রিজওয়ান বার্তা-২০০০

রিজওয়ান বার্তা-২০০০

সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়

বাহা’ই বিশ্ব কেন্দ্র

রিজওয়ান— ২০০০

 

বিশ্বের বাহা’ইগণের প্রতি,

পরম প্রিয় বন্ধুগণ,

সর্ববদান্যতার প্রভুর, প্রতি আমাদের মস্তকসমূহ অবনত করছি। চারসাল পরিকল্পনার শুরু হতে প্রভার এই উৎসব পর্যন্ত যে আশ্চর্যজনক পার্থক্য প্রত্যক্ষ করেছি তাতে আমাদের হৃদয়সমূহ কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে অগ্রগতির অর্জনসমূহ এতই লক্ষণীয় ছিল যে, আমাদের বিশ্ব সম্প্রদায় এমন উচ্চতায় আরোহণ করেছে  যেখান থেকে নতুন উজ্জ্বল দিগন্তে উহার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাসমূহ সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে।

সংখ্যাগত পার্থক্য প্রধানত একটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য থেকে উদ্ভুত হয়েছে। বাহা’ই সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি একটি পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। প্রসারিত সার্মথ্য, কার্য সম্পাদনে পদ্ধতিগত আদর্শ এবং পরিকল্পনার তিন অত্যাবশ্যক অংশীদার ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সমাজের প্রাপ্ত বিশ্বাসের গভীরতায় এই পরিবর্তন লক্ষণীয়। এর কারণ এই যে, বন্ধুগণ তাদের জ্ঞান স্বর্গীয় শিক্ষায় সমৃদ্ধ করতে সুস্পষ্টভাবে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং অনেক শিখেছেন …. এবং তা পূর্বের চেয়ে অধিক পদ্ধিতিগতভাবে ধর্মের প্রসারে তা কেমন করে প্রয়োগ করতে হবে, তাদের ব্যক্তি ও সমষ্টিগত কর্মকাণ্ডকে কিভাবে পরিচালনা করতে হবে এবং তাদের প্রতিবেশীদের সাথে কেমন করে কাজ করতে হবে। এক কথায়, তারা একটি শেখার রীতিতে প্রবেশ করেছেন। যা থেকে উদ্দেশ্যপূর্ণ কাজের পশ্চাৎধাবন করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের জন্য প্রধানচালিকা শক্তি ছিল বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড দ্রুততার সাথে স্থাপিত প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউটটের পদ্ধতির সাফল্য যা প্রসার ও দৃঢ়করণেল ক্ষেত্রে চারসালা পরিকল্পনার একক বৃহত্তম লব্ধ সম্পত্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

ধর্মের শিক্ষাদানে ব্যক্তির বর্ধিত সামর্থে্য, যা ব্যক্তি উদ্যোগের প্রবলতায়, বন্ধুগণের প্রচেষ্টাসমূহকে পথ প্রদর্শনে, আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ, কাউন্সিল এবং কমিটিসমূহের বর্ধিত সামর্থে্য স্থানীয় সমাজের সম্মিলিত আচরণকে প্রভাবিত করতে, চিন্তা ও কর্মের নতুন আদর্শসমূহের সহিত পরিচয় দেখা গেছে। এমন সকল ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের পদ্ধতি একটি অপরিহার্য চালিকা শক্তি প্রদর্শন করেছে। স্থানীয় অনেক ইন্সটিটিউট অধ্যয়ন চক্রের মাধ্যমে তাদের কার্যবৃদ্ধির দ্বারা বিস্তৃত অঞ্চলসমূহকে কর্মসূচীর আওতায় এনে তাদের সামর্থ্যকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, মঙ্গোলিয়া ১০৬টি অধ্যয়ন চক্র স্থাপন করে, এর ফলে নতুন বিশ্বাসীদের সংখ্যায় গুরুত্বপূর্ণ বৃদ্ধি সংযোজিত হয়েছে। এ ধরনের উন্নয়নের সাথে একাত্বতা স্বরূপ, বিশ্বব্যাপী সম্প্রদায়ের সদস্যগণ প্রার্থনার শক্তি আরোহণে, পবিত্র লেখনীসমূহের ধ্যানে এবং আধ্যাত্মিক সমাবেশসমূহে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক মঙ্গলসমূহ অর্জনে আরো অধিক মনোযোগী হয়েছেন। এই সকল ব্যক্তিগত ও সম্মিলিতভাবে পরিবর্তনের বেগবান বিষয়সমূহের দ্বারা সম্প্রদায়ের আকারবৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছে। যদিও নতুন বিশ্বাসীদের সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় এপর্যন্ত সামান্য বুদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে। যদিও নতুন বিশ্বাসীদের সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় এপর্যন্ত সামান্য বুদ্ধি পেয়েছে, ইহা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর যে, এই প্রসার এখন ভৌগলিকভাবে বিস্তৃত, যা সম্প্রদায়ের আরো বৃহত্তর অংশগুলোকে সম্পৃক্ত করেছে এবং নতুন বিশ্বাসীগণকে ধর্মের জীবনের সাথে সাফল্যজনকভাবে বিজড়িত করছে। ধর্মের এই প্রতিশ্রম্নতিশীল, এই অভাবনীয় অবস্থা ধারণাতীতভাবে উহার পরামর্শ দানকারীগণের প্রভাব, উপদেষ্টাগণের প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতামূলক ভূমিকা এবং বাস্তব কার্যাধির কাছে বিপুলভাবে ঋণী। যা ইন্সটিটিউটসমূহের গঠন ও কার্যকারীতাকে উর্ধ্বে তুলে ধরেছে—যা জাগ্রত ও চির সতর্ক আন্তর্জাতিক শিক্ষাদান কেন্দ্র কতৃর্ক পদত্ত একটি সময়োচিত উদ্দীপনার সম্প্রসারণকে মনে করিয়ে দেয়। চারসালা পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় প্রতিপাদ্য দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা ও কর্মের সংযোগ সাধনে একটি উচ্চমাত্রা উপস্থাপন করেছে। ইহা বাহা’ই সম্প্রদায়ের বিবর্তনের একটি বিশাল পর্যায়ের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, যা অবশ্যই গঠনতান্ত্রিক যুগে অর্জন করতে হবে, কেননা যতক্ষণ না দলে দলে অন্তভূর্ক্তিতে স্থিতিশীল করা যাচ্ছে, দলে দলে ধর্ম গ্রহণের শর্তাবলী পরিপক্কতা লাভ করবে না, যে পরিবর্তনের প্রতিশ্রম্নতি শৌগী এফেন্দী তাঁর লেখনীসমূহে করেছেন। পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় বিষয়ে মনোনিবেশ বাহা’ই কর্মকাণ্ডের সকল স্তরকে বিজড়িত করেছে ইহা বোধগম্যতার স্বচ্ছতার একটি ডাক দিয়েছে যা একক ও সম্মিলিত কাজের পূর্ব শর্তরূপে পদ্ধতিগত ও  সুষ্ঠু পরিকল্পনাকে সম্ভব করেছে। উন্নয়ন ও বিকাশের প্রক্রিয়াকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পদ্ধতিগতকরণ যে কতটা সহায়ক তা নিধার্রণে সমাজের সদস্যগণ ক্রমে ক্রমে এগিয়ে এসেছেন। চেতনার এই জাগরণ একটি বিরাট ধাপ ছিল, যা শিক্ষাদানে কর্মসূচীসমূহের ক্রমোন্নতি এবং সংস্কৃতিতে একটি নতুন পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছে।

প্রতিপাদ্যের যোগ সূত্রতার বিষয়গুলো পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রশাসনিক সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রচেষ্টাসমূহে দৃশ্যমান হয়েছে। যে সূতা এই সকলকে গ্রথিত করেছে তা পরিকল্পনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চিহ্নিত করা যেতে পারে। উহার শুরু ছিল পবিত্র ভূমিতে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত মহাদেশীয় উপদেষ্টা বোর্ডের সম্মেলন। যেখানে উপদেষ্টাগণ পরিকল্পনার বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হয়েছিলেন। এর পরেই ছিল জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদেসমূহের সাথে জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ সভাসমূহে তাদের পরামর্শগুলো যা পর্যায়ক্রমে আঞ্চলিক পর্যায়ে চালিত হয় যখন সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যগণ, স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ এবং কমিটিগুলোকে সম্পৃক্ত করে। এভাবে সকল পর্যায়ে বাহা’ই প্রশাসনের বিষয়গুলো পরিকল্পনার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয় এবং বাস্তবায়নের ঐ সকল পর্যায় অতিক্রম করে যাতে দলে দলে অন্তভূক্তির সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে প্রশাসনিক দক্ষতা সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে দুইটি বিরাট পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে; একটি ছিল প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপন, অপরটি ছিল আঞ্চলিক বাহা’ই কাউন্সিলসমূহের আনুষ্ঠানিক স্থাপন, জাতীয় ও স্থানীয় স্তরসমূহের মধ্যে প্রশাসনিক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে। কোন কোন সমাজ যেখানে জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ ক্রমবর্ধমানভাবে প্রশাসনিক জটিলতার সম্মুখিন হয়েছে, সেই সকল স্থানেউহাদের প্রয়োজন দেখা দেয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে প্রয়োগ কৌশল সম্পৃক্ত করা সমানভাবে প্রাসংগিক ছিল। যা দৃঢ়করণে উল্লেখযোগ্য অংশ এরং বহিঃসম্পর্ক প্রচ্ছন্নতা থেকে বেরিয়ে এসে ধর্মকে প্রয়োজনীয় সুফল লাভে সমর্থ করার একটি অপরিহার্য মাধ্যম। উহাদের সম্মিলিত ক্ষমতা প্রশংসনীয় সুফল এনেছে। যার হিসাব এই পৃষ্ঠাগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। তবুও আমরা পরিকল্পনার কার্যক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক সাফল্য উল্লেখ না করে পারছি না।

পবিত্রভূমিতে সমতল ভূমিসমূহ এবং আর্কের ভবনসমূহের নির্মাণ কাজ পূর্ব ঘোষিত সময়  অনুযায়ী ইংরেজী বর্ষের শেষ অবধি সমাপ্ত করার সকল নিশ্চয়তা নিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এছাড়াও আমরা আমাদের গত রিজওয়ান বার্তায় তীর্থযাত্রীদের দলের বর্ধিত সংখ্যার কথা উল্লেখ করে হাইফায় অবস্থিত যে ভবনটির সমন্ধে বলেছিলাম, তা এই রিজওয়ানে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রয়েচে। একই প্রসঙ্গে বাহ্জিতে তীর্থ ভ্রমণকারী এবং অন্যান্য বাহা’ই ও অবাহা’ই পরিদর্শকদের স্থান সংকুলানের জন্য অতি প্রয়োজনীয় যে সুবিধাদি নির্মাণ করতে হবে তার স্থাপত্য নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। বাহা’উল্লাহ্র লেখনীসমূহের কাক্সিক্ষত নতুন গ্রন্থের জন্য মূল লেখনীসমূহের অনুবাদ সম্পন্ন হয়েছে এবং উহা প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে উল্লেখিত পথ ছাড়াও নানাভাবে প্রসার ও দৃঢ়করণে দীর্ঘ পদক্ষেপসমূহ পরিলক্ষিত হয়েছে; পথিকৃতে, ঘোষণায়, সাহিত্য প্রকাশনায়, শিল্পকলার ব্যবহারে, স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ গঠন এবং বাহা’ই অধ্যয়নসমূহের সংঘসমূহের অগ্রযাত্রায়। প্রায় তিন হাজার তিনশত জন বিশ্বাসী দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী আন্তর্জাতিক পথিকৃত হয়েছেন। অনেক দেশে যারা সাধারণতঃ গ্রহিতা ছিলেন, তারা বিদেশে পথিকৃত পাঠিয়েছেন। যা জাতীয় সম্প্রদায়সমূহের পরিপক্কতার ঈঙ্গিত দেয়। সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত আদেশের প্রতি আন্তরিকতার সাথে সাড়া দিয়ে কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমাজগুলো পথিকৃতের সংখ্য বহুগুণ বৃদ্ধি করেছেন। যারা তাদের সমূদ্রের তীরসমূহ ত্যাগ করেছেন এবং আরও অধিক সংখ্যায় ভ্রাম্যামাণ শিক্ষক হয়েছেন।

এদের মধ্যে তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। আরও বিশেষভাবে উল্লেখ ছিল আফ্রিকায় বাহা’ই শিক্ষক প্রেরণের আহ্বানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকার বংশদ্ভুত বিশ্বাসীগণের উৎসাহপূর্ণ সাড়া দান।

ধর্মের ঘোষণা কার্যে একটি বৈচিত্র্যের সমাবেশ ছিল, তন্নধ্যে বহুবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল—বার্ষিকী উদ্যাপন, স্বরণ সভা, আলোচনা সভা, প্রদর্শনী এবং তদ্রুপ অনুষ্ঠানাদি যা দ্বারা বিপুল সংখ্যক লোকদের ধর্মের শিক্ষাসমূহের সাথে পরিচিত করা সম্ভব হয়েছে। উপাসনালয়সমূহে পরিদর্শকগণের জন্য চুম্বুকীয় কেন্দ্র স্বরূপ ছিল, যারা বর্ধিত সংখ্যায় উহাদের দ্বারসমূহে প্রবেশ করেছে, বিশেষ করে ভারতে যেখানে গত এক বছরে প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ লোক অভ্যর্থনা পেয়েছেন।এই ধরনের কার্যাদি বিভিন্ন গণমাধ্যমের ব্যবহারের দ্বারা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ষাট হাজার অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তি জাতীয় শিক্ষা সমিতি আয়োজিত গণমাধ্যমের প্রতি সাড়া দিয়েছেন। গণমাধ্যমসমূহ পূর্বের চেয়ে অধিকহারে অপ্রার্থিত সহানুভূতিশীল প্রবন্ধগুলোর প্রকাশের মাধ্যমে ধর্মের জ্ঞান বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। পরিচিতি প্রস্তুত করার এমনই একটি দিক ছিল কঙ্গো গণতান্ত্রীক প্রজাতন্ত্র এবং লাইবেরিয়ার মতো দেশসমূহে বেতার ও টেলিভিশনসমূহের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাহা’ই অনুষ্ঠানাদি প্রচারে আগ্রহ প্রকাশ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসমূহের নিরপেক্ষ পছন্দ ২০০০ সালের আগমন উপলক্ষ্যে পবিত্র ভূমির অংশ বিশেষ সম্প্রচারকালে মহান বা’ব এর সমাধি এবং সমতল ভূমিসমূহের ব্যবহার এমন ঘটনাসমূহকে মর্যাদাপূর্ণ করেছে।

বিশ্বব্যাপী সম্প্রদায়ের ধর্মের ঘোষণা, শিক্ষাদান জ্ঞানগভীরকরণ এবং আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডে শিল্পকলার ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শিল্পকলা তরুণদের আকর্ষণ করেছে। যারা এগুলো তাদের শিক্ষাদান ও জ্ঞান গভীরকরণ কার্যসমূহে ব্যবহার করেছে, প্রধানত যা বিশ্বের অনেকাংশে বহু সংখ্যক অভিনয় ও নৃত্য কর্মশালার মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু শিল্পকলার গতিশীলতা সঙ্গীত ও নৃত্যের দ্বারা কল্পিত কার্যাবলী থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে যা লোকদেরকে ধর্মের সাথে সংযুক্ত করেছে। উদাহরণ, বিশেষভাবে আফ্রিকায় যেখানে লেকাশিল্পকে ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে শিক্ষাদান কার্য অনেকাংশে বর্ধিত হয়েছে। উদাহরণসম্বরূপ, ঘানা এবং লাইব্রেরিয়া, প্রত্যেকে শিক্ষাদান কাজে শিল্পকলার উন্নয়নে একটি করে ‘লাইট অব ইউনিটি’ প্রকল্প স্থাপন করে। ভারতে সাম্প্রদায়িকসম্প্রীতি দলটির একই উদ্দেশ্য ছিল।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপদেষ্টাগণের আহ্বানে এবং মহাদেশীয় অর্থভাণ্ডারের সহযোগীতায় বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকায় বাহা’ই পুস্তকাবলীর অনুবাদ ও প্রকাশনায় গতি সঞ্চার হয়েছে। এছাড়াও কিতাবই আক্বদাস সম্পূর্ণ আরবী এবং অন্যান্য ভাষায় বের হয়েছে।

আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের গঠন রিজওয়ানের প্রথম দিবসে নির্ধারিত হয়েছে, যা ১৯৯৭ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে। যদিও ঐ প্রতিষ্ঠানসমূহ পূর্ব অনুমিত সংখ্যা হ্রাস পেলেও ইহার নিম্ন গতিতে তীব্রতা ছিল না। সংখ্যা একটি পর্যায়ে দৃঢ়তা পেয়েছে এবং দৃঢ়করণের একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া সেখানে স্থান করে নিয়েছে। সার্বজনীন বিচারালয়ের আটটি নতুন স্তম্ভ উত্থিত হয়েছে, যার দ্বারা জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের সংখ্যা ১৮১ তে উন্নীত হয়েছে। এই চার বছরে আলোচনামূলক সভার বৃদ্ধি বিশেষভাবে সন্তোষজনক ছিল, পাণ্ডিত্যপূর্ণ বাহা’ই কর্মকাণ্ড যা ধর্মের কাজে বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তিসমূহকে দৃঢ়তর করার অত্যাবশ্যক কাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বাহা’ই সাহিত্যের হৃদয়স্পশী সমৃদ্ধি লাভ এবং বাহা’ই নীতিসমূহের আলোকে সমকালীন বিভিন্ন সমস্যাগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্য একটি গবেষণামণ্ডলীর উপস্থাপনা ছিল দুইটি অমূল্য অর্জন। বাহা’ই অধ্যয়ন সংঘসমূহের নেটওয়ার্ক এ বছর ইহার পঁচিশতম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্্যাপন করে এই পরিকল্পনায় পাঁচটি নতুন প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতিগত বৈচিত্র্য এবং সৃজনশীলতার প্রতি মনোযোগ সহকারে সেবার ক্ষেত্রে যা দুষ্টি আকর্ষণ করেছে তা হল পাপুয়া নিউগিনিতে বাহা’ই গ্রন্থাবলী অধ্যয়নে প্রথম সম্মেলন এবং জাপানী সংঘসমূহ কতৃর্ক প্রচলিত জাপানী পাণ্ডিত্যের আধ্যাত্মিক উৎপত্তি অনুসন্ধানের প্রতি আলোকপাত।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রকল্পসমূহের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সন্তোষজনক হওয়া সত্বেও গুণগত দিক দিয়ে সেগুলো সিদ্ধান্তের প্রতি সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। বার্ষিক প্রতিবেদনে উহাদের সংখ্যা পরিকল্পনার শুরুতে ছিল ১৩৫০ যা উহার শেষে বৃদ্ধি পেয়ে ১৮০০ এর অধিক হয়েছে। এই সময়ে অধিকতর পদ্ধতিগত হওয়ার আন্দোলন কাজের ধারাসমূহকে প্রভাবিত করেছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নীতিসমূহের পরামর্শ ও কাজে উৎসাহদানে বাহা’ই বিশ্বকেন্দ্রে অবস্থিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যালয় ১৩টি আঞ্চলিক শিক্ষা সম্মেলনের আয়োজন করে। যেগুলোতে প্রায় ৬০টি দেশ থেকে আগত ৭০০ জন অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া এ কার্যালয় পথ নির্দেশনা প্রকল্পসমূহ এবং উহাতে প্রয়োজনীয় সামগ্রীসমূহের ব্যবস্থা করে যা যুবদের ক্ষমতায়ন এবং স্বাক্ষরতা, সমাজ স্বাস্থ্য কর্মী প্রশিক্ষণ, মহিলাদের এগিয়ে নেয়া এবং নৈতিক শিক্ষার জন্য সংগঠিত আন্দোলনসমূহের সহায়ক হয়েছে। একটি উদাহরণ ছিল, গিনির অনুষ্ঠান যা ১৫০০ এর অধিক স্বাক্ষরতা সাহায্যকারীকে প্রশিক্ষণ দেয়, অপরটি হচ্ছে মালয়েশিয়ায় নারীদের অগ্রযাত্রার জন্য একটি পাঠ্যবিষয় সম্পন্ন হওয়া যা এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকায় অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ভিত্তি রচনা করে। পানামার গুয়াইমী অঞ্চলের বাহা’ই বেতার কেন্দ্রসমূহকে ইন্সটিটিউট প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা একটি উদ্যোগ নেয়া হয়।

যেহেতু সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দানে ইন্সিটিটিউটসমূহের সামর্থ্য রয়েছে, এ লক্ষ্যে একটি আন্দলোনে বারটি ইন্সটিটিউট সম্পৃক্ত হয়, যা বর্তমানে সকল ক্ষেত্রের প্রচেষ্টাসমূহের পরিক্ষা নিরিক্ষা চালাচ্ছে। তন্নোধ্যে রয়েছে স্বাক্ষরতা, শিক্ষাদান, সমাজ স্বাস্থ্যকমীর্ প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ। বাহা’ই আয়োজিত এবং বাহা’ই অনুপ্রাণিত বেশ কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকল্পে আত্মনিয়োগ করেছে, তন্নধ্যে একটি ছিল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগীতাকে সম্পৃক্ত করে ক্যামেরুনে রিভার ব্লাইন্ডনেস রোগ প্রতিরোধপ্রকল্প। ৩০০০০এর অধিক ব্যক্তি এই বাহা’ই প্রকল্প থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা লাভ করে। ইথিওপিয়ার ব্যক্তি মালিকানাধীন বিশ্ববিদ্যালয় আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যার শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮০০০এ উন্নীত হয়েছে অপটি সুইজারল্যান্ডের ল্যান্ডেগ একাডেমী যাইহার প্রাতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠানমালা বিকাশ ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে বলকান দেশসমূহে যুদ্ধ থেকে উদ্ভুত আতঙ্কগ্রস্থ সামাজিক অবস্থা থেকে অব্যহতি পেতে চলমান প্রচেষ্টাসমূহে সহযোগীতার জন্য উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া আরও একটি হলো, বলিভিয়ার নূর বিশ্ববিদ্যালয়। যা ইকুয়েডরে একটি সহযোগীতা প্রকল্পের দ্বারা সৎ নেতৃত্ব কার্যক্রমের আওতায় ১০০০ এরও অধিক স্কুল শিক্ষককে প্রশিক্ষণ সুবিধা দিয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই ক্ষেত্রে সামর্থ্য গড়ে তোলার এই সকল প্রমাণাদি পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহকে বিপুলভাবে লাভবান করেছে।

একইভাবে ১৯৯৪ সালে জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের সাথে বহিঃসম্পর্ক বিষয়ে কৌশলগত পথ নির্দেশ দ্বারা পরিচালিত হয়ে কুটনৈতিক এবং গণতথ্য ক্ষেত্রে সমাজসমূহের সামর্থ্য আশ্চর্যজনকভাবে প্রসারিত হয়েছে যা বাহা’ই সমাজকে জাতিসংঘ, সরকারসমূহ বেসরকারী সংস্থাসমূহ (এন, জি, ও) এবং গণমাধ্যমের সাথে একটি গতিশীর সম্পর্কে পেঁৗছে দিয়েছে।

জাতীয় এবং আন্তজার্তিক পর্যায়ের কার্যাবলী দুইটি মূল বিষয়ে আলোকপাত করেঃ বিশ্বশান্তির জন্য প্রক্রিয়াসমূহকে প্রভাবিত করা এবং ধর্মের প্রতিরক্ষা। ইরানে আমাদের প্রিয়তম সমধর্ম বিশ্বাসীদের রক্ষায় যে সকল পদক্ষেপ নেওয়ার দ্বারা বাহা’ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক নতুন মাত্রার সম্মান ও সমর্থন অর্জন করেছে যা ভবিষ্যৎ পদক্ষেপসমূহের অন্যান্য লক্ষ্যে সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ইরানের অপ্রশমিত অবস্থার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমে আমাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বহিঃসম্পর্ক বিষয়ক অঙ্গ সংগঠনগুলো জাতীসংঘ ও সরকারসমূহের বর্তমানসুযোগগুলো ব্যবহারের জন্য নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইরানে নির্যাতনের ঘটনাসমুহ গ্রহের সর্বোচ্চ প্রশাসনসমূহের মনোযোগ লাভ করেছে। যদিও ইরানের একটি আদালত কর্তৃক বন্ধুদের দুইজনের মৃত্যু দণ্ডাদেশ পূর্ণঃ নিশ্চিত করা এবং তৃতীয় জনকে একই দণ্ডাদেশ দেওয়ার খবরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং তিনি স্পষ্টভাবে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের ফলে ইরানে বাহা’ইদের মৃত্যুদণ্ডসমূহ বস্তুতঃ বন্ধ হয়েছে এবং দীর্ঘ মেয়াদী কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

এই সকল হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানানোর সাথে সাথে ইরানে আমাদের ভ্রাতা ও ভগ্নিদের আত্মত্যাগের মহিমা, কষ্ট সহিষ্ণুতা, অজেয় ধর্ম বিশ্বাসের উচ্চ প্রশংসা করছি যা এই পদক্ষেপসমূহকে এত শক্তিশালী করেছে। তাদের প্রতি এত লাম্পট্যপূর্ণ এবং নির্দয় আক্রমণ সত্ত্বেও আত্মাসমূহের এই গুণাবলীগুলো তাদের স্বদেশীয়দের হতভম্ব করেছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে এত বিশাল সংখ্যার সামনে এত অল্প সংখ্যকের টিকে থাকার বর্ণনা আর কে কিভাবে দিতে পারে? যখন কোন এক জন মৃত্যুর হুমকীর সম্মুখীন হয় তখন এছাড়া আর কিভাবে সক্রিয় বিশ্ব বিবেবকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব? ইরানের জন্য দুঃখজনক অবস্থা এই যে, আক্রমণকারীগণ এখও এটা দেখতে ব্যর্থ হয়েছে যে, স্বগীর্য় নীতির কারণেএই নির্যাতিতিগণ সহায় সম্পত্তি এমনকি জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিচ্ছেন তারই মধ্যে এই অসন্তোষ পূর্ণ সময়ের একটি অতৃপ্ত জনতার প্রবল ইচ্ছাগুলো পূর্ণ করার সকল সমাধান বিদ্যমান। কিন্তু পরিকল্পিত অত্যাচারের মাত্রা যাই হো না কেন সন্দেহাতীতভাবে আমাদের ইরানী বন্ধুগণ যে নিষ্ঠুরতার শিকারে পরিণত হয়েছেন, সর্বশক্তিমানের নিয়ন্ত্রণের শক্তির রহস্যময় ঘটনার দ্বারা তাদের নিশ্চিত লক্ষ্যে সকল প্রতিশ্রম্নতি মহিমার কাছে আত্মসর্মপন করবে।

বহিঃসম্পর্ক বিষয়ক কার্যক্রমের অপরটি হচ্ছে চার প্রতিপাদ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কার্যবিধির প্রতি লক্ষ্য রাখা মানবাধিকার, মহিলাদের সামাজিক মযার্দা, বিশ্বজনীন সমৃদ্ধি এবং নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন। আমাদের নথিসমূহে মানবাধিকার এবং নারীর সামাজিক মর্যাদার উপর কর্মসমূহের অসংখ্য পদক্ষেপ দেখতে পাই। প্রথমটির দিকে তাকালে দেখতে পাই যে, জাতিসংঘ কার্যালয় মানবাধিকার শিক্ষাদানেএকটি সৃজনশীল অনুষ্ঠান চালিয়েছিল যা এ পর্যন্ত ৯৯টি স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের কুটনৈতিক কাজে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। নরীর সামাজিক মর্যাদার বিষয়ে নারীদের এগিয়ে নেয়ার জন্য বর্তমানের ৫২ টি জাতীয় কার্যালয়, সকল স্তরের কর্মশালা এবং সম্মেলনে অসংখ্য বাহা’ই মহিলা ও পুরুষদের অবদানসমূহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এন, জি, ও) সমিতিসমূহের পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বাহা’ই প্রতিনিধিদের নিয়োগ দান। তন্মেধ্যে একটি যা ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ফান্ড ফর উইমেন দেখিয়েছে সমানাধিকারের নীতিতে কত অধ্যাবসায়ের সাথে বাস্তবায়ন করছেন।

একই সময়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মধ্যে বাহা’ই ধর্ম সম্পর্কে তথ্যাদি ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগসমূহের একটি সমাহার দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে এমন সব উদ্ভাবনামূরক পদক্ষেপসমূহ রয়েছে যেমন, বাহা’ই ওয়ার্ল্ড সাইড এর প্রতিষ্ঠা, যা ইতিমধ্যে প্রতিমাসে ২৫০০০দর্শকের গড় দিচ্ছে; ভবিষ্যৎ কে লিখছেন? শীর্ষক লিখিত বিবৃতির প্রকাশ যা বন্ধুগণকে সর্বত্র সমকালীন সমস্যাগুলোর কথা বলতে সাহায্য করছে; গত নভেম্বর থেকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভের মাধ্যমে ‘পায়াম—ই—দুস্ত’ এর বেতার সম্প্রচার ফারসী ভাষায় ওয়াশিংটন ডি.সি. মেট্রোপলিটন এলাকার এক ঘন্টা সাপ্তাহিক বেতার অনুষ্ঠান, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সব সময় পাওয়া যাচ্ছে এবং খুবই উচ্চ মাত্রার টেলিভিশন অনুষ্ঠানের প্রচার যা দৈনন্দিন সমস্যাগুলোতে সৎ গুণাবলী উপস্থাপন করে যাচ্ছে, যা আলবেনিয়া, বসনিয়া, হারজেগোভিনা, বুলগেরিয়া, ক্রোয়োশিয়া, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, স্লোভাকিয়া, প্রাক্তন মেসেডোনিয়ার যুগস্লাভ রিপাবলিকের সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূয়সি প্রশংসা অর্জন করেছে।

শতাব্দি তার সমাপ্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে একটি অভাবনীয় বিষয় শক্তি সঞ্চার করেছে। যা ‘অর্গানাইজেশন অব সিভিল সোসাইটি’ নামে পরিচিত। যেখানে পৃথিবীর জনগণ তাদের আশা আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করার জন্য উত্থিত হয়েছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে সর্বত্র বসবাসকারীগণের জন্য ইহা অত্যন্ত সন্তোষজনক যে, বাহা’ই আন্তজার্তিক সম্প্রদায় মানবজাতির সর্বস্তরের জনগণের সমন্বয়ে গঠিত যা মানবজাতির ভবিষ্যৎ রচনার লক্ষ্যে বড় বড় আলোচনায় একতা সৃষ্টিকারী মাধ্যমরূপে  এমন বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে।

জাতিসংঘে আমাদের প্রধান প্রতিনিধিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কমিটির সহ—সভাপতির আসনে নিয়োগ করা হয় এমন একটি আসন; যা বাহা’ই আন্তর্জাতিক সমাজকে অর্গানাইজেশন অব মিলেনিয়াম  ফোরামে একটি নেতৃত্বশীল ভূমিকা দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান এই সমাবেশ অহ্বান করেছেন এবং তা মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য অর্গানাইজেশন অব সিভিল সোসাইটিকে বিশ্বব্যাপী সমাজসমূহের উপর মতামতগুলোর প্রস্তাবনাসমূহকে বিধিবদ্ধ করার একটি সুযোগ এন দেবে, যা অতঃপর এ বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সকল রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানদের মিলেলিয়াম সামিট এ উপস্থাপিত হবে।

বিশ্বের আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলোর প্রতি মানবজাতির জাগরণ বাহা’ইগণের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আন্তঃধর্মীয় আলোচনা প্রবলতর হয়েছে। চারসালা পরিকল্পনাকালে একটি স্বীকৃত অংশগ্রহণকারীরূপে ইহা ধর্মকে বর্ধিত হারে সম্পৃক্ত করেছে। গত ডিসেম্বরে কেপটাউনে দি পার্লামেন্ট অব ওয়ার্ল্ড রিলিজিওন প্রায় ছয় হাজার অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়। যাদের মধ্যে বাহা’ইগণের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধিত্ব ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আন্তজার্তিক বোর্ড অব ডাইরেকটরের সেবাদানকারী বাহা’ইগণ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টে প্রথমবারের মত পাশ্চত্যের একটি গণসমাজে বাহা’উল্লাহ্র নাম উল্লেখের ঘটনা তেকে এই উপলক্ষ্যের প্রতি বাহা’ইগণ আগ্রহান্বিত হন। গত নভেম্বরে জর্ডানে অনুষ্টিত দুইটি আন্তঃধর্মীয় আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীগণের মধ্যে বাহা’ইগণ ছিলেন। এই সম্মেলনের বিষয় ছিল মধ্যপ্রাচ্য ‘ধর্ম এবং সংঘাত’ এবং ধর্ম ও শান্তির উপর ওয়ার্ল্ড কনফারেন্সের বার্ষিক সভা। ভ্যাটিক্যানসিটি এবং দিল্লীতে রোমান ক্যাথলিক চার্চ আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহে বাহা’ই প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। শেষোক্ত অনুষ্ঠানে পোপ জন পল দ্বিতীয় এর উপস্থিতিতে সমাবেশে বক্তব্যদানকারী ধর্মসমূহের প্রতিনিধিগণের মধ্যে একজন ছিলেন উপদেষ্টা জিনা সোরাবজী। যুক্তরাজ্যে ধর্মকে জনসমক্ষে উপস্থাপন করা হয়েছে। যখন বাহা’ই প্রতিনিধিগণ নতুন সহ¯্রাব্দে আন্তঃধর্মীয় উদ্যাপনের জন্য আটটি অন্য ধর্মের সদস্যদের সঙ্গে ওয়েস্ট মিন্সটার প্রাসাদের রাজকীয় মিলনায়তনে মিলিত হন, যেখানে, রাজপরিবারের সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রী,. আর্ক বিশপ অব কান্টেরবারী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের নয়টি প্রধান বৃহৎ ধর্মের প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়। জার্মানীতে প্রথমবারের মতো একটি আন্তঃধর্মীয় আলোচনায় বাহা’ইগণকে সম্পৃক্ত করা হয়। এই ঘটনা খৃষ্টান ধর্ম সম্প্রদায়ের এই ধর্মের সাথে যোগাযোগ না রাখার দীর্ঘদিনের মনোভাবে আমূল পরিবর্তন এনেছে, একজন অঙ্গীকার ভঙ্গকারী লিখিত এবং লুথেরান পাবলিশিং হাউস কতৃর্ক ১৯৮১ সালে প্রকাশিত একটি বই যার জন্য দায়ী। তিনজন বাহা’ই কর্তৃক যুক্তি দ্বারা খণ্ডিত লেখা এবং একটি নেতৃস্থানীয়  অবাহা’ই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক ছয়শত পৃষ্ঠা বিশিষ্ট পুস্তক দ্বারা উহার সমাধান হয়েছে, যা জার্মান বাহা’ই সম্প্রদায়ের একটি দর্শনীয় বিজয় বলে গণ্য হয়েছে। ১৯৯৮ সালে ল্যামবেথ প্রাসাদে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ব্যাংক এবং নয়টি প্রধান ধর্মের প্রতিনিধিদের সভায় আন্তঃধর্মীয় আলোচনা একটি নতুন রূপ লাভ করে, যা বিশ্ব ধর্মসমূহের আলোচনা উন্নয়ন (ডড়ৎষফ ঋধরঃয উবাবষড়ঢ়সবহঃ উরধষড়মঁব) গঠনের দিকে নিয়ে যায়। আলোচনার এই ঘোষণার লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও ধর্মীয় সম্প্রদায়সমূহের মধ্যকার দূরত্বে সেতুবন্ধন রচনা করা যেন বিশ্বের দারিদ্র বিমোচনে আরও কার্যকরভাবে কাজ করা যেতে পারে। আন্তঃধর্মীয় সমাবেশের অনুষ্ঠান সংখ্যা এবং ব্যাপক গ্রহণশীলতা ধর্মসমূহের পরস্পর সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দৃশ্যের চিত্রায়ন করেছে। ইহা দৃশ্যমান যে, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়সমূহ তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক মনোভাব লাভ করতে  চেষ্টা করে যাচ্ছে, যা বাহা’উল্লাহ্ তাঁর অনুসারীগণকে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি প্রদর্শনের জন্য আহ্বান করেছেন।

এই চার বছরে বাহা’ই সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টগুলো এমন এক সময়ে সংঘঠিত হয়েছে যখন বাইরের সমাজ পরস্পর বিরোধী স্বার্থের ফেরাতে থেমে আছে। এই সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত গতিময় সময়ে যে শক্তিসমূহ বাহা’ই সম্প্রদায় এবং বিশ্বব্যাপী সক্রিয় রয়েছে তা প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে গেছে। উহাদের জাগরণে সমাজের চিত্র অতীতের সকল সময়ের চেয়ে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। শৌগী  এফেন্দী যার পরোক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

প্রায় ছয় দশকের অধিককাল পূর্বে তিনি এই বলে মনোযোগী হতে অহ্বান করেছিলেন যে, উত্থান ও পতন একত্রিতকরণ, বিচ্ছিন্নতা, শৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলার যুগপৎ প্রক্রিয়া অবিরাম এবং পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। এই যমজ প্রক্রিয়া বাহা’ই সম্প্রদায়ের ঘটনাবলী থেকে বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হয় নাই, কিন্তু সময় এমনভাবে এগিয়ে গেছে যে, উহিতে ইতিমধ্যে সক্রিয়ভাবে ধর্মের সম্পৃক্ততার আহ্বান এসেছে। সময়ের সরু পথে বিপরীতমুখী দৌড় বলে মনে হয়েছে। এক দিকে রয়েছে, প্রায় চল্লিশটি স্থানে ধর্ম, রাজনীতি বর্ণ অথবা গোত্রগত সংঘাত থেকে সৃষ্টযুদ্ধ; হঠাৎ করে আইন শৃংখলার অবনতি বেশ কিছু দেশকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দিয়েছে; রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে সন্ত্রাস মহামারী আকার ধারণ করেছে; আন্তর্জাতিক দুস্কৃতিকারীদের সংঘবদ্ধ চক্র সাড়া জাগিয়েছে। তা সত্ত্বেও অপরদিকে, সম্মিলিত নিরাপত্তার পদ্ধতিসমূহের উন্নয়ন ও প্রয়োগের জন্য আগ্রহপূর্ণ প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে;  যা শান্তি বজায় রাখতে বাহা’উল্লাহ্ প্রদক্ত ব্যবস্থাপত্রগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠার অহ্বান জানানো হয়েছে; বিশ্বের সমস্যাগুলো নিরসনে একটি যথার্থ পদ্ধতি অত্যাবশ্যক প্রয়োজনের উপর মনোযোগ নিবদ্ধ করতে বিশ্বনেতৃবর্গ মিলেনিয়াম সামিটে মিলিত হবেন; যোগাযোগের নতুন পদ্ধতি গ্রহের প্রত্যেকের জন্য যে কোন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ স্থাপনের পথ খুলে দিয়েছে। এশিয়ার অর্থনৈতিক বিছিন্নতা বিশ্ব অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার হুমকী দিয়েছে। কিন্তু উহার তড়িৎ প্রচেষ্টা একদিকে তাৎক্ষণিক অবস্থার নিরসন করেছে এবং অপরদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ ও বাণিজ্যে ন্যায়পরায়ণতার চেতনা নিয়ে আশার পথ খুঁজছে। এগুলো এই সময়ে দুইটি বিপরীত মুখী অথচ পরস্পরের উপর ক্রিয়াশীল শক্তিগুলোর কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। ঈশ্বরের বৃহত্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শৌগী এফন্দীকে প্রেরণাদানকারী নিয়োজিত শক্তিসমূহের নিশ্চয়তা দান করে “যার শেষ লক্ষ্য হচ্ছে মানবজাতির একতা এবং সকল মানবের শান্তি।”

এই চারটি ঘটনাবহুল বছরের শেষে আমরা খৃষ্টীয় সময় এবং বাহা’ই যুগের হিসাবে শেষ এবং শুরুর এক অসাধারণ বিন্দুতে এসে পেঁৗছেছি। এক দিকে এই বিন্দু বিংশ শতাব্দীকে গুটিয়ে ফেলেছে, অপর দিকে গঠনতান্ত্রিক যুগের এক নতুন পর্যায় উন্মোচন করছে। সময়ের এই দুইটি বেষ্টণীর যে দৃশ্য আমাদেরকে বিশ্ব গঠনকারী প্রবণতার প্রতি মনোযোগী হতে তৎপর করে তা কাল উপযোগী করেছে এবং তা করতে গিয়ে শৌগী এফেন্দী কর্তক এত সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত তার দূর দৃষ্টির আলোকে তাঁরই ধারণা মতো আর্কের কাজ করা হয়েছে। পরিকল্পনা চলাকালীন সময়ে কার্মেল পর্বতের উপর নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দূর দৃষ্টি একটি উজ্জ্বল স্বচ্ছতা লাভ করে। যখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশ্ব রাজনীতির কাঠামোকে নতুনভাবে সাজাতে বিরাট পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং যখন স্থানীয় ও জাতীয় বাহা’ই প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের বিবর্তনে নতুন স্তরে পেঁৗছেছে। আমরা আমাদের সাথে বিংশ শতাব্দীর একটি  পবিত্র ও স্থায়ী স্মৃতি বয়ে চলেছি যা আমাদের শক্তিসমূহকে নাড়া দেয় এমনকি আমাদের পথ নির্দেশ করে। ইহা মানবজাতির ইতিহাসে সেই প্রাথমিক মূহুর্ত যখন বাহা’উল্লাহ্র অঙ্গিকারের কেন্দ্র একটি অতুলনীয় দায়িত্ব পালনকালে একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার নকশা তৈরী করেছিলেন এবং এর পরেই সবচাইতে দুযোর্গপূর্ণ বছরগুলোতে যখন ধর্মের অভিভাবক একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থার কাঠামো গড়ে তুলতে তাঁর সমস্ত শক্তি বিলিয়ে দিয়েছেন, যা শতাব্দির শেষে উহার প্রয়োজনীয় কাঠামোগত পূর্ণতা বিশ্বের সামনে স্থাপিত করেছে।

এভাবে আমরা সময়ের মধ্যবতী সেতুতে উপস্থিত হয়েছি। বাহা’উল্লাহ্র মুষ্টিমেয় উল্লোসিত প্রেমিকের শতাব্দী ব্যাপী সংগ্রাম ও ত্যাগের  দ্বারা অর্জিত সামর্থ্যগুলোকে গঠনতান্ত্রিক যুগের অবশিষ্ট বছরগুলোর অপরিহার্য কার্যসমূহে অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। যার  অবিরাম শ্রমের অনেক ঘটনা আমাদেরকে সোনালী যুগে নিয়ে যাবে। যখন সর্বমহান শান্তি পৃথিবীকে আবেষ্টন করবে।

এই রিজওয়ানে আমরা একটি বার মাসের পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করছি। যদিও ইহা সংক্ষিপ্ত, পরবর্তী ২০ বছরে মাস্টার—এর স্বর্গীয় পরিকল্পনার ভিত্তি রচনা করতে এবং কিছু একান্ত প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদনে অবশ্যই পর্যাপ্ত হবে। যা এত সতর্কতার সাথে চার বছর পূর্বে আরম্ভ হয়েছিল জ্ঞান, গুণাবলী ও সেবাদক্ষতার পদ্ধতিগত অর্জন বর্ধিত করতে হবে। যেখানেই তাদের অবস্থান হোক না কেন জাতীয় ও আঞ্চলিক ইন্সটিটিউটসমূহকে তাদের কার্যক্রম এবং গৃহিত পদ্ধতিসমূহকে অবশ্যই উহার পূর্ণ কর্মদ্যোমে নিয়ে যেতে হবে। যে সকল স্থানে প্রয়োজন রয়েছে বলে জানা যাবে সেখানেই নতুন ইন্সটিটিউট স্থাপন করতে হবে। ব্যাক্তি প্রচেষ্টা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতায় গৃহীত শিক্ষাদান কাজকে পদ্ধতিগত করণে বৃহত্তর পদক্ষেপসমূহ নিতে হবে। ইহা আংশিকভাবে এই উদ্দেশ্যে যে, প্রত্যেক মহাদেশের উপদেষ্টাগণ এবং আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ কয়েকটি “এরিয়া গ্রোথ প্রোগ্রাম” স্থাপন করেছেন। ফলে ভবিষ্যৎ  পরিকল্পনাসমূহকে লাভবান করতে অভিজ্ঞতার একটি ভাণ্ডার পাওয়া যাবে। ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়কে এই সকল অতি প্রযোজনীয় কাজে তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে আহ্বান করা যাচ্ছে যেন ২০০১ সালে যে পাঁচ বছর মেয়াদী উদ্যোগ শুরু হতে যাচ্ছে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হওয়া যায়।একটি উদ্যোগ বাহা’ই বিশ্বকে দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাবে।কিন্তু এই দায়িত্বসমূহে মনোযোগ দেওয়া না হলে একটি কঠিন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে; আমাদের সন্তানদেরকে আধ্যাত্মিকতা সহকারে লালন পালন করতে হবে এবং ধর্মের জীবনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। তাদেরকে এমন একটি নৈতিক ভাবে বিপদগ্রস্থ বিশ্বে হারিয়ে যেতে দেয়া যায় না। সমাজের বর্তমান অবস্থায় শিশুরা একটি নিষ্ঠুর নিয়তির শিকার হচ্ছে। দেশে দেশে এদের লক্ষ লক্ষ সামাজিকভাবে স্থানচ্যুত শিশুরা তাদেরকে পিতামাতা অথবা বয়স্কদের থেকে বিছিন্ন দেখতে পায় তা তারা সম্পদ অথবা দারিদ্রে বসবাস করুক না কেন। এই বিচ্ছিন্নতার শেকড়সমূহ স্বার্থপরতায় রয়েছে যা বস্তু বাদ থেকে জন্ম নেয় এবং সর্বত্র মানবের হৃদয় হরণকারী ঈশ্বরহীনতার মূলে বিদ্যমান। আমাদের সময় শিশুদের সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা সমাজের অবক্ষয়ের স্বাক্ষ্য দেয়; যদিও এই অবস্থা কোন একটি বর্ণ, শ্রেণী, জাতি অথবা অর্থনৈতিক অবস্থায় সীমাবদ্ধ নয়। ইহা উহাদের সবাইকে ভেদ করেছে এটা উপলব্ধি করে আমাদের হৃদয় দুঃখ ভারাক্রন্ত হয় যে, বিশ্বের অনেকাংশে শিশুদেরকে সৈনিক হিসাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, শ্রমিক হিসাবে শোষণ করা হচ্ছে, বস্তুত দাস হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে, দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছে, লগ্ন ছবির লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হচ্ছে, পিতামাতার দ্বারা পরিত্যক্ত হয়ে তাদের নিজ ইচ্ছায়ও কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, আরো অনেক ধরণের অবস্থার শিকার হচ্ছে যা বলে শেষ করা যাবে না। এমন অনেক বিভৎসতা পিতা—মাতা কতৃর্ক তাদের নিজ সন্তানের উপর হয়ে থাকে। আধ্যাতিক ও মনোস্তাত্বিক ক্ষতিসমূহ হিসাব করে শেষ করা যাবে না। আমাদের বিশ্বব্যাপী সম্প্রদায় এই অবস্থাসমূহের গুরুত্বকে এড়িয়ে যেতে পারে না। এই অনুধাবন শিশুদের স্বার্থ এবং ভবিষ্যতের জন্য জরুরী এবং অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রতি যেন বেগবান করে।

যদিও শিশুদের কার্যক্রম পূর্ব পরিকল্পনার অংশ ছিল সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল। শিশু এবং কিশোরদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা আরও সামনে এগিয়ে নেয়া সম্প্রদায়ের জন্য অতান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য এ অসঙ্গতি দূর করা আবশ্যক। ইন্সটিটিউটসমূহের কার্যক্রমে শিশুদের শিক্ষাদানে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অবশ্যই অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। যারা তাদের স্থানীয় সমাজসমূহে সেবা দিতে পারবে। যদিও শিশুদের আধ্যাত্মিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদান একান্ত প্রয়োজন, তবুও তাদের চরিত্রের উন্নয়ন এবং ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা তার একটি অংশ বিশেষ মাত্র। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বলতে গেলে সমগ্র সমাজের উচিত হবে শিশুদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেয়া এবং তাদের কল্যাণে সাধারণভাবে আগ্রহী হতে হবে। এমন একটি মনোভাব যা অবক্ষয়শীল পরস্থিতি হতে দূরে সরিয়ে নিবে।

শিশুরা একটি সমাজের সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ, কেননা তাদের মধ্যেই ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা এবং প্রতিশ্রম্নতি বিদ্যমান। তাদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সমাজের চরিত্রগত বীজসমূহ বিদ্যমান যার বিকাশ সমাজের বয়স্কগণ তাদের শিশুদের সমন্ধে কি করতে পেরেছেন এবং কি পারেন নাই তার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল কোন সমাজ তাদের উপর এই ন্যাস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পেতে পারে না। শিশুদের প্রতি সর্ববেষ্টনকারী ভালবাসা, তাদের প্রতি আচরণের ধরণ, তাদের প্রতি যে বৈশিষ্ট প্রদর্শন করা হয়েছে, তাদের প্রতি বয়স্কদের আচরণে যে আন্তরিকতা রয়েছে—এদের সবকিছু প্রয়োজনীয় মনোভাবের বিষয়। ভালবাসা, শৃঙ্খলা এবং বাস্তব কঠিন জীবনের সাথে পরিচিত হওয়ার সাহস দাবী করে, তাদের খেয়ালীপনাকে প্রশ্রয় দেয়া অথবা তাদের ফন্দি ফিকিরের উপর সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয়া নয়। এমন একটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বজায় রাখতে হবে যেন শিশুরা অনুভব করে যে, তারা সমাজের এবং ইহার উদ্দেশ্যসমূহের উপর অংশীদার। তাদেরকে অবশ্যই প্রেমপূর্ণভাবে অথচ মান সম্পন্ন বাহা’ই জীবন যাপনে, অধ্যয়নে এবং ধর্মের শিক্ষাদানে তাদের অবস্থার প্রেক্ষিতে যথোপযুক্ত পথসমূহে চলতে আন্তরিকভাবে পরিচালিত করতে হবে। সমাজের ছোটদের মধ্যে যারা কিশোর বয়সী, যাদের বয়স বার থেকে পনেরোর মধ্যে, তারা একটি বিশেষ গোষ্ঠি, যাদের রয়েছে বিশেষ ধরণের চাহিদা যেহেতু তারা কিছুটা শৈশব এবং যুব বয়সের মধ্যবর্তী পর্যায়ে থাকে যখন তাদের মধ্যে বহুবিধ পরিবর্তন সাধিত হয়। আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অবশ্যই সৃজনশীলভাবে মনোযোগী হতে হবে, যা তাদের আগ্রহগুলোকে সম্পৃক্ত করবে, শিক্ষাদান এবং সেবাদানে তাদের সামর্থ্যগুলোকে কাক্সিক্ষত রূপ দেবে এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে বয়োজেষ্ঠ্য তরুণদের সাথে সম্পৃক্ত করবে। এধরণের কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন প্রকার শিল্পকলার ব্যবহার বিশাল অবদান রাখতে পারে।

এখন আমরা, পিতা মাতাদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা বলতে চাই, যাদের উপর তাদের সন্তানদের লালন—পালনের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা তাদের কাছে এ আহ্বান করছি যেন তারা তাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রতি অব্যাহত মনোযোগ দেন। কিছু পিতা—মাতার মনে হতে পারে যে এটা সমাজের একটা বিশেষ দায়িত্ব; অন্যান্যরা বিশ্বাস করেন যে, সত্যানুসন্ধানে সন্তানদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে তাদের ধর্মের শিক্ষা দেওয়া উচিত নয়। এছাড়া অন্যান্যরা ভাবেন যে, এগুলো একাজের জন্য যথেষ্ট নয়, এদের কোনটিই সঠিক নয়। প্রিয় মাস্টার বলেছেন যে, “পিতা—মাতার উপর একটি কর্তব্য হিসেবে ছেলে ও মেয়েদের প্রশিক্ষণে সকল প্রচেষ্টা নিয়োজিত করার দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে”। এতে আরো যোগ হয়েছে— “যদি এ বিষয়টি তারা অবহেলা করে, এজন্য দায়ী থাকতে এবং প্রভুর  কঠোর নিন্দার যোগ্য হবে”। পিতা—মাতার শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক না কেন তারা তাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সাধনে সামর্থ্য রাখেন। তাদের সন্তানদের নৈতিক চরিত্র গঠনে তাদের সামর্থ্যকে যেন কখনো তুচ্ছ জ্ঞান না করেন। ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা, তার বিধানের প্রতি  তাদের সংশ্লিষ্টতা, তার ধর্মে তাদের আগ্রহ, ধর্ম উন্মাদনার অভাব এবং ক্ষয় সৃষ্টিকারী পরনিন্দা থেকে দূরে থাকার সচেতনতার মাধ্যমে যে গৃহে পরিবেশ গড়ে ওঠে তা অপরিহার্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে। পিতা—পাতা যিনি আশিষপুতঃ সৌন্দর্যে্যর একজন বিশ্বাসী তা এমনভাবে আচরণের দায়িত্ব রয়েছে যেন তা পিতা—মাতার  প্রতি স্বতঃস্ফুর্ত আনুগত্য প্রকাশ করে, শিক্ষাসমূহে যার অতি উচ্চ মূল্যের উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য গৃহের মধ্যকার প্রচেষ্টাসমূহ ছাড়াও সমাজের আয়োজিত শিশু ক্লাসসমূহের প্রতি পিতা—মাতার সমর্থন দেয়া উচিত। এছাড়া ইহা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শিশুরা এমন একটি পৃথিবীতে বসবাস করছে যা তাদেরকে ইতিমধ্যে বর্ণিত ভীতিপ্রদ অভিজ্ঞতাসমূহের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অথবা গণমাধ্যমের অপ্রতিরোধ্য উপস্থাপনার দ্বারা তাদেরকে কঠিন বাস্তবতার তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অনেকেই অকালপক্কতা লাভে বাধ্য হচ্ছে এবং তারা এদের মধ্যে রয়েছে যারা তাদের জীবনের পথ প্রদর্শনের জন্য আদর্শ ও শৃঙ্খলা খঁুজছে। একটি অবক্ষয়শীল সমাজের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন দৃশ্যপটের বিপরীতে বাহা’ই সন্তানদেরকে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের প্রতীক হতে হবে।

আমাদের প্রত্যাশাগুলো এই ভাবনার দ্বারা উজ্জীবিত যে, মহাদেশীয় উপদেষ্টাগণ ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে পবিত্র ভুমিতে একটি উপলক্ষ্যে একত্রিত হবেন, যা ঈশ্বরের পর্বতপরি আন্তর্জাতিক শিক্ষাকেন্দ্রে স্থায়ী আসন গ্রহণের অনুষ্ঠানটি উদ্যাপন করবেন। বিশ্বের সর্বত্র থেকে সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যগণ তাদের সাথে অংশগ্রহণ করবেন, যা নিঃসন্দেহে গঠনতান্ত্রিক যুগের ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের একটি বলে গণ্য হবে। বাহা’ই আধিকারিকগণের এমন একটি সমাবেশে মিলিত হওয়া ইহার নিজস্ব বৈশিষ্টে একটি সমাজকে বর্ণনাতীতভাবে উপকৃত করবে যা এছাড়াও একটি পরিকল্পনার ইতি টানবে। পবিত্র ভুমিতে বসবাসকারী ঈশ্বরের অতি প্রিয় ধর্মবাহু আলী আকবর ফুরুতান এবং আলী মুহাম্মদ ভারকার সংশ্লিষ্টতার কথা বিবেচনা করে আমাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে যায়, যারা সেবার সেই মশাল উর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন যা প্রিয়তম অভিভাবক তাদের হৃদয়সমূহে প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন।

বারমাসের পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা এমন একটি সেতু অতিক্রম করবো যা দিয়ে আমরা কখনো ফিরে আসবো না। আমরা এই পরিকল্পনা আরম্ভ করতে যাচ্ছি যখন আমাতুল—বাহা রুহিয়া খানম জাগতিকভাবে আমাদের মাঝে অনুপস্থিত। তিনি বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত আমাদের মাঝে মূলতঃ একটি আলোর কিরণ স্বরূপ ছিলেন, যা মানবজাতির ইতিহাসে অতুলনীয় সময়ে বর্ষিত হয়েছে। স্বর্গীয় পরিকল্পনার ফলকলিপিসমূহের স্বর্গীয় আহ্বান সর্বত্র তুলে ধরতে ভ্রমণে যেতে অপারগতার জন্য প্রিয় মাস্টার আক্ষেপ করেছিলেন এবং তাঁর এই বিচলিত অবস্থার চরমে পেঁৗছে তিনি এই আশা লিপিবদ্ধ করেছিলেন, “ঈশ্বরের অনুগ্রহে, তুমি যেন উহা পাইতে পারো,” আমাতুলবাহা সীমাহীন প্রাণ শক্তি নিয়ে এতে সাড়া দিয়েছিলেন, পৃথিবীর ১৮৫টি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে তাঁর স্পর্শের মাধ্যমে অনুপম উপহারসমূহ লাভের সুযোগ পেয়েছিল। তার উদাহরণ ইহার গৌরবকে চিরদিন ধরে রাখবে। গ্রহের সর্বত্র হাজার হাজার হৃদয়কে আলোকিত করতে থাকবে। আর কোন ইঙ্গিতের প্রত্যাশা না করে এই পরিকল্পনা চলাকালে আমরা কি তাঁর স্বরণে আমাদের সকল প্রচেষ্টা উৎসর্গ করতে পারি না, যার কাছে শিক্ষাদান ছিল প্রাথমিক উদ্দেশ্য, জীবনের পরিপূর্ণ আনন্দ?

 

—সার্বজনীন বিচারালয়