রিজওয়ান বার্তা-২০২২

রিজওয়ান বার্তা-২০২২

সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়

রিজওয়ান বার্তা ২০২২

 

বিশ্বের বাহা’ইদের প্রতি

সুপ্রিয় বন্ধুগণ,

 

১। প্রস্তুতি, অনুচিন্তন এবং সেই সাথে অসামান্য প্রচেষ্টার একটি বছর সমাপ্ত হয়েছে, এই বছরটি বিশ্বব্যাপী বন্ধুদের আব্দুল বাহা’র স্বর্গারোহণের শতবার্ষিকী পালনের প্রচেষ্টা দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল, যার মধ্যে পবিত্র ভূমিতে তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ আয়োজনের জন্য প্রতিনিধিগণ প্রেরণও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই প্রচেষ্টাসমূহের মাধ্যমে আব্দুল-বাহা’র জীবন যে অনুপ্রেরণা দান করে তা শুধু বাহা’ইরা নয় বরং অসংখ্য আত্মা অনুভব করছে। মানব পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যের জন্য তাঁর উদ্বেগ, তাঁর শিক্ষাদান কর্ম, শিক্ষা ও সামাজিক কল্যাণের উদ্বেগগুলোর প্রতি তাঁর উৎসাহ দান, প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য উভয় স্থানের কথোপকথনে তাঁর অসামান্য অবদান, উপাসনালয়সমূহের নির্মাণের প্রকল্পসমূহে তাঁর আন্তরিক উৎসাহদান, বাহা’ই প্রশাসনের প্রারম্ভিক রূপকে তার আকার প্রদান করা, সম্প্রদায়ের জীবনের বিভিন্ন দিকে তাঁর সযত্নে লালন এই সকলই তাঁর জীবনে একে অপরের পরিপূরক ভিন্ন দিক ছিল যা ঈশ্বরের সেবা এবং মানবতার সেবার প্রতি তাঁর অবিরত এবং সম্পূর্ণ উৎসর্গের প্রতিফলন। নৈতিক কর্তৃত্ব এবং অতীব উৎকৃষ্ট আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃটি সম্পন্ন একজন অসামান্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়া ছাড়াও আব্দুল-বাহা ছিলেন সেই নিষ্কলুষ প্রণালী যার মাধ্যমে বাহা’উল্লাহর প্রত্যাদেশ দ্বারা উন্মুক্ত শক্তিসমূহ পৃথিবীর উপর তার প্রভাব বিস্তার করতে পারে। প্রভুধর্মের সমাজ নির্মাণকারী শক্তি সম্পর্কে বুঝতে হলে আমাদের আব্দুল-বাহা’র দায়িত্বকালে তাঁর অর্জনসমূহ এবং তাঁর লেখনীর মাধ্যমে অবিরামভাবে যে দিকনির্দেশনা প্রবাহিত হয়েছে তার রূপান্তরকারী প্রভাবের দিকে লক্ষ্য করাই যথেষ্ট। বর্তমান যুগের বাহা’ই সম্প্রদায়ের অনেকগুলো বিস্ময়কর অগ্রগতি, যেগুলো সম্পর্কে আমরা গত রিজওয়ান বার্তায় পর্যালোচনা করেছিলাম সেগুলোর উৎস আমরা আব্দুল-বাহা’র কর্ম, সিদ্ধান্ত এবং দিকনির্দেশনায় খুঁজে পাব।

২। ইহা কতই না যথোপযুক্ত হবে যে সম্প্রদায়ের সবাই তাঁর নিখুঁত আদর্শের প্রতি সম্মিলিত শ্রদ্ধাঞ্জলির প্রস্তাবনা হবে তাদের এমন একটি বৃহত্তর উদ্যোগ যা প্রভুধর্মের সমাজ বিনির্মাণকারী শক্তিগুলোর অধিকতর বৃহত্তর মাত্রায় অবমুক্তি। প্রচেষ্টার ক্ষেত্রগুলো যা নয়সালা পরিকল্পনা এবং চলমান পরিকল্পনাগুলোর পরিসীমার মধ্যে পড়ে সেগুলো এই ব্যাপক লক্ষ অর্জনের দিকেই পরিচালিত। ইহা এই মহান আধ্যাত্মিক উদ্যোগের সূচনাকে চিহ্নিত করার জন্য পৃথিবীব্যাপী যে ১০,০০০এর অধিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার কেন্দ্রেও রয়েছে। এই সম্মেলনগুলি, যাতে আশা করা হচ্ছে যে, অভূতপূর্বসংখ্যায় মানুষ অংশগ্রহণ করবে, তা শুধু বাহাইদেরকে একসঙ্গে আনছে তা নয় বরং তার পাশাপাশি যারা তাদের একতার প্রসার এবং বিশ্বের উন্নতির ধারণার সাথে একমত মানবতার এমন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকেও স্বাগত জানাচ্ছে। তাদের দৃঢ় প্রত্যয় এবং লক্ষ্যের প্রতি সচেতনতা ইতিমধ্যে যে সম্মেলনগুলি অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে সৃষ্ট উদ্দীপনায় প্রতিফলিত হয়েছে সেখানে অংশগ্রহণকারীরা শুধু সমাবেশে অনুষ্ঠিত গতিশীল আলোচনার দ্বারা উদ্দীপিত হন নাই যাতে তারা নিজেরাও অবদান রেখেছেন বরং তারা এই আনন্দপূর্ণ উপলক্ষগুলোতে আলোচিত যৌথ কল্পদৃষ্টি দ্বারাও উদ্দীপনা লাভ করেন। আমরা আগ্রহের সাথে উপলক্ষগুলোতে আলোচিত যৌথ কল্পদৃষ্টি দ্বারাও উদ্দীপনা লাভ করেন। আমরা আগ্রহের সাথে আগামী মাস এবং বছরগুলো কী বয়ে আনবে তার প্রত্যাশা করছি।

৩। উপদেষ্টাগণের সম্মেলনকে সম্বোধন করে আমাদের ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ এর বার্তার পর জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ এবং আঞ্চলিক বাহাই কাউন্সিলসমূহ নয়সালা পরিকল্পনা চলাকালীন তাদের এক্তিয়ারভুক্ত ক্লাস্টারগুলোতে বিকাশের প্রক্রিয়াকে তীব্রতর করার সম্ভাবনাগুলোকে আন্তরিকতার সাথে মূল্যায়ন করছেন। আমরা মনে করি যে, একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর কী অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা পরিমাপ করার জন্য উন্মোচনশীল পরিকল্পনাকে চার এবং পাঁচ বছরের দুইটি কাল ভাগে বিবেচনা করা সহায়ক হবে। তাই জাতীয় পরিষদসমূহকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল যে, তারা যেন তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ে রিওয়ান ২০২৬ এবং রিওয়ান ২০৩১ এর মধ্যে কী অগ্রগতি প্রত্যাশা করেন তা বিবেচনা করার জন্য। এই পদ্ধতিতে ক্লাস্টারসমূহের সীমানা পুননির্ধারণ এবং এমন সকল সমন্বয় সাধনের ফল হল যে, পৃথিবীতে ক্লাস্টারসমূহের সংখ্যা এক চতুর্থাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এখন ২২,০০০ এ দাড়িয়েছে। যে সমস্ত পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছে তা থেকে অনুমান করা যায় যে, পরিকল্পনার শেষে এই ক্লাস্টারসমূহের মধ্যে ১৪,০০০টিতে উন্নতির কোনো একটি মাত্রায় বৃদ্ধির একটি কার্যক্রমের অস্তিত্ব থাকবে। একই সময় তাদের মধ্যে  এমন সকল একাট মাত্রায় বৃদ্ধির একটি কার্যক্রমের অস্তিত্ব থাকবে। একই সময় তাদের মধ্যে এমন সকল বৃদ্ধির কর্মসূচীসমূহ যেগুলোকে নিবিড় বিবেচনা করা যেতে পারে তাদের সংখ্যা ১১,০০০ এ উন্নীত হবে এবং তাদের মধ্যে যেসকল ক্লাস্টার যেখানে তৃতীয় মাইলফলক অতিক্রম করা হয়েছে তা ২০৩১ এর মধ্যে ৫০০০ এর অধিক হবে। কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না যে, এমন অগ্রগতি অর্জনের জন্য পরিকল্পনার পূর্ণ মেয়াদে প্রচণ্ড প্রচেষ্টা অবশ্যম্ভাবী। তবুও আমরা এই সকল লক্ষ্যসমূহ অনুসরণ করার জন্য প্রচেষ্টাকে উপযুক্ত মনে করি, কেননা তারা একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিন্তু যা নাগালের মধ্যে রয়েছে তার একটি ঐকান্তিক মূল্যায়নের প্রতিনিধিত্ব করে।

৪। ইহা অত্যন্ত অর্থবহ যে, এমন লক্ষ্যসমূহকে বাস্তবসম্মতভাবে বিবেচনা করা যাবে না। যদি প্রতিষ্ঠান এবং এজেন্সীসমূহ উল্লেখযোগ্যরূপে বিকশিত না হয়ে থাকে, যা তাদেরকে সম্প্রদায়ের বিষয়াবলী পরিচালনা করার জন্য উচ্চতর সামর্থ্য প্রদান করবে। যে সম্প্রদায়ের কার্যক্রমগুলো দ্রুত বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যা ব্যাপক এবং ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় তাদের স্বগোত্রীয়দেরকে আলিঙ্গণ করেছে। এমন বৃদ্ধির আশা করা যায় না, যদি না উদ্যোগ গ্রহণ করা, পর্যালোচনা করা, অন্তর্দৃষ্টিগুলো উপলব্ধি করা এবং অন্যান্য স্থানগুলোতে উদীয়মান অন্তর্দৃষ্টিসমূহকে আত্মস্থ করার চর্চা সম্প্রদায়ের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শেখা না হয় এবং এমন সকল পূর্বানুমান যে প্রচেষ্টার দাবী করে তা কোনো ক্রমেই সম্ভব হবে না যদি না শিক্ষাদান কর্মে একটি পদ্ধতিগত পন্থা অবলম্বন করা না হয় এবং বাহাই বিশ্বে মানবসম্পদ উন্নয়ন যদি ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হয়। এই সকল পদক্ষেপ বাহাই সম্প্রদায়ের মধ্যে তার নিজের পরিচয় এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতনতায় অগ্রগতি আনয়ন করেছে। সম্প্রদায় নির্মাণের ক্ষেত্রে বহির্মুখি হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ইতিমধ্যেই অনেক অনেক স্থানে সংস্কৃতির একটি প্রতিষ্ঠিত দিকে পরিণত হয়েছিল, তা এখন ক্রমবর্ধমান সংখ্যায়-সম্প্রদায়গুলোতে বৃহত্তর সমাজের অভ্যন্তরে স্বয়ং বাহা’ই সমাজের সদস্যদের বাহিরে বৃহৎ হতে বৃহত্তর দলগুলোর আধ্যাত্মিক এবং বস্তুগত প্রগতির জন্য প্রকৃত দায়িত্ববোধকে প্রস্ফুটিত করেছে। বন্ধুদের সম্প্রদায় নির্মাণ, সামাজিক উদ্যোগে জড়িত হওয়া এবং সমাজে চলমান কথোপকথনে অবদান রাখা একটি একক গ্রহব্যাপী উদ্যোগে সমন্বয় প্রাপ্ত হচ্ছে, তারা একটি অভিন্ন কর্ম কাঠামে বাঁধা এবং তারা মানবতাকে ও ইহার বিষয়াবলীকে আধ্যাত্মিক নীতিসমূহের প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করার উপর মনোনিবেশ কেন্দ্রীভূত করছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থার সূচনার একশত বছর পর যে অগ্রগতির বর্ণনা আমরা দিয়েছি তাতে পৌঁছানোর গুরুত্বকে উপেক্ষা করা যায় না। গত দুইদশকে সামর্থ্যের যে অসাধারণ উত্থান হয়েছে-যা বাহা’ই বিশ্বকে এবং তার প্রচেষ্টাকে প্রভুধর্মের সমাজ বিনির্মাণকারী শক্তির উন্মোচনের আলোকে দেখতে সমর্থ করেছে তাতে আমরা অখণ্ডনীয় প্রমাণ পাই যে, ঈশ্বরের ধর্ম তার সাংগঠনিক যুগের ষষ্ঠ অধিকালে প্রবেশ করেছে। আমরা গত রিজওয়ানে ঘোষণা করেছিলাম যে, বৃহৎ সংখ্যায় মানুষের বাহাই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ যা তাদের বিশ্বাস থেকে উদ্দীপনা প্রাপ্ত হয়েছে এবং তাদের সমাজকে সেবা করার জন্য দক্ষতা ও সামর্থ্য অর্জন করেছে, ইঙ্গিত বহন করছে যে, মাষ্টারের ঐশী পরিকল্পনার তৃতীয় অধিকালের সূচনা হয়েছে; অর্থাৎ একসালা পরিকল্পনা তার সূচনায় এবং এখন তার সমাপ্তিতে এমন ঐতিহাসিক অগ্রগতিসমূহ একটি ধারাকে চিহ্নিত করে যা বিশ্বাসীগণ যৌথভাবে অর্জন করেছে। একটি নতুন, শক্তিশালী উদ্যোগের দোরগোড়ায়, বিশ্বাসীদের এই একতাবদ্ধ দল তাদের সম্মুখে যে অপরিমেয় সম্ভাবনাগুলো উপস্থিত রয়েছে তা আয়ত্ব করতে প্রস্তুত রয়েছে।

৫।    যে অধিকাল এখন শেষ হতে যাচ্ছে তার একটি বিশিষ্ট দিক ছিল সর্বশেষ মহাদেশীয় উপাসনালয়ের নির্মাণ এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে উপাসনালয়সমূহের নির্মাণের সূচনা। বিশ্বব্যাপী বাহাইগণ মাশরিকুল আযকারের ধারণা এবং তা উপাসনা ও সেবাদানের মধ্যে যে ঐকাকে একিভুত করে তার সম্পর্কে অনেক শিখেছেন। সাংগঠনিক যুগের ৬ষ্ঠ অধিকালে তারা সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরে একটি সমৃদ্ধ ভক্তিমূলক জীবনের চর্চা এবং সেবা দানে অনুপ্রেরণা যা মাশরিকুল আযকারের দিকে পথ প্রদর্শন করে তার সম্পর্কে আরও অনেক কিছু শিখতে পাবে। বিভিন্ন জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের সাথে পরামর্শের সূচনা করা হয়েছে এবং তার অগ্রগতির সাথে সাথে আমরা পর্যায়ক্রমে আগামী বছরগুলোতে কোথায় বাহাই উপাসনালয় নির্মীত হবে তা ঘোষণা করব।

৬। মহত্তম নামের সম্প্রদায়কে উত্তরোত্তর শক্তিশালী হতে দেখার আমাদের আনন্দ বিশ্বের এমন অবস্থাও দ্বন্দ্ব যা দুর্দশা এবং প্রচণ্ড কষ্ট, বিশেষ করে সেই সকল ধ্বংসাত্মক শক্তিগুলোর পুনরাবির্ভাব দেখে যা আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলীতে অরাজকতার মাধ্যমে মানবতার জন্য ভয়াবহ অবস্থা বয়ে এনেছে তা আমাদের আনন্দকে হ্রাস করে দেয়। আমরা ভালোভাবে অবগত আছি এবং আমরা নিশ্চিত যে, যেভাবে বাহা’ই সম্প্রদায়গুলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বারংবার প্রমাণ করেছে, বাহা’উল্লাহর অনুসারীগণ তাদের নিজেদের অবস্থা যতই দৈন্য হোক না কেন তারা তাদের প্রতিবেশীদের কষ্ট লাঘব ও সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। কিন্তু যতদিন না মানবজাতি সমষ্টিগতভাবে তার বিষয়াবলীকে ন্যায়বিচার এবং সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করবে না ততদিন দুঃখ জনক হলেও তার ভাগ্যে একটি সংকট থেকে অন্য সংকটে হোঁচট খেতে থাকবে। আমরা প্রার্থনা করি যেন সম্প্রতি ইউরোপে যে যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব হয়েছে তা ভবিষ্যতের জন্য যদি কোনো শিক্ষা গ্রহণ  করে থাকে তাহলে তা হবে মানবজতি যদি প্রকৃত এবং স্থায়ী শান্তি অর্জন করতে চায় তাহলে তাকে যে পথ
অনুসরণ করতে হবে তার সম্পর্কে এই যুদ্ধ সেই জরুরী সংকেত। বাহা’উল্লাহ্ তাঁর সময়ের সম্রাট ও রাষ্ট্রনায়কদের প্রতি যে নীতিগুলো ঘোষণা করেছিলেন এবং অতীত এবং বর্তমানের শাসকদেরকে যে গুরুভার অর্পণ করেছিলেন তা সম্ভবত যখন তাঁর লেখনী প্রথমবারের মত লিপিবদ্ধ করেছিলেন তার চেয়ে আজকে অধিকতর প্রাসঙ্গিক এবং অপরিহার্য। বাহা’ইদের জন্য ঈশ্বরের বৃহত্তর পরিকল্পনার অনিবার্য অগ্রগতি যা তার সাথে অগ্নি-পরীক্ষা ও কোলাহল নিয়ে আসে কিন্তু তার চরম পরিণতিতে মানবতাকে ন্যায়বিচার, শান্তি এবং একতার দিকে চালিত হতে বাধ্য করছে, হলো সেই প্রেক্ষাপট যার মধ্যে ঈশ্বরের ক্ষুদ্রতর পরিকল্পনা উন্নতি হয় ও যার মধ্যে বিশ্বাসীরা মূলত সক্রিয়। বর্তমান সমাজের অকার্যকর অবস্থা প্রভুধর্মের সমাজ বিনির্মানকারী শক্তির অবমুক্তির প্রয়োজনীয়তাকে সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট এবং জরুরী করে দিয়েছে। এটাই প্রত্যাশিত যে বর্তমন সময়ে দূর্বিপাক এবং বিশৃঙ্খলা বিশ্বকে পীড়িত করতে থাকবে, কোনো সন্দেহ নাই যে, আপনারা উপলব্ধি করবেন যে, কেন আমরা ঈশ্বরের সন্তানদের বিভ্রান্তি এবং বেদনাদায়ক কষ্টভোগ থেকে মুক্তির প্রত্যেকটি আন্তরিক প্রার্থনা যা আমরা করি তা আপনাদের শান্তির রাজপুত্রের ধর্মের জন্য যে অতি প্রয়োজনীয় সেবাদান করেছেন তার সাফল্যের জন্য একই প্রকার আন্তরিক প্রার্থনার সঙ্গে মিলিত হয়।

৭।    প্রত্যেকটি ক্লাস্টারে যেখানে পরিকল্পনার কার্যক্রম গতি সঞ্চার করছে সেখানে আমরা ৩০ ডিসেম্বর ২০২১-এর বার্তায় আমাদের বর্ণিত উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্বলিত সম্প্রদায়গুলোর বিকাশ লাভ লক্ষ্য করছি। সমাজগুলো যখন বিভিন্ন ধরনের চাপের সম্মুখীন হয়, তখন আবহা সৌন্দর্যের অনুসারীদেরকে অবশ্যই তাদের স্থিরতা এবং যৌক্তিকতা, তাদের আচরণের মান এবই নীতির প্রতি তাদের সংলগ্নতা এবং তাদের অনুকম্পা, নিরাশক্তি এবং একতার অন্বেষণে তারা যে সহনশীলতা প্রদর্শন করে তার মাধ্যমে তাদেরকে লক্ষণীয় হতে হবে। বারংবার কঠিন সংকটের সময় বিশ্বাসীরা যে বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত চরিত্র এবং মনোভাব প্রদর্শন করেছে তা মানুষকে ব্যাখ্যা, পরামর্শ এবং সহায়তার জন্য বাহাইদের প্রতি মুখ ফেরাতে উৎসাহিত করছে, বিশেষ করে যখন কোনো সমাজ বিপদ এবং অপ্রতাশিত বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হয়। এই সকল পর্যবেক্ষণ আপনাদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার সময় আমরা সচেতন রয়েছি যে, স্বয়ং বাহাই সম্প্রদায় বিশ্বে কার্যরত ভাঙ্গনের শক্তিগুলোর প্রভাব ভোগ করছে। অধিকন্তু আমরা এই বিষয়ে সচেতন যে, তা শীঘ্রই হোক বা বিলম্বে, বিভিন্ন দিক থেকে বিরোধীতাকারী শক্তির মুখোমুখি হবে। তাদেরকে অবশ্যই নিজের মান ও মনোবলকে সেই সকল পরীক্ষার জন্য শক্তিশালী করতে হবে যা নিশ্চিতরূপে আসবে যেন তা তাদের প্রচেষ্টাগুলোর অখণ্ডতাকে দুর্বল করতে না পারে। কিন্তু বিশ্বাসীরা ভালোভাবেই অবগত  আছেন যে, সামনে যে ঝড়ই থাকুক না কেন প্রভুধর্মের তরী তার মোকাবেলা করতে সক্ষম। তার যাত্রায় উপযুপরি ধাপ তাকে প্রকৃতিক শক্তিগুলিকে বাগ মানাতে এবং জয়ী হতে দেখেছে। এখন এই তরী একটি নতুন দিগন্তের দিকে ধাবিত। ঈশ্বরের অনুমোদন হলো সেই প্রবল হাওয়া যা তার পালগুলোকে পূর্ণ করেছে এবং তাকে তার গন্তব্যের দিকে চালিত করছে এবং ঐশী চুক্তি পত্র হলো তার ধ্রুবতারা যা এই পবিত্র তরীকে নিশ্চিত এবং নির্দিষ্ট পথে স্থির রাখছে। যারাই তার আরোহী তাদের সকলের প্রতি যেন স্বর্গীয় দেবদূতগণ আশীর্বাদ প্রেরণ করেন।

-সার্বজনীন বিচারালয়।