূপ প্রতিটি অট্টালিকার জন্য ব্যক্ত করেছিলেন:“মানবজাতি যেন একটি সভাস্থল খুঁজে পায়” এবং “মানবজাতির একতার ঘোষণা যেন ইহার পবিত্রতার উন্মুক্ত আঙ্গিনাগুলি থেকে অগ্রসর হয়।”
সেই সময়ে তাঁর শ্রোতাম-লী, এবং তাঁর মিশর ও পাশ্চাত্যের ভ্রমণকালে যারা তাঁর কথা শুনেছেন তাদের সকলে, সমাজের জন্য, ইহার নৈতিক মানদ-সমূহ ও সর্বাগ্রে করণীয় কাজগুলির জন্য তাঁর বাণীর সুদূর-প্রসারী নিহিতার্থগুলি অস্পষ্টভাবে হয়ত উপলব্ধি করেছিলেন। আজ পর্যন্ত, কেউ কি একটি দূরবর্তী ও অস্পষ্ট ইঙ্গিত ব্যতীত ভবিষ্যৎ সমাজের কোন কিছু এক নজরে দেখার দাবি করতে পারে, যা গড়ে তোলার জন্য বাহা’উল্লাহ্ র প্রত্যাদেশ পূর্ব-নির্ধারিত হয়েছে? এজন্য কেহ যেন অনুমান না করেন যে, যে সভ্যতার প্রতি ঐশ্বরিক শিক্ষাগুলি মানবজাতিকে প্রণোদিত করছে উহাতে কেবল বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার সমন্বয়সাধনগুলি করা হবে। আদৌ তা নয়। পাশ্চাত্যের মাতৃ উপাসনালয়টির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের কয়েকদিন পর প্রদত্ত একটি বক্তৃতায় আব্দুল-বাহা বলেছেন যে “আধ্যাত্মিক শক্তিগুলির প্রকাশের ফলাফলের মধ্যে যা থাকবে তা হচ্ছে মানবজগৎ স্বয়ং একটি নতুন সামাজিক কাঠামোর সাথে খাপ খাইয়ে নেবে” এবং “মানবীয় বিষয়াদির সর্বত্র ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা দৃশ্যমান হবে।” এইগুলি, এবং মাস্টারের অন্যান্য অগণিত উক্তি যেগুলির প্রতি বাহা’ই সমাজ এই শতবার্ষিকী লগ্নে বার বার ফিরে তাকাচ্ছে, সেগুলি বর্তমানে যেরূপ সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে উহাকে তাঁর পিতা কর্তৃক বিশ্বকে প্রদত্ত বিষ্ময়কর দূরদৃষ্টি থেকে কতটা আলাদা করে সেই দূরত্বের সচেতনতা জাগ্রত করে।
হায়, প্রশংসনীয় প্রচেষ্টাগুলি সত্ত্বেও, প্রতিটি ভূ-খন্ডে, সমাজের পরিস্থিতিগুলির উন্নতিসাধনের জন্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের অনেকের কাছে এইরূপ একটি দূরদৃষ্টির বাস্তবায়নে প্রতিরোধকারী বাধাসমূহ অনতিক্রম্য মনে হয়। তাদের আশাগুলি মানব প্রকৃতি সম্বন্ধে ভ্রান্ত অনুমানগুলির উপর প্রতিষ্ঠিত যা বর্তমান কালের জীবনযাত্রার কাঠামোগুলি ও ঐতিহ্যগুলিতে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যেন সেগুলিই প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতার মর্যাদা। এই অনুমানগুলি, আধ্যাত্মিকভাবে উদ্দীপিত কোন আত্মা যার নিকট সহজলভ্য আধ্যাত্মিক শক্তির ভান্ডার রয়েছে যে ইহার উপর মনোনিবেশ করে, তার প্রতিও কোন বিবেচনা করে না; তদস্থলে, তারা মানবজাতির ব্যর্থতাগুলির উপর নির্ভর করে. যার উদাহরণগুলি হতাশার এক সাধারণ জ্ঞানকে প্রতিদিন সুদৃঢ় করছে। ভ্রান্তির স্তরবিশিষ্ট একটি পর্দা এভাবেই একটি মৌলিক সত্য আড়াল করছে: বিশ্বের অবস্থা মানব চেতনার একটি বিকৃতি প্রতিফলিত করছে, যা ইহার প্রকৃত স্বভাব নয়। ঈশ্বরের প্রত্যেক প্রকাশের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবজাতির আভ্যন্তরিন ও বাহ্যিক উভয় অবস্থায় একটি রূপান্তর কার্যকর করা এবং এই রূপান্তর জনগণের একটি ক্রমবর্ধমান প্রতিষ্ঠানরূপে প্রাকৃতিকভাবে ঘটে, যা ঐশ্বরিক অনুশাসনগুলি দ্বারা ঐক্যবদ্ধ, যা সামাজিক পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়ায় অবদান রাখার জন্য আধ্যাত্মিক সামর্থ্যগুলি গড়ে তুলতে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে। এক শতাব্দী পূর্বে মাস্টার কর্তৃক কঠিন ভূমির উপর আঘাতের মত, হতে পারে এ যুগের বিরাজমান মতবাদগুলি, প্রথমে, পরিবর্তনের জন্য অভেদ্য মনে হতে পারে, কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে সেগুলি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে, এবং “ঈশ্বরের বদান্যতার বসন্তকালীন বর্ষণগুলি দ্বারা সতেজ ও সুন্দর “প্রকৃত উপলব্ধির পুষ্পরাজি আবির্ভূত হবে।”
আমরা ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তাঁর বাণীর শক্তির মাধ্যমে, আপনারা Ñ তাঁর মহান নামের সমাজ – পরিবেশগুলির উন্নয়ন করছেন যেখানে প্রকৃত উপলব্ধি প্রস্ফুটিত হবে। এমনকি যারা ধর্মের জন্য কারাবাসের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছেন, তাদের অব্যক্ত ত্যাগ ও অবিচলতা দ্বারা, সহানুভুতিশীল হৃদয়গুলি “জ্ঞান ও বিজ্ঞতার হায়্যাসিন্থগুলি(কচুরীপানারফুল)পুষ্পিত হতে সমর্থ হচ্ছে।” বিশ্বের সর্বত্র, আগ্রহী হৃদয়গুলি পাঁচসালা পরিকল্পনার অনুবিধিগুলির পদ্ধতিগত বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ব গড়ার কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। ইহার বৈশিষ্ট্যগুলি এত ভালোভাবে বোধগম্য হয়েছে যে, সেগুলির উপর এখানে আর কোন মন্তব্য করার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমাদের মনে হয় না। সর্ব-বদান্য বিধাতার দ্বারপ্রান্তে নিবেদিত আমাদের সানুনয় প্রার্থনা এই যে, পরিকল্পনার অগ্রগতির প্রতি অবদানে আপনাদের প্রত্যেকের প্রতি সর্বোচ্চ রাজ্যের সহায়তার জন্য প্রদত্ত হোক। আমাদের ঐকান্তিক আকাঙ্খা – বিগত বছরে আপনাদের উৎসর্গিত প্রচেষ্টাগুলি প্রত্যক্ষ করার দ্বারা স্ফীত – এই যে আপনারা আপনাদের জ্ঞান, যা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জন করছেন, তার নিশ্চিত-পদক্ষেপ প্রয়োগ তীব্রতর করবেন । এখন ইতস্ততঃ করার সময় নয়; নতুন প্রভাত সম্বন্ধে অনেকেই অবগত নয়। আপনারা ব্যতীত আর কে ঐশ্বরিক বার্তা পৌঁছাতে পারে? “ঈশ্বরের শপথ ধর্মের প্রতি নির্দেশ করে বাহা’উল্লাহ্ দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন, “এই হইতেছে অন্তর্দৃষ্টি ও নিরাসক্তি, দূরদৃষ্টি ও নৈতিক অনুপ্রেরণার ক্ষেত্র, যেখানে করুণাময়ের সাহসী অশ্বারোহীগণ ব্যতীত-যারা সত্তার জগতের সাথে সকল আসক্তি ছিন্নœ করিয়াছে-অন্য কেহ দ্রুত ধাবমান হইতে পারে না ।
কর্মরত বাহা’ই বিশ্বকে মনোযোগ সহকারে দেখতে পাওয়া বাস্তবিক-ই একটি উজ্জ্বল দৃশ্যের অবলোকন। ব্যক্তি বিশ্বাসীর জীবনে সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার সাথে ভাবের আদান-প্রদান করতে এবং মানবজাতির প্রতি সেবা দান করতে অন্যদের নিমন্ত্রণ করার আকাঙ্খা করে, যুগের পরম প্রভূ কর্তৃক এইরূপ প্রতিটি আত্মার জন্য অভিপ্রেত আধ্যাত্মিক রূপান্তরের চিহ্নগুলি প্রত্যক্ষ করা যেতে পারে। যে কোন বাহা’ই সমাজের প্রাণবন্তকারী কর্মকা-গুলি যা ইহার যুব ও বৃদ্ধ সদস্যগণ তথা ইহার বন্ধু ও সহযোগিতাকারীদের সাধারণের কল্যাণের প্রতি সেবাদান করার সামর্থ্য বৃদ্ধির প্রতি উৎসর্গিত, উহার চেতনার মধ্যে ঐশ্বরিক শিক্ষাগুলির উপর প্রতিষ্ঠিত একটি সমাজ কিভাবে উন্নত হতে পারে তার একটি ইঙ্গিত হৃদয়ঙ্গম করা যেতে পারে। এবং ঐ সকল অগ্রগামী ক্লাস্টারে যেখানে পরিকল্পনার কর্মকাঠামো দ্বারা পরিচালিত কর্মকা-গুলি প্রচুর এবং করণীয়গুলির মধ্যে সংলগ্নতা নিশ্চিত করার চাহিদাগুলি অত্যন্ত সাগ্রহ, সেখানে স্বাভাবিকভাবে বিকাশমান প্রশাসনিক কাঠামোগুলি উহার ক্ষীণ আলোকমালা প্রদর্শন করে, সেগুলি যতই অনুজ্জ্বল হোক না কেন, এভাবেই ধর্মের প্রতিষ্ঠানগুলি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের কল্যাণ ও প্রগতি সংবর্ধিত করতে তাদের দায়িত্বগুলির একটি পূর্ণতর বিন্যাস পরিগ্রহ করবে। অতএব, স্পষ্টভাবে ব্যক্তি, সমাজ, এবং প্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়ন অপরিমেয় প্রতিশ্রুতি ধারণ করে। কিন্তু, একে ছাড়িয়ে, আমরা বিশেষ আনন্দের সাথে লক্ষ্য করি কিভাবে এই তিনটির সম্পর্কগুলি এত সহানুভূতিশীল ভালোবাসা ও পারস্পরিক সমর্থন দ্বারা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
পক্ষান্তরে, মুক্ত বিশ্বে তিন সাদৃশ্যপূর্ণ কর্মীর মধ্যে সম্পর্কগুলি – নাগরিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, এবং সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলি – মতানৈক্যের প্রতিফলন করে যা মানবজাতির রূপান্তরের অশান্ত বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। একটি সম্পূর্ণ কাঠামোর পরস্পর নির্ভর অঙ্গরূপে কাজ করতে অনিচ্ছুক, তারা ক্ষমতার লড়াইয়ে আবদ্ধ যা পরিণামে নিষ্ফল প্রমাণিত হয়। সেই সমাজটি কত ভিন্নতর যা আব্দুল-বাহা, অগণিত ফলকলিপি ও বক্তৃতাগুলিতে, বর্ণনা করেছেন – যেখানে প্রাত্যহিক মিথস্ক্রিয়াগুলি, একইভাবে মতামতগুলির সম্পর্ক, মানবজাতির একতার সচেতনতা দ্বারা গঠিত। এই সচেতনতার দ্বারা অনুপ্রাণিত সম্পর্কগুলি বাহা’ইগণ এবং তাদের বন্ধুদের দ্বারা বিশ্বব্যাপী পরিমার্জিত হচ্ছে; তাদের মধ্য থেকে পারস্পরিক মত বিনিময় এবং সহযোগিতার, মতৈক্য ও ভালোবাসার বিশুদ্ধ সুবাস খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এইরূপ বিনয়ী পারিপার্শি¦কতাগুলিতে, সমাজের পরিচিত বিবাদের প্রতি একটি দৃশ্যমান বিকল্প আত্মপ্রকাশ করছে। সুতরাং ইহা স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয় যে একজন ব্যক্তি যিনি সাধারণের মঙ্গলের প্রতি নিবেদিত পরামর্শে দায়িত্বশীলভাবে আত্ম-অভিব্যক্তি ও চিন্তাশীলভাবে অংশগ্রহণের অনুশীলন করতে ইচ্ছা করেন এবং নিজস্ব মতের উপর পীড়াপীড়ি করার প্রলোভন অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করেন; একটি বাহা’ই প্রতিষ্ঠান, যা ফলপ্রসূ সমাপ্তিগুলির দিকে প্রবাহিত হতে সমন্বিত হওয়ার প্রয়োজন সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করে, নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে নয় বরং প্রতিপালন ও উৎসাহিত করার জন্য; একটি সমাজ যাকে নিজ উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলি কর্তৃক উদ্ভাবিত পরিকল্পনাগুলিতে সর্বান্তঃকরণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রদত্ত একতায় এক অমূল্য সম্পদ চিনতে পারে। বাহা’উল্লাহ্র প্রত্যাদেশের প্রভাবে, এই তিনের মধ্যে সম্পর্কগুলি নতুন আন্তরিকতার অধিকারী হচ্ছে, নতুন জীবন; সমষ্টিগতভাবে, উহারা একটি মাতৃগর্ভ গঠন করে যার মধ্যে একটি বিশ্ব আধ্যাত্মিক সভ্যতা, ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণার চিহ্ন বহন করে, ক্রমে ক্রমে পূর্ণতা প্রাপ্ত হচ্ছে।
প্রত্যাদেশের আলো প্রচেষ্টার প্রতিটি ক্ষেত্র আলোকিত করার জন্য পূর্বনির্ধারিত; প্রত্যেকের মধ্যে, সম্পর্কগুলি যা সমাজকে শক্তি জোগায় সেগুলি নতুন করে ছাঁচে ফেলতে হবে; মানুষের পরস্পরের প্রতি কেমন হওয়া উচিত, প্রত্যেকের মধ্যে বিশ্ব সেই উদাহরণগুলি খোঁজ করে। মানবজাতির অর্থনৈতিক জীবন আমরা আপনাদের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করছি, ইহার উত্তেজনা সৃষ্টিকারী চিত্তাকর্ষক অংশের প্রদর্শনী, সম্প্রতি যাতে এত অধিক সংখ্যক লোক জড়িয়ে পড়েছে, যেখানে অন্যায়কে উদাসীনতার সাথে সহ্য করা হয় এবং অনুপাতহীন অর্জনকে সাফল্যের প্রতীকরূপে গণ্য করা হয়। এইরূপ ক্ষতিকর মনোভাবগুলি এত গভীরভাবে বিদ্যমান যে ইহা অনুমান করা কঠিন কেমন করে কোন ব্যক্তি একা এই প্রচলিত মানদ-গুলি পরিবর্তন করতে পারে যা দ্বারা এই কর্মক্ষেত্রের সম্পর্কগুলি পরিচালিত। তথাপি, নিশ্চিতভাবে এইরূপ আচরণগুলি রয়েছে যা একজন বাহা’ই বর্জন করবে, যেমন কারো লেনদেনে অসাধুতা বা অন্যের অর্থে নিজ স্বার্থসাধন। একজন বাহা’ই হিসেবে ঐশ্বরিক উপদেশাবলীর প্রতি বিশ্বস্ত সংলগ্নতা কারো অর্থনৈতিক আচরণ এবং কারো বিশ্বাসগুলির মধ্যে কোন অসঙ্গতি না থাকার দাবি করে। ধর্মের ঐ সকল নীতি যেগুলি পক্ষপাতহীন ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে সম্পৃক্ত সেগুলি কারো জীবনে প্রয়োগের দ্বারা একটি মাত্র আত্মা একটি মানদ-কে অনুচ্চ দ্বারপ্রান্ত থেকে বহু উর্দ্ধে তুলে ধরতে পারে যার দ্বারা বিশ্ব নিজেকে পরিমাপ করে। জীবনের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ পাওয়ার জন্য মানবজাতি পরিশ্রান্ত, যার প্রতি উচ্চাকাঙ্খা-তাড়িত হওয়া যেতে পারে; আমরা সেই সমাজগুলি প্রতিপালন করার জন্য আপনাদের প্রতি তাকিয়ে আছি যার চাল-চলন বিশ্বকে আশা দেবে।
আমাদের রিজওয়ান বার্তা ২০০১-এ আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে দেশগুলি, যেখানে দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়া পর্যাপ্তভাবে অত্যন্ত অগ্রসরমান এবং জাতীয় সমাজগুলির অবস্থা সুবিধাজনক, আমরা জাতীয় পর্যায়ে উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রদান করব, যার আবির্ভাব ধর্মের সাংগঠনিক যুগের পঞ্চম বৈশিষ্ট্যসূচক সময়ের একটি লক্ষ্যণীয় বিষয়ে পরিণত হবে। অত্যধিক আনন্দ সহকারে এখন আমরা ঘোষণা করছি যে, দুইটি দেশে জাতীয় মাশরিকূল আযকার গড়ে তুলতে হবে; গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো এবং পাপুয়া নিউ গিণি। এইগুলিতে, আমরা যে মানদ-গুলি স্থির করেছিলাম সেগুলি প্রতিপাদনীয়রূপে পূরণ হয়েছে, এবং বর্তমান পরিকল্পনাগুলির ক্রম দ্বারা সৃষ্ট সম্ভাবনাগুলির প্রতি তাদের জনগণের সাড়া কোন দিক দিয়ে কম লক্ষ্যণীয় নয়। সান্তিয়াগোতে নির্মিয়মান মহাদেশীয় উপাসনালয়গুলির শেষটির নির্মাণের মাধ্যমে জাতীয় উপাসনালয়গুলি নির্মাণের প্রকল্পগুলির উদ্যোগ সমাজের মাটিতে ঈশ্বরের ধর্ম প্রবেশের আর একটি সন্তোষজনক সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রদান করে।
আরও একটি পদক্ষেপ সম্ভব। মাশরিকুল আযকার, আব্দুল-বাহা কর্তৃক “বিশ্বের সর্বাধিক অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানগুলির একটি রূপে বর্ণিত হয়েছে, যা বাহা’ই জীবনের দুইটি অত্যাবশ্যক, অবিচ্ছেদ্য দিক: উপাসনা এবং সেবাদানকে একত্রিত করে । এই দুইটির একীকরণ সঙ্গতিপূর্ণতাও প্রতিফলিত হচ্ছে যা পরিকল্পনার সমাজ-গঠন বৈশিষ্ট্যগুলিতেও বিদ্যমান থাকে, বিশেষভাবে একটি ভক্তিমূলক চেতনার অঙ্কুরিত হওয়া যা প্রার্থনার জন্য সমাবেশগুলিতে অভিব্যক্তি খুঁজে পায় এবং একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া যা মানবজাতির সেবা করার জন্য সামর্থ্য গড়ে তোলে। উপাসনা এবং সেবার এই পারস্পরিক সম্পর্কে বিশ্বের ঐ সকল ক্লাস্টারে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে যেখানে বাহা’ই সমাজগুলি আকার ও প্রাণশক্তিতে গুরুত্বপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং সামাজিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হওয়া স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান। এইগুলির কয়েকটিকে শেখার স্থানরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে যেন সহযোগী অঞ্চলগুলিতে জুনিয়র ইয়োথ কার্যক্রমের উন্নয়নে বন্ধুদের সামর্থ্য পরিপুষ্ট করা যায়। এই কার্যক্রম টেকসই করার সামর্থ্য, সম্প্রতি আমরা যেরূপ উল্লেখ করেছি, অধ্যয়ন চক্রগুলি এবং শিশুদের ক্লাসগুলির উন্নয়নেও ইন্ধন সরবরাহ করে। এভাবে, ইহার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছাড়িয়ে, শেখার স্থানগুলি প্রসারণ ও দৃঢ়করণের সমগ্র পরিকল্পকে সুরক্ষিত করে। আগামী বছরগুলিতে, এই ক্লাস্টারগুলির মধ্যে একটি স্থানীয় মাশরিকুল আযকারের আবির্ভাব প্রত্যাশা করা যেতে পারে। প্রাচীন সৌন্দর্যের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমাদের হৃদয়গুলি উচ্ছলিতপ্রায়, আমরা আনন্দের সাথে আপনাদিগকে অবগত করছি যে, নিম্নলিখিত ক্লাস্টারগুলির প্রত্যেকটিতে প্রথম স্থানীয় উপাসনালয় নির্মাণের বিষয়ে উহাদের নিজ নিজ জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের সাথে পরামর্শ শুরু করতে যাচ্ছি: বাট্টামবাং, কম্বোডিয়া; বিহার শরীফ, ভারত; মাটুন্ডা সয়, কেনিয়া; নর্টে ডেল ককা, কলম্বিয়া; এবং তান্না, ভানুয়াতু।
দুইটি জাতীয় এবং পাঁচটি স্থানীয় মাশরিকুল-আযকারের নির্মাণে সাহায্য করার জন্য, আমরা বাহা’ই বিশ্ব কেন্দ্রে এইরূপ সকল প্রকল্পের উপকারার্থে একটি উপাসনালয় অর্থভা-ার প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি । সকল স্থানের বন্ধুগণ, তাদের সাধ্যমত ত্যাগের সাথে ইহাতে দান করার জন্য আমন্ত্রিত।
প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ: একশত বছর পূর্বে আব্দুল-বাহা’র হাত দিয়ে যে মাটি খোঁড়া হয়েছিল তা পুনরায় আরও সাতটি দেশে খুঁড়তে হবে, ইহা অবশ্য সেই দিবসের প্রতি উপক্রমণিকাস্বরূপ হতে যাচ্ছে যখন প্রতিটি শহর ও গ্রামের অভ্যন্তরে, বাহা’উল্লাহ্র আদেশের প্রতি আজ্ঞানুবর্তিতায়, পরম প্রভূর উপাসনার জন্য একটি করে অট্টালিকা নির্মিত হবে। ঈশ্বরের স্মরণের এই সকল প্রভাত-স্থল হতে তাঁর আলোর রশ্মিগুলি প্রতিফলিত হবে এবং তাঁর প্রশংসার সঙ্গীতগুলি ধ্বনিত হবে।