রিজওয়ান বার্তা-২০০৭
সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়
রিজওয়ান ২০০৭
বিশ্বের বাহা’ইগণের প্রতি,
প্রিয় বন্ধুগণ,
আমাদের ২৭ ডিসেম্বর ২০০৫ এর বার্তায় উপস্থাপিত কর্মকাঠামো এবং দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার প্রতি তাদের অঙ্গীকার, বাহা’উল্লাহর অনুসারীগণ, যে পরম বিশ্বস্ত সেবার চেতনায় গ্রহণ করেছেন, পাঁচসালা পরিকল্পনার প্রথম বর্ষ তার সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করছে। যেখানে এই কর্মকাঠামো একটি ক্লাষ্টারের সকল পরিসরে সঙ্গতিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, সেখানে সমাজ জীবনে বিশ্বাসীগণ ও তাদের বন্ধুগণের অংশগ্রহণ এবং সংখ্যাভিত্তিক বৃদ্ধি, উভয় ক্ষেত্রে নিয়মিত অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে, কিছু সংখ্যক ক্লাষ্টার কয়েক মাসে শত শত, এবং অন্যান্যগুলো বহুসংখ্যক তালিকাভুক্তির প্রতিবেদন দিচ্ছে। এই উন্নয়নের জন্য যা কিছু অপরিহার্য , তা হচ্ছে উদ্যোগটির আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি এক উচ্চমাত্রার সচেতনতা এবং তার সাথে যুক্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমবর্ধমান উপলব্ধি, যেগুলো পরিকল্পনার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে।
দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নেয়ার অভিন্ন লক্ষ্যের উপর নিবন্ধ আমাদের সর্বব্যাপী পরিকল্পনাগুলোর বর্তমান ক্রমটি আরম্ভ করার পূর্বে, বিশ্বের অনেক অংশে বাহা’ই সমাজ একটি দ্রুত ও বৃহৎ মাত্রার প্রসারণ পর্যায়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে, এমন একটি প্রসারণ যা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা অসম্ভব ছিল। চ্যালেঞ্জটি জনসমষ্টির প্রমাণিত গ্রহণশীলতার কারণে নতুন অনুগামীদের নিয়ে ধর্মের স্ফীতিশীল কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার উপর খুব বেশী ন্যস্ত ছিল না, বরং তাদেরকে সমাজ জীবনে সংযুক্ত করতে এবং তাদের মধ্য থেকে আরও প্রসারণের প্রতি নিবেদিত পর্যাপ্ত সংখ্যককে উত্থিত করার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। বাহা’ই বিশ্বের জন্য এই চ্যালেঞ্জটির মোকাবিলা করা এত অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে আমরা ইহাকে চারসালা পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্যে পরিণত করি এবং জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য গড়ে তুলতে তাদের শক্তিগুলোর বৃহত্তর অংশ নিয়োজিত করে প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের কাঠামোয় মানব সম্পদ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। আমরা নির্দেশ করি যে বিশ্বাসীগণের চির-বর্ধিষ্ণু বৃহত্তর সমষ্টিকে একটি আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে উপকৃত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, যা তাদেরকে জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা, দক্ষতাগুলো ও সামর্থ্যগুলো দ্বারা সমৃদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, এবং যা বৃহৎ মাত্রার প্রসারণ ও দৃঢ়করণ অব্যাহত রাখতে সেবার কাজগুলো সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে আমরা ঐ সকল ক্লাষ্টারের কাজগুলো মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষন করছি যেগুলো বৃদ্ধির একটি স্বাস্থ্যবান পর্যায়ে রয়েছে, আমরা লক্ষ্য করি যে এগুলোর প্রত্যেকটিতে বন্ধুগণ ইন্সটিটিউট প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করণ অব্যাহত রেখেছেন, একইসময়ে তারা তাদের ধর্মের সক্রিয় সমর্থকদের প্রসারণশীল মূল অংশকে কাজে নিয়োজিত করতে, তাদের প্রচেষ্টাগুলোর সমন্বয়ের জন্য একটি কার্যকর বিন্যাস প্রতিষ্ঠা করতে, তাদের ব্যক্তি-উদ্যোগগুলো এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টাগুলো একটি একীভূত কাজের ফলপ্রসূ কাঠামোতে গ্রথিত করতে, এবং তাদের কর্মকান্ডের কালচক্রের পরিকল্পনার সাথে প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলোর বিশ্লেষণের উপর মনোযোগ দিতে শিখছেন। তারা যে প্রসারণ ও দৃঢ়করণের কাজ একসাথে এগিয়ে নেয়ার উপায় হিসাবে ‘অব্যাহত বৃদ্ধির চাবি’ খুঁজে পেয়েছেন, তা প্রতিপাদনযোগ্য। এইরূপ প্রমাণ প্রত্যেক একান্তভাবে নিয়োজিত বিশ্বাসীকে শেখার চলমান পদ্ধতিগত পথে দৃঢ়সংকল্প থাকতে নিশ্চিতরূপে অনুপ্রাণীত করবে।
অভূতপূর্ব প্রচেষ্টার এই বছরগুলোর অর্জনসমূহ সেই সকল ক্লাষ্টারে সীমাবদ্ধ থাকে নাই, যেখানে বৃহৎ মাত্রার প্রসারণ ও দৃঢ়করণের কাজে নবজীবন সঞ্চার করছে। উদ্যোগটি চারসালা পরিকল্পনার সময়ে গৃহিত হয়, বারো মাসের পরিকল্পনা ও পূর্ববর্তী পাঁচসালা পরিকল্পনা দ্বারা অনুসৃত হয়, এটি বিশ্বাসীগণকে সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিকে সম্পৃক্ত করে একটি বিস্তৃত পরিধির জনগণের কাছে তাদের প্রচেষ্টাগুলো প্রসারিত করার পরিবেশ সৃষ্টির উপায় হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। পৃথিবীব্যাপী পরিকল্পনাগুলোর তিন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে সামর্থ্য গড়ে তোলার দশক-দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সুফলগুলো এখন বিস্তৃতভাবে দৃশ্যমান। সর্বত্র মানব সম্পদ উন্নয়নের গতিময়তার একটি উপলব্ধি লাভ করার আবশ্যকতা ছিল। সর্বত্র বন্ধুগণকে পদ্ধতিগত কাজের অগ্রগতিসাধনে সহায়তা করতে এবং বিভ্রান্তি এড়াতে, সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো তৃণমূলদের কাছে পৌঁছে দিতে এবং দায়িত্বশীলতার অনুভূতিসম্পন্ন সমাজগুলো সৃষ্টি করতে, সার্বজনীন অংশগ্রহণ উৎসাহিত করতে এবং তাদের কর্মকাণ্ডে সমাজের বিভিন্ন অংশের জন্য স্থান করে দিতে সুষম বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাগুলো শিখতে হয়েছিল, বিশেষভাবে শিশু ও কিশোরগণ, যারা ঈশ্বরের ধর্মের ভবিষ্যৎ সমর্থনকারী এবং তাঁর সভ্যতার স্থপতিবৃন্দ ভবিষ্যৎ সমর্থনকারী এবং তাঁর সভ্যতার স্থপতিবৃন্দ।
এইরূপ দৃঢ় একটি ভিত্তি স্থাপনের পর প্রত্যেক বিশ্বাসীর মনের প্রধানতম ভাবনা হবে ধর্মের শিক্ষাদান। হতে পারে তাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ঘরোয়া আলোচনার মাধ্যমে তারা তাদের বন্ধুদেরকে ধর্মের শিক্ষাদান করবে এবং অতঃপর তারা মূল কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ত করবে অথবা এই কার্যক্রমকে তাদের শিক্ষাদানের প্রাথমিক মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করবে, হতে পারে একটি সমাজ হিসাবে একটি ক্লাষ্টারে প্রাথমিক গতিবেগ সঞ্চার করতে তারা শিশু ও কিশোরদের নিয়ে কাজ করবে, অথবা সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতি সাড়া দিয়ে একটি নিবিড় শিক্ষাদান অভিযানের অংশ হিসাবে তারা পরিবারগুলোতে সাক্ষাতের জন্য যাবে অথবা কিছুদিন পর পর নিয়মিতভাবে অন্বেষনকারীগণের গৃহে অল্প সময়ের জন্য সাক্ষাৎ করতে যাবে এই সকল সিদ্ধান্ত যা কেবল বন্ধুদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সম্ভাব্যতা এবং যে জনগোষ্ঠির সাথে তারা পারস্পরিক মতবিনিময় করবে তাদের স্বভাব অনুযায়ী নেয়া যেতে পারে। সবাইকে অবশ্যই যে দু’টি বিষয় স্বীকার করতে হবে, তা হচ্ছে পারিপার্শ্বিক অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আধ্যাত্মিক জীবন রক্ষার উপায় থেকে বঞ্চিত একটি মানবজাতি, যা হতাশার গভীরে ক্রমে নিমজ্জিত হচ্ছে এবং শিক্ষাদানের দায়িত্বের অত্যাবশ্যকীয়তা, যা দ্বারা আমাদের প্রত্যেকে মহত্তম নামের সমাজের সদস্যবৃন্দ হিসাবে বিশ্বস্ততা লাভ করেছি।
বাহা’উল্লাহ্ তাঁর অনুসারীগণকে ধর্মের শিক্ষাদান করতে আদেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে হাজার হাজার বিশ্বাসী উদ্যমের সাথে তাঁর প্রত্যাদেশের মহাসাগরের প্রতি আত্মাগুলোকে পথ প্রদর্শনের উপায়গুলো উন্মোচন করতে পরিকল্পনার শর্তাবলী প্রয়োগ করছেন। আমরা প্রত্যাশী চক্ষু নিয়ে সেই দিবসটির দিকে তাকিয়ে আছি যখন শিক্ষাদান প্রত্যেক বিশ্বাসীর জীবনের আধিপত্য বিস্তারকারী বাসনা এবং সমাজের একতা এতই প্রবল হবে যা সেবার ক্ষেত্রে বিরামহীন কর্মোদ্যোগে ইহার প্রজ্বলিত অবস্থা স্বয়ং প্রকাশ করতে সক্ষম। আপনাদের জন্য এটাই হচ্ছে আমাদের আন্তরিক আশা এবং পবিত্র দ্বারপ্রান্তে আমাদের ঐকান্তিক প্রার্থনাসমহের লক্ষ্য ।
-সার্বজনীন বিচারালয়