সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়ের বার্তা,২৭ ডিসেম্বর-২০০৫
সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়
বাহা’ই বিশ্ব কেন্দ্র
২৭শে ডিসেম্বর, ২০০৫
উপদেষ্টাগণের মহাদেশীয়
বোর্ডের সম্মেলনের প্রতি
প্রিয়তম বন্ধুগণ,
১। বিগত সাড়ে চার বছর যাবত, বিশ্বাসীগণ দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সারা বিশ্বব্যাপী যেভাবে প্রানপণ চেষ্টা চালিয়েছেন, তা থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে স্পষ্ট হয়েছে যে বর্তমান পাঁচসালা পরিকল্পনার সমাপ্তি একটি সুস্পষ্ট মূহুর্তের ছাপ রেখে যাবে যার, ঐতিহাসিক উদ্যোগের উন্মোচনে সর্ব-মহান নামের সমাজটি যাত্রা শুরু করেছে। বাহা’উল্লাহর প্রত্যাদেশের চেতনা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে একটি মিলিত প্রচেষ্টার সঞ্চার ঘটাতে প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ একটি কর্ম কাঠামোতে স্ফটিক-স্বচ্ছ হয়েছে যা এখন শুধু কাজে লাগাতে হবে।
২। আমাদের ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৫ এর বার্তা, যা বাহা’ই বিশ্বকে ধর্মের টেকসই, দ্রুত বৃদ্ধি সম্বন্ধে নিবিড় জ্ঞানলাভের একটি পথের উপর দৃষ্টি-নিবদ্ধ করেছে, কাজের প্রকৃতিটি সাধারণ ভাষায় বর্ণনা করেছিল যা সম্মুখের চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলা করতে হাতে নেয়ার প্রয়োজন হবে। প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে, বাহা’ই সমাজগুলোকে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ধর্মের মানবসম্পদসমূহের উন্নয়নে তাদের প্রচেষ্টাগুলোকে প্রণালীবদ্ধ করতে আহ্বান করা হয়েছে। যদিও প্রতিটি জাতীয় সমাজ এই অপরিহার্য কার্য সম্পাদনে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিয়েছে, পাঁচসালা পরিকল্পনা আরম্ভ হওয়া পর্যন্ত তা সম্ভব হতে পারে নাই যতক্ষন না একটি সুবোধ্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়। ক্লাষ্টারের ধারণার পরিচিতি বন্ধুগণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রনযোগ্য মাত্রায় সমাজের ত্বরান্বিত বৃদ্ধির ভাবনা সম্ভবপর করেছে এবং ইহার ধারণা নিতে দুইটি সম্পুরক, শক্তিবর্ধন কর্ম-চাঞ্চল্য: ইনস্টিটিউটের কোর্সগুলোর ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিবর্গের নিয়মিত গমন এবং উন্নয়নের এক স্তর থেকে পরবর্তীটিতে ক্লাষ্টারগুলোর পরিবর্তন। এই ভাবমূর্তি বিশ্বাসীগণকে কর্মক্ষেত্রে শেখা জ্ঞানের বিশ্লেষণ করতে এবং তাদের প্রাপ্ত তথ্যগুলো স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করতে একটি অভিন্ন শব্দভান্ডার প্রয়োগ করতে সাহায্য করেছে। কর্মকাণ্ডের একটি আদর্শ রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য এইরূপ একটি উপায় ইতিপূর্বে আর কখনো ছিলনা যা থেকে প্রসারণ ও দৃঢকরণের যমজ প্রক্রিয়ার উপর সমানভাবে গুরুত্ব আরোপের বিষয়টি এত ভালোভাবে বোধগম্য হয়েছে। বস্তুত, এই বোধগম্যতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ক্লাষ্টারে নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রম বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা এতই সঙ্গতিপূর্ণ ছিল যে বাকচাতুরীর কোন কারণ অবশিষ্ট ছিল না। সম্মুখের পথ স্পষ্ট, এবং রিজওয়ান ২০০৬ এ আমরা বিশ্বাসীদের প্রতি তাদের সিদ্ধান্ত ইস্পাতের ন্যায় দৃঢ় করতে এবং কর্মশক্তির সম্পূর্ণ বল প্রয়োগ করে সেই গতিপথে এগিয়ে যেতে আহ্বান করব যা এত সুস্পষ্টভাবে প্রস্তুত হয়েছে।
৩। এই সম্মেলনে আপনাদের পরামর্শের বিষয় আগামী পাঁচসালা পরিকল্পনার বৈশিষ্টসমূহ আপনাদের নিকট উপস্থাপন করতে আমরা বাহা’ই বিশ্বের অর্জনসমূহের সা¤প্রতিক লেখ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করব এবং কিভাবে চলমান প্রচেষ্টাগুলো, পদ্ধতিগুলো এবং যন্ত্রাদিকে এই পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে হবে তা নির্দেশ করব। বিশ্লেষণটিকে যা সহজবোধ্য করবে তা হচ্ছে পাঁচ বছর পূর্বে তারা যে দিক-নির্দেশনা লাভ করেছিল তার প্রতি ব্যক্তি-বিশ্বাসী, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যে সর্বান্তঃকরণ সাড়া দিয়েছিল তা তাদের সামর্থ্যকে নতুন স্তর গুলোতে উন্নীত করেছে। গঠনমূলক যুগের প্রথম শতাব্দীর শেষ বছরগুলো জুড়ে বাহা’ই বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু – দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যের প্রতি এই সামর্থ্যরে উন্নয়ন অপরিহার্য থাকবে।
ব্যক্তি
৪। ব্যক্তি-বিশ্বাসীর অর্জনগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার প্রয়োজন অতি সামান্য রয়েছে, কারণ আমরা বাহা’ই বিশ্বের প্রতি আমাদের ১৭ জানুয়ারী ২০০৩ এর বার্তায় ইতিমধ্যে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছি। সেই বার্তায় আমরা প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ ও উপায় উদ্ভাবনের নৈপুণ্য, সেইসাথে সাহস ও দুঃসাহসের বর্ধিষ্ণু সচেতনতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, যা সর্বত্র বিশ্বাসীদেরকে বৈশিষ্টমণ্ডিত করেছে। গুণাবলীগুলো যেমন উৎসর্গ, গভীর অনুভূতি, আত্মবিশ্বাস ধৈর্যশীলতা তাদের বিশ্বাসের বর্ধিত জীবনীশক্তির প্রমাণ দেয়। এছাড়াও আমরা বিশ্বব্যাপী পরিলক্ষিত কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির মূলে উদ্যোগের চেতনা জাগ্রত করতে প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট কর্তৃক ভূমিকার কথা স্বীকার করেছি- যা জীবনীশক্তির অনুভবযোগ্য অভিব্যক্তি।
৫। তখন থেকে ঘটনাবলীর সর্বশেষ পর্যায়সমূহ কোর্সগুলোর একটি ধারাবাহিকতার ফলপ্রসূতা আরও তুলে ধরার জন্যই কেবল কাজ করেছে যা পবিত্র লিখনাবলীর গভীর অধ্যয়নের মাধ্যমে লব্ধ আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টিসমূহ প্রয়োগের উপর পূর্ণ মনোযোগ দেয়ার দ্বারা সেবার সামর্থ্য তৈরী করতে চেষ্টা করে। অংশগ্রহণকারীগণ একটি জ্ঞান-ভাণ্ডারের সাথে পরিচিত হয় যা এক প্রস্থ প্রাসঙ্গিক সাধারণ আচরণ, মনোভাব এবং গুণাবলীসমূহের প্রতিপালন এবং সেবার কাজগুলো সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট দক্ষতাগুলো ও সামর্থ্যগুলো শাণিত করতে সাহায্য করে। একটি অধ্যয়ন চক্রের ঐকান্তিক ও প্রেরণাপূর্ণ আবহমন্ডলে সৃজনশীল শব্দ ঘিরে যে আলোচনাগুলো আবর্তিত হয় তা ধর্মের প্রতি ব্যক্তির কর্তব্যসমূহ সম্বন্ধে সচেতনতার মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং ধর্মের শিক্ষাদান ও ইহার স্বার্র্র্থসমূহের সেবাদান থেকে ব্যক্তি যে আনন্দ পায় সে সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করে। যে আধ্যাত্মিক পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট কাজগুলো সম্পাদিত হয় তা তাদেরকে গুরুত্ব সচেতন করে। বন্ধুগণ যখন ক্রমবর্ধিষ্ণুভাবে অধিকতর জটিল ও সেবার চাহিদাপূর্ণ কাজগুলোতে নিয়োজিত হয় তখন ধৈর্যের সাথে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। তবুও, সর্বোপরি, ইহা ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীলতা যা তাদের প্রচেষ্টাগুলোতে তাদেরকে টিকিয়ে রাখে। বিশ্বাসীদের হিসাবগুলো কত সমৃদ্ধ যারা সচকিত ভাব নিয়ে ক্ষেত্রে প্রবেশ করে কেবল তারা-ই নিজেদের সর্বদিক থেকে নিশ্চয়তা দ্বারা সমর্থিত দেখতে পাবে। নতুন চক্ষু নিয়ে তাদের সম্মুখের সম্ভাবনা ও সুযোগগুলো দেখে তারা যা শিখছে সেগুলোকে যখন তারা অনুশীলনে উদ্যমী হয় এবং তাদের ধারণার থেকে অনেক বেশী ফলগুলো অর্জন করে তখন সবার আগে তারা ঐশ্বরিক সাহায্যের ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করে। ঈশ্বরীয় বাণীর সাথে ঘনিষ্ট সংস্পর্শ থেকে ধর্মের যে চেতনা সৃষ্টি হয় আত্মাসমূহের উপর তার এমন একটি প্রভাব রয়েছে যা কোনভাবে-ই নতুন একটি ইন্দ্রিয়গোচর বিষয় নয়। যা উৎসাহব্যঞ্জক তা হচ্ছে ইনস্টিটিউট প্রক্রিয়া এত বৃহৎ সংখ্যাকে ধর্মের রূপান্তরকারী শক্তির অভিজ্ঞতা লাভ করতে সাহায্য করছে। আরও শত সহস্রের প্রতি এই মানসিক উন্নতিসাধনকারী প্রভাব প্রসারিত করা আগামী পাঁচ বছরে প্রগাঢ় প্রচেষ্টার লক্ষ্য হবে।
৬। সামর্থ্য গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব প্রদানের একটি বোধগম্য পরিণতি হচ্ছে ব্যক্তি উদ্যোগের অনুশীলনে একটি সুষম বৃদ্ধি-সেই উদ্যোগ যা দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে পদ্ধতিগত কাজের প্রয়োজনগুলো একটি বোধগম্যতার দ্বারা শৃঙ্খলাবদ্ধ। পরিকল্পনার দ্বারা নির্ধারিত কর্মকাঠামোয় জ্ঞানলাভের একটি বিনয়ী মনোভাবের মধ্যে প্রচেষ্টাগুলো চালিত হয়। ফলস্বরূপ, যে কর্মকাণ্ডগুলো প্রতিভাগুলোর বৈচিত্রকে একটি অভিব্যক্তি প্রদান করে তা একটি সম্মুখাভিমুখী কর্মচাঞ্চল্যে সমন্বিত হয়, এবং প্রচেষ্টা বিষয়ে ব্যক্তির অগ্রাধিকারের উপর বিরামহীন বিতর্কের দ্বারা সৃষ্ট স্থবিরতাকে এড়ানো যায়। যেকোন বিশেষ মূহুর্তে বিশ্বাসীগণের দ্বারা গৃহীত উদ্যোগগুলোর উপর নির্ভর করে দীর্ঘমেয়াদী কাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি হয়।
৭। শিক্ষাদান ক্ষেত্র ব্যতিত অন্য কোথাও ব্যক্তি উদ্যোগের বৃদ্ধি এত অধিকতর স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় নাই। হোক না তা ঘরোয়া আলোচনা বা অধ্যয়ন-চক্রের রূপে, ধর্মের শিক্ষাদান কাজে ব্যক্তির প্রচেষ্টাগুলো অবিসংবাদিতভাবে বর্ধনশীল। দক্ষতাগুলো ও পদ্ধতিসমূহ দ্বারা সজ্জিত হয়ে সকলের প্রতি কার্যকর ও অভিগম্য, এবং তাদের কাজের বহিঃপ্রকাশের সাড়াদান দ্বারা উৎসাহিত হয়ে বিশ্বাসীগণ অনেক শ্রেণী ও পেশার লোকদের সাথে ঘনিষ্ঠতর সম্পর্কে প্রবেশ করছে, নিজেদেরকে আধ্যাত্মিক গুরুত্বের প্রতিপাদ্যসমূহের উপর আন্তরিক আলোচনায় বিজড়িত করছে। বৃহত্তর থেকে বৃহত্তর আধ্যাত্মিক উপলব্ধি নিয়ে, তারা গ্রহণশীলতা এবং বাহা’উল্লাহর বাণীর প্রানবন্তকারী জলরাশির জন্য তৃষ্ণা শনাক্ত করতে সক্ষম। তারা যাদের সম্মুখীন হয় তাদের মধ্যে নিকটবর্তী এলাকার শিশুদের পিতা-মাতা, বিদ্যালয়ের সহপাঠীবৃন্দ, কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীগণ, আকস্মিক পরিচিতগণ-তারা সেই আত্মাগুলোকে খুঁজতে থাকে যাদের সাথে তারা ইহার একটি অংশ ভাগ করে নিতে পারে যা তিনি এত সদয়ভাবে মানবজাতিকে দান করছেন। বর্ধিত অভিজ্ঞতা অন্বেষণকারীগণের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের উপস্থাপন সঙ্গতিপূর্ণ করতে সমর্থ করে, সরাসরি শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রয়োগ যা বাণী প্রদানে পবিত্র লিখনাবলীর উপর এমনভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করে যা একই সময়ে বা সমসাময়িক ও আকর্ষণীয়।
৮। এ সম্বন্ধে সর্বাধিক লক্ষ্যনীয় হচ্ছে সেই সকল বিশ্বাসীদের দ্বারা প্রদর্শিত উদ্যোগের চেতনা যারা তাদের প্রচেষ্টাগুলো অন্যদের প্রতি প্রসারিত করা ছাড়াও সেবার একটি পথে চলতে কঠোরভাবে সচেষ্ট হতে সাহায্য করে। ইনস্টিটিউট কোর্সগুলোতে টিউটর হিসাবে সেবাদানের সামর্থ্য অর্জনের মাধ্যমে, তারা সেবার কাজে তাদের প্রাথমিক চেষ্টাগুলোয় অংশগ্রহণকারীদের সাথে যাওয়ার চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করে, যতক্ষণ না তারা তাদের নিজেদের অধ্যয়ন চক্রগুলো শুরু করার জন্য তৈরী হয় এবং অন্যদেরকে একই কাজ করতে সাহায্য করে, এভাবে ইনস্টিটিউটের প্রভাবের পরিসরকে প্রসারিত করে এবং আগ্রহী আত্মাগুলোকে ঈশ্বরীয় বাণীর সংস্পর্শে নিয়ে আসে। ইনস্টিটিউট এই বিশেষ দিক, যা আত্ম-বিরতীহীন পদ্ধতিতে ধর্মের স্বক্রীয় সমর্থকদের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি ঘটায় তা প্রচুর প্রতিশ্র“তিশীল, এবং আমরা আশা করি যে আগামী পরিকল্পনায় ইহার সম্ভাবনাগুলো বাস্তবায়িত হবে। ধর্মের প্রত্যেক শিক্ষকের প্রতি উলেখিত অভিভাবকের বাণীগুচ্ছ, “সে যেন সেই পর্যন্ত পরিতৃপ্ত না হয় যতক্ষন না সে তার আধ্যাত্মিক সন্তানের মধ্যে এত গভীর একটি আকাঙ্খা সঞ্চারিত করেছে যা তাকে তার নিজ কার্যকালে স্বাধীনভাবে উত্থিত হতে প্রণোদিত করে, এবং অপর আত্মাগুলোকে প্রাণবন্ত করতে এবং তার নব দীক্ষিত ধর্ম কর্তৃক প্রদত্ত বিধান ও নীতিমালাকে সমর্থন করতে তার শক্তিগুলো নিয়োজিত করে।”
সমাজ
৯। যে বর্ধিত প্রাণশক্তি ব্যক্তি বিশ্বাসীর জীবনকে বৈশিষ্টমন্ডিত করে তা বাহা’ই সমাজ জীবনে ও একইভাবে দৃশ্যমান। ইহা প্রাণশক্তির যে মাত্রা প্রকাশ করে তা অবশ্যই ক্লাষ্টারের উন্নয়নের স্তরের উপর নির্ভরশীল। বৃদ্ধির উন্নত স্তরের একটি ক্লাষ্টার, বন্ধুগণ যেখানে পরিকল্পনার অনুবিধিগুলোকে কাজে রূপ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে পূর্ববর্তী একটি স্তর থেকে আরও কি অর্জন করা যেতে পারে সে সম্বন্ধে বৃহত্তর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। অতএব, সমাজের অর্জনসমূহের বিশ্লেষণ করার সময় এগুলো হচ্ছে সেই সকল উন্নত ক্লাষ্টার যেগুলোর প্রতি আমাদিগকে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে, নিশ্চিত হতে হবে যে তারা যখন এগিয়ে যাবে তখন তাদের অভিজ্ঞতা অন্যদের দ্বারা ছাড়িয়ে যেতে চেষ্টা করা হবে।
১০। কয়েকটি উপলক্ষ্যে আমরা সামঞ্জস্যতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি যা অধ্যয়ন চক্রগুলো, প্রার্থনাসভাগুলো এবং শিশুদের ক্লাসগুলো স্থাপনের মাধ্যমে বৃদ্ধির প্রক্রিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত হয়ে মূল কর্মকাণ্ডগুলোর সংখ্যার সুষম বৃদ্ধি, প্রসারণ ও দৃঢ়করণের একটি ধারণযোগ্য উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করে যা একইসময়ে কাঠামোপ্রাপ্ত ও জৈবিক। অন্বেষণকারীগণ যখন এই সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দান করে, তখন ব্যক্তি ও সম্মিলিত শিক্ষাদান প্রচেষ্টাগুলো ভর ও বেগ একত্রিত করে। ইন্সটিটিউট প্রক্রিয়ায় নতুন বিশ্বাসীদের একাংশের তালিকাভূক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে ধর্মের কাজ সম্পাদনে মানবসম্পদের যে সমষ্টি প্রয়োজন তা স্ফীত হয়। একটি ক্লাষ্টারে যখন বিপুলভাবে প্রচেষ্টা চালানো হয়, তখন এই সকল কর্মকাণ্ডের সবগুলো ক্রমান্বয়ে একটি নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করার জন্য অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
১১। এই দ্বারপ্রন্তে ক্লাষ্টারগুলোর এত ঘনিষ্ঠ একটি নিরীক্ষা নিশ্চিত করে যে এভাবে অর্জিত সংযুক্ততা সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিকে বিস্তৃতি লাভ করে। অধ্যয়ন ও শিক্ষাবলীর প্রয়োগ একটি পরিব্যপ্তকারী অভ্যাসে পরিণত হয়, এবং প্রার্থনাসভাগুলোর দ্বারা উৎপাদিত একাত্ববোধক উপাসনার চেতনা সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাগুলোতে প্রবেশ করতে শুরু করে। বৈচিত্রময় কর্মকাণ্ডগুলোতে শিল্পকলার একটি শোভনীয় একাঙ্গীকরণ শক্তির উচ্ছাসকে বৃদ্ধি করে যা বিশ্বাসীগণকে দায়িত্বে নিয়োজিত করে। শিশু ও কিশোরদের আধ্যাতিক শিক্ষার জন্য ক্লাসগুলো স্থানীয় জনগণের মধ্যে ধর্ম-বিশ্বাসের শিকড়গুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এমন কি একজন নতুন বিশ্বাসীর বাড়ীতে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার মত একটি সহজসাধ্য সেবার কাজ- হোক না তা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি গ্রামে অথবা লন্ডনের মত একটি বিস্তৃত মহানগরী এলাকায়-বন্ধুত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে যা সমাজের সদস্যদের একত্রে গ্রথিত করে। ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলোতে বিশ্বাসীগণকে পরিচিত করার একটি উপায় হিসাবে ধারণাকৃত, “গৃহ সাক্ষাৎ” জ্ঞানগভীর প্রচেষ্টাগুলোর একটি বিন্যাসে বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে- ব্যক্তি ও সমষ্টিগত উভয় ক্ষেত্রে- যেখানে বন্ধুগণ পবিত্র লিখনাবলীর মধ্যে অনুসন্ধান চালাচ্ছে এবং সেগুলোর নিহিতার্থগুলো তাদের জীবনের জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যাচাই পরীক্ষা করছে।
১২। এভাবে সমাজের আধ্যাত্মিক ভিত্তি সুরক্ষিত হওয়ায় সম্মিলিত ধর্মপ্রচারের স্তর উন্নীত হয়েছে, বন্ধুদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কগুলো একটি নতুন অর্থ পেয়েছে, এবং অভিন্ন উদ্দেশ্যের একটি অনুভূতি তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলোকে অনুপ্রমাণিত করছে। অতঃপর, এটা তেমন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, আন্তজার্তিক শিক্ষাদান কেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত একটি পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে যে জরিপকৃত প্রায় পঞ্চাশটি অগ্রবর্তী ক্লাষ্টারে উনিশ দিবসীয় ভোজানুষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন এসেছে। অন্যান্য প্রতিবেদনগুলো নির্দেশ করে যে অর্থভাণ্ডারের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং বস্তুগত উপায়সমূহের প্রয়োজনীয়তা আরও ভালোভাবে উপলব্ধি হওয়ার ফলে দান বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রয়োজন ও পরিকল্পনাগুলো আলোচনা করার জন্য ক্লাষ্টার পর্যায়ের প্রতিফলনসভাগুলো সর্ব-সাধারণের জন্য একটি সভাস্থলে পরিণত হচ্ছে, একটি সম্মিলিত পরিচিত সৃষ্টি করছে এবং সম্মিলিত ইচ্ছাকে শক্তিশালী করছে। যেখানে এইরূপ উন্নত ক্লাষ্টারগুলো সমূদ্ধি অর্জন করছে, সেখানে সেগুলোর প্রদর্শিত আঞ্চলিক অনুষ্ঠানগুলোকে সমূদ্ধ করতে তাদের নিজেদের সীমানার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, যেমন গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন শিক্ষা শিবিরগুলো।
১৩। ব্যক্তির ক্ষেত্রে, সমাজের উন্নয়নের এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট হচ্ছে জ্ঞান। আগামী বছরগুলোতে প্রতিটি প্রচেষ্টার উপর জোর দেওয়ার জন্য আপনাদের প্রতি ও আপনাদের অক্সিলারীদের প্রতি এটা নিশ্চত করতে আহ্বান করা যাচ্ছে যেন ক্লাষ্টারের পর ক্লাষ্টারে, সিন্ধান্ত গ্রহণের বস্ত্রটিতে জ্ঞানের বুনন থাকে।
১৪। আপনাদের প্রাথমিক উদ্বেগগুলোর একটি হবে পদ্ধতিগত কাজের জন্য উপলব্ধিকে শক্তিশালী করা, যা ইতিমধ্যে ইহার দ্বারা আনীত সাফল্যগুলো দ্বারা বর্ধিত হয়েছে। সম্ভাবনাগুলো ও সম্পদগুলোর একটি বাস্তবসম্মত নির্ণয়ের উপর ভিত্তি করে বৃদ্ধির একটি ঐক্যবদ্ধ দৃষ্টিপথে উপনীত হতে, ইহার কাঠামোতে সহায়ক এমন কর্ম-কৌশলগুলো গড়ে তুলতে, সামর্থ্যরে সাথে যথোপযুক্ত কর্ম-পরিকল্পনাগুলো উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করতে, ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয়সাধন করতে, অর্জিত সাফল্যগুলো বৃদ্ধি করতে-এইগুলো হচ্ছে পদ্ধতিগতকরণের কয়েকটি অপরিহার্য বিষয় যা প্রত্যেক সমাজকে অবশ্যই শিখতে ও অভ্যন্তরীণ করতে হবে।
১৫। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট কিছু বিষয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতি উন্মুক্ত করার আকাঙ্খা ও স্বেচ্ছাপ্রণোদনের একই নিদর্শন দ্বারা আচরণের একটি পদ্ধতি অঙ্গীভূত করতে হবে যা আত্মাগুলোকে আকর্ষণ করে এবং সেগুলোকে নিশ্চয়তা প্রদান করে। একটি সম্মিলিত পর্যায়ে বন্ধুদের দ্বারা চিন্তা ও কর্মের নতুন উপায়গুলো গ্রহণের ফলে এ ক্ষেত্রে অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে। সমাজটি বিপুল সংখ্যককে ইহার বাহুবন্ধনে স্বাগতঃ জানাতে আরও অনায়াসে জনগণের মধ্যে সুপ্ত সম্ভাবনা দেখতে এবং পূর্বধারণাগত অভিমতের উপর ভিত্তি করে তাদের জন্য কৃত্রিম বাধাগুলোর সৃষ্টি এড়াতে শিখছে। একটি প্রশিক্ষণদানকারী পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি অবাস্তব প্রত্যাশার চাপ ছাড়া-ই নিজ গতিতে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত হচ্ছে। এইরূপ উন্নয়নগুলোর অন্তঃস্থলে ধর্মটিকে উপলব্ধি করার ক্ষমতাসম্পন্নতা ও র্সাবজনীনতার নিহিতার্থগুলোর প্রতি একটি বর্ধিষ্ণু সচেতনতা বিদ্যমান রয়েছে। এই নীতির দ্বারা সম্মিলিত কাজগুলো অধিক থেকে অধিকতরভাবে পরিচালিত হচ্ছে যে বাহা’উল্লাহর বাণী মানবজাতির প্রতি উদার মনে ও শর্তহীনভাবে দিতে হবে। ধর্মের শিক্ষাগুলো নিয়ে গ্রহণশীল জনগোষ্ঠির নিকট পৌঁছার প্রচেষ্টাগুলো হচ্ছে সর্বাধিক সন্তোষ জনক। যেহেতু অবিশ্রান্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তিগুলো জনসমষ্টিকে তাদের স্বদেশ থেকে ছিন্নমূল করছে এবং মহাদেশগুলোর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে বিতাড়িত করছে, সমাজের প্রসারণ ও দৃঢ়করণের প্রতি একটি বৈচিত্রময় জাতি-গোষ্ঠির জন্য একটি অনমনীয় উপলব্ধি এবং সামগ্রিকতার উপর ইহা যে শক্তি প্রয়োগ করে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমানিত হবে।
১৬। সম্ভ্বতঃ যে কাজটি অন্য সবকিছুর উপরে আপনাদের এবং আপনাদের অক্সিলারীগণের মনোযোগ দখল করবে তা হচ্ছে সমাজকে ইহার প্রচেষ্টাগুলোয় মনোনিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করা। এই সামর্থ্য, আনুক্রমিক পরিকল্পনাগুলোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে অর্জিত হয়। ইহা মহামূল্যবান সম্পদগুলোর একটিকে প্রতিনিধিত্ব করে, ইহা নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে কষ্টার্জিত, ইহা অঙ্গীকার ও দূরদর্শীতা কারণ বন্ধুগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলো দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার একমাত্র লক্ষ্যের পশ্চাদ্ধাবন করতে শিখেছে। অপরদিকে আপনারা মনোনিবেশকে সমরূপতা বা বিশিষ্টতা দ্বারা বিভ্রান্ত করার প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখতে পাবেন। মনোনিবেশ বজায় রাখা, বিশেষ প্রয়োজনগুলো ও স্বার্থগুলো অগ্রাহ্য করার ইঙ্গিত দেয় না, বরং এর চেয়ে বেশ কম অত্যাবশ্যকীয় কর্মকাণ্ডগুলো বাদ দেয়া হয় যেন অন্য গুলোর জন্য স্থান করে দেওয়া যায়। স্পষ্টভাবে, এখানে উপাদানগুলোর একটি অগণিত সংখ্যা রয়েছে যা নিয়ে বাহা’ই সমাজ জীবন গঠিত, বহু দশক ব্যাপী আকৃতি পেয়েছে, যা অবশ্যই আরও পরিশোধিত ও উন্নত করতে হবে। অপরদিকে, আপনারা অগ্রগণ্যতার বিন্যাসকে সুদৃঢ় করার সকল সুযোগ নিতে চাইবেন-সেই ব্যক্তি যে বুঝতে পারে যে বৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে সবগুলো কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব এক নয়, সর্বাধিক ভালো উদ্দেশ্যের প্রস্তাবগুলে বিভ্রান্তিকর হতে পারে, শক্তি অপচয় বা অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ করতে পারে। স্পষ্টভাবে যা স্বীকার করতে হবে তা হচ্ছে, প্রত্যেক সমাজের ধর্মের সেবার জন্য যে সময় বিদ্যমান তা সীমাহীন নয়। এটা প্রত্যাশা করা কেবল স্বাবিক যে এই সীমিত সম্পদের প্রাধান্যপ্রাপ্ত অংশ পরিকল্পনার শর্তাবলী পূরণ করতে ব্যয় করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানগুলো
১৭। পরিকল্পনার তৃতীয় অংশগ্রহনকারী- ধর্মের প্রতিষ্টানগুলোর দিক-নিদের্শনা, উৎসাহদান ও সমর্থন ব্যতিত ব্যক্তি বা সমাজের অর্জনগুলোর কোনটিই টেকসই হতে পারে না। ব্যক্তি উদ্যোগের উন্নয়নে, শিক্ষাদান ক্ষেত্রে শক্তিগুলোকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে, পদ্ধতিগত কাজের মূল্যের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করতে এবং একটি অভ্যর্থনাকারী পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তা দেখে আমরা মুগ্ধ। সেগুলো পরিকল্পনার লক্ষ্যের উপর মনোনিবেশ বজায় রাখতে সমাজকে সাহায্য করা, বন্ধুদের মধ্যে দূরদৃষ্টির ঐক্য বজায় রাখা বলতে বাস্তবার্থে কি বোঝায় তাদের প্রচেষ্টাগুলোকে সহজতর করতে, কর্মকৌশলগুলোকে যথাস্থানে রাখতে, বিজ্ঞভাবে বিন্যাস্ত অগ্রাধিকারভিক্তিক কাজগুলোকে সম্পদ অনুসারে বন্টন করতে শিখছে। এই অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অবশ্যই কর্মকাণ্ডের ঐ অংশগুলোকে যুক্ত করে যেগুলোতে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের প্রয়োজন রয়েছে। এই শ্রেণীর মধ্যে বিশেষভাবে উলেখযোগ্য হচ্ছে বহিঃসম্পর্ক বিষয়ক কাজ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগুলো-যা জাতীয় পরিষদগুলো অধ্যাবসায়ের সাথে করে যাচ্ছে- উদাহরণস্বরূপ, যেগুলো বাহা’ই-অনুপ্রাণীত প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। যখন এই ধরণের প্রযোজনগুলোর প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়, তখন প্রতিষ্ঠানগুলো পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় করণীয়গুলো নির্বাহনের প্রতি বিশ্বাসীদের অধিকাংশের দ্বারা প্রদর্শিত প্রচেষ্টার সম্মুখ অভিমুখী গতিবেগ পরিচালনায় বর্ধিতভাবে নিজেদেরকে সক্ষম দেখতে পায়।
১৮। এ ছাড়াও, ক্লাষ্টার পর্যায়ে বৃহৎ মাত্রার বৃদ্ধির দ্বারা আনীত প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি সারা দিতে উপদেষ্টাগণের সহযোগিতা নিয়ে, জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলো কর্তৃক গৃহীত দৃঢ়সংকল্প পদক্ষেপগুলো উৎসাহব্যঞ্জক। মূল পাঠ্যক্রমের কোর্সগুলো ছাড়াও শিশু ও কিশোরদের জন্য কার্যক্রমগুলোর প্রয়োগ সমন্বয়ের যে সকল বিন্যাস দৃশ্যমান হচ্ছে তা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট কর্তৃক প্রদত্ত এক বা একাধিক ব্যক্তিকে আহ্বান করার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে।্ এ ছাড়া আঞ্চলিক কাউন্সিল বা স্বযং জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ কর্তৃক নিয়োজিত একটি এরিয়া টিচিং কমিটিকে গতিশীল প্রসারণ ও দৃঢ়করণ অর্জনের জন্য পদ্ধতিগত প্রচেষ্টার অন্যান্য দিকগুলো প্রয়োগ করার প্রয়োজন রয়েছে। বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে বৈশিষ্টমণ্ডিত করতে যে দুইটি কর্মচাঞ্চল্য এসেছে সেগুলোর অব্যাহত এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে সাহার্যকারী বোর্ডের সদস্যগণ উভয় ক্ষেত্রে কাজ করবে। যখন ক্লাষ্টারের পর ক্লাষ্টারে এই সকল বৈচিত্রময় উপাদানগুলো প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, প্রতিটি কাজ সম্পাদনের জন্য এবং সেগুলোর পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কগুলো সম্বন্ধে জানতে এখনো অনেক কিছু শেখার রয়েছে। এখানে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, নমনীয়তার বর্তমান মাত্রা যেখানে প্রয়োজন অনুসারে নতুন কার্যসহায়কগুলো সৃষ্টি করতে দিচ্ছে, সেখানে কোন প্রকার আপোষ করা যাবে না যেন সমন্বয়ের পকিল্পনাটি বৃদ্ধির নিজস্ব চাহিদার প্রতি একটি সাড়া প্রদান করে। শেখার এই প্রক্রিয়াকে দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য আমরা আপনাদের ও জাতীয় পরিষদগুলোর উপর নির্ভর করছি।
১৯। সমগ্র পরিকল্পনায় আমরা স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলোর কার্যক্রমে এই সকল উন্নয়নের প্রভাবগুলো গভীরতম আগ্রহ সহকারে প্রত্যক্ষ করেছি। এটা উলেখ করতে পেরে আমরা আনন্দিত যে এ সম্বন্ধে দুই প্রকারের অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে। ঐ সকল ক্লাষ্টারে যেখানে অধিকাংশ স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ চরমভাবে দুর্বল ছিল, সেখানকার একটি বর্ধিষ্ণু সংখ্যা তাদের আওতাধীন এলাকাগুলোতে পরিকল্পনার নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডগুলোয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে শেখার ফলে ক্রমান্বয়ে তাদের দায়িত্বগুলো গ্রহণ করছে। একই সময়ে, দীর্ঘকালস্থায়ী স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলো পদ্ধতিগত বৃদ্ধির একটি দূরদৃষ্টির সংলগ্ন হওয়ায় বর্ধিত শক্তির চিহ্নগুলো প্রদর্শন করছেন এটা, প্রায়-ই একটি খাপ-খাওয়ানোর সময়কে অনুসরণ করে যখন এগুলোর কয়েকটি ক্লাষ্টার পর্যায়ে সৃষ্ট নতুন বাস্তবতাগুলো অনুধাবনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। যা আমাদের জন্য বিশেষ আনন্দ নিয়ে এসেছে তা হচ্ছে এটা দেখতে পাওয়া যে বিশ্বের সর্বত্র বৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া উন্মোচিত হচ্ছে তা নগর কেন্দ্রগুলোর মতই পলী এলাকাগুলোতেও ভর ও বেগ একত্রিত করছে। বর্তমান পরিকল্পনার শুরুতে অনেকগুলো বৃহৎ নগরীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, আর তা ছিল সেগুলোকে সেক্টরে ভাগ করা। যা ধারণযোগ্য বৃদ্ধির পরিকল্পনায় অত্যন্ত গুরুত্ব¡পূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে। তথাপি, যেভাবে সমাজগুলো প্রসারিত হচ্ছে, এটা প্রত্যাশা করা অযৌক্তিক নয় যে নগরগুলোকে ক্ষুদ্রতর এলাকায় বিভক্ত করার প্রয়োজন হবে-যাদের প্রত্যেকটিতে উনিশ দিবসীয় ভোজানুষ্ঠান আয়োজিত হবে। ভবিষ্যতে সমাজগুলোর সম্ভাব্য আকারের একটি দূরদৃষ্টি বজায় রাখতে স্থানীয় পরিষদগুলোর আরও উন্নয়ন অত্যাবশ্যক। সমাজগুলোর বিষয়াদির পরিচালনা করতে, যাদের সদস্যতা কয়েক হাজারে স্ফীত হবে, এবং “মানবের মধ্যে করুণাময়ের বিশ্বস্ত জনমন্ডলী” হিসাবে তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে, যারা আধ্যাত্মিক পরিষদগুলোতে সেবাদান করে তারা আগামী বছরগুলোতে অবশ্যম্ভাবীরূপে শেখার প্রগাঢ় সময়গুলোর মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে। আসন্ন পরিকল্পনার সময়ে আমরা আধ্যাত্মিক পরিষদগুলোর উন্নয়ন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণের ইচ্ছা পোষণ করি এবং বাহা’ই জনসংখ্যার আকার ও একটি এলাকার অন্যান্য পরিস্থিতিগুলোর চাহিদা অনুসারে, অভিভাবকের কার্যকালে তেহরানে গড়া পদ্ধতির অনুকরণে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে একটি দুই-স্তর বিশিষ্ট নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অধিকার দিতে হবে।
নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রমসমূহ
২০। একটি ক্লাষ্টারে ইনষ্টিটিউট প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে ব্যক্তি, সমাজ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে নেয়া নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা, একইসময়ে সু-প্রমাণিত উপায়গুলোর মাধ্যমে উন্নয়নের এক স্তর থেকে অপরটিতে ইহার বিচলনে অবদান, ইহাকে একটি নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রম আরম্ভের শীর্ষবিন্দুতে নিয়ে যায়। বস্তুত, বর্তমান পরিকল্পনাব্যাপী প্রায় দুইশত ক্লাষ্টারে জ্ঞানার্জনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিগুলো এইরূপ কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাগুলো থেকে এসেছে। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, এখন এই জ্ঞান পদ্ধতিগতভাবে প্রতিটি মহাদেশে বিস্তার করা যেতে পারে, এবং রিজওয়ান ২০০৬ এ পরবর্তী পরিকল্পনাকালে কমপক্ষে ১৫০০ ক্লাষ্টারে বৃদ্ধির নিবিড় কার্যক্রমসমূহ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বিশ্বের বাহা’ইদের প্রতি আহ্বান করব।
২১। সম্প্রতিকালে যেরূপ ধারণা করা গেছে, একটি নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রম হচ্ছে সহজবোধ্য, সরল ও কার্যকর, কিন্তু প্রচেষ্টার একটি স্তরের ইঙ্গিত দেয় যা বন্ধুগণের দৃঢ়সংকল্পের পরীক্ষা নিয়ে থাকে। দূরদৃষ্টির প্রতি সু-সঙ্গতি রেখে পাঁচ বছর পূর্বে আমরা যা উপস্থাপন করেছিলাম, ইহা কয়েকটি পদক্ষেপের সূচনা করে যা বৃহৎ মাত্রার প্রসারণ ও দৃঢ়করণের জন্য অপরিহার্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এতে কর্মকান্ডের কালচক্রগুলো রয়েছে, সাধারণভাবে প্রতিটির মেয়াদ তিনমাস, যা প্রসারণ, দৃঢ়করণ, প্রতিফলন এবং পরিকল্পনা গ্রহণের স্বতন্ত্র পর্যায়গুলো অনুসারে এগিয়ে যায়।
২২। প্রসারণ পর্যায়, সচরাচর দুই সপ্তাহকাল ব্যাপী, যা সর্বোচ্চ স্তরের নিবিড়তা দাবী করে। ইহার লক্ষ্য হচ্ছে তাদের চক্রটিকে প্রশস্ত করা যারা ধর্মের প্রতি আগ্রহী, গ্রহণশীল আত্মাগুলোকে খুঁজে পাওয়া এবং তাদেরকে শিক্ষাদান করা। যদিও এই পর্যায়, ঘোষণার কিছু উপাদানকে যুক্ত করতে পারে, ইহাকে এই উদ্দেশ্যের জন্য কয়েকটি অনুষ্ঠান করার বা একপ্রস্থ কর্মকাণ্ড হাতে নেয়ার সময় হিসাবে দেখা যাবে না, যা নিছক তথ্য জ্ঞাপন করে। অভিজ্ঞতা পরামর্শ দেয় যে ইনস্টিটিউটের কোর্সগুলোর অধ্যয়ন থেকে অর্জিত সামর্থ্যরে সাথে শিক্ষাদান প্রচেষ্টাগুলো যত অধিক ঘনিষ্ঠ এবং পদ্ধতিগুলো যত অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ, ফলসমূহ তত অধিক পুরস্কারযোগ্য।
২৩। এই পযায়ের জন্য গৃহীত পরিকল্পনাগুলো সচরাচর শিক্ষাদান দলগুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে ব্যতিক্রমহীনভাবে সযতেœ, পরিকল্পিত শিক্ষা প্রকল্পগুলো ও গৃহ-সাক্ষাৎগুলো ও ঘরোয়া আলোচনাগুলোকে সম্পৃক্ত করে। তা সত্বেও, প্রসারণের যে আদর্শ বেরিয়ে এসেছে তা ক্লাষ্টার থেকে ক্লাষ্টারে পার্থক্যপূর্ণ। যেখানে জনসমষ্টি ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মের প্রতি একটি উচ্চ মাত্রার গ্রহণশীলতা প্রদর্শন করেছে, সেখানে নতুন বিশ্বাসীদের একটি দ্রুত আগমন প্রত্যাশা করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, এই ধরণের একটি ক্লাষ্টারে একটি এলাকার জন্য তিন সপ্তাহ সময়ের মধ্যে পঞ্চাশটি আত্মাকে তালিকাভুক্ত করার লক্ষ্যটি দ্বিতীয় দিনে ছাড়িয়ে যায়, এবং দলটি বিজ্ঞতার সাথে দৃঢ়করণের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকাণ্ডের কথা বিবেচনা করে প্রসারণ পর্যায়ের সমাপ্তির সিন্ধান্ত নেয়। এই পরবর্তী পর্যায়ের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে নতুন বিশ্বাসীদের একটি সংখ্যাকে ইনস্টিটিউট প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা যেন ভবিষ্যৎ চক্রগুলোতে বৃদ্ধিকে টেকসই করতে মানব সম্পদগুলোর একটি পর্যাপ্ত সমষ্টি পাওয়া যেতে পারে। যারা অধ্যয়ন চক্রগুলোতে অংশগ্রহণ করে না তারা গৃহ-সাক্ষাতের একটি ধারাবাহিকতার দ্বারা প্রশিক্ষণ লাভ করে, এবং সকলে প্রার্থনাসভাগুলোতে, উনিশ দিবসীয় ভোজানুষ্ঠান উদ্যাপনের জন্য এবং পবিত্র দিবসগুলো পালনের জন্য নিমন্ত্রিত হয় এবং ধীরে ধীরে সমাজ জীবনের আদর্শের সাথে পরিচিত হয়। প্রায় ক্ষেত্রে, দৃঢ়করণ পর্যায় আরও তালিকাভূক্তিতে বৃদ্ধি ঘটায় যখন নতুন ঘোষণাদানকারীদের পরিবারের সদস্যগণ ও বন্ধুগণ ধর্ম গ্রহণ করে।
২৪। অন্য ক্লাষ্টারগুলোতে, প্রসারণ পর্যায়ে তালিকাভূক্তি অধিক না-ও হতে পারে, বিশেষ করে প্রথম কয়েকটি কালচক্রে, এবং লক্ষ্য হচ্ছে যারা মূল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে আগ্রহী তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। অতঃপর, তা দৃঢ়করণ পর্যায়ের প্রকৃতি নির্ধারণ করে, যা অনেকাংশে অন্বেষণকারীদের আগ্রহ ধরে রাখা এবং ধর্ম-বিশ্বাসে সুদৃঢ় হওয়া পর্যন্ত তাদের আধ্যাত্মিক অন্বেষণে তাদের সঙ্গে থাকাকে সম্পৃক্ত করে। সেই পর্যন্ত এই পদক্ষেপগুলো প্রবলভাবে অনুসরণ করতে হবে যেন এই পর্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যার তালিকাভূক্তি ঘটাতে পারে। তা সত্তে¡ও, লক্ষ্য করতে হবে যে যেহেতু জ্ঞানার্জন এগিয়ে যাচ্ছে এবং অভিজ্ঞতা অর্জিত হচ্ছে, কেবল গ্রহণশীল আত্মাগুলোকে শিক্ষাদানের সামর্থ্য-ই নয়, বরং অধিকতর গ্রহণশীলতার সাধারণ জনগণের অংশগুলো চিহ্নিত করার সামর্থ্য যেন বিকশিত করে, এবং এক কালচক্র থেকে অপর কালচক্রে নতুন বিশ্বাসীদের সামগ্রীকতা বৃদ্ধি করে।
২৫। ক্লাষ্টারের প্রকৃতি যা-ই হোক, সর্বত্র শিশু ও কিশোরদের প্রতি ঘনিষ্ঠ মনোযোগ দেয়া অপরিহার্য। অল্পবয়েসীদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার জন্য উদ্বেগ স্বয়ং মানবজাতির চেতনায় প্রবলভাবে দাবী তুলছে, এবং সমাজ গঠনের কোন প্রচেষ্টা হতে পারে না যা ইহাকে উপেক্ষা করতে পারে। পাঁচসালা পরিকল্পনার সময়ে যা বিশেষভাবে স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয়েছে তা হচ্ছে কিশোরদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমগুলোর ফলপ্রসুতা। যখন তিন বছরের জন্য একটি কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের সাথে এগিয়ে যাওয়া হলো যা তাদের আধ্যাত্মিক উপলব্ধির ক্ষমতা বৃদ্ধি করল, এবং পনেরো বছর বয়সে ইনস্টিটিউট কোর্সগুলোর প্রধান ধারাবাহিকতায় প্রবেশের জন্য উৎসাহিত হলো, তখন তারা শক্তি ও প্রতিভার একটি বিশাল আধারের প্রতীকে পরিণত হলো যা আধ্যাত্মিক ও পার্থিব সভ্যতার অগ্রগতিতে নিবেদিত হতে পারে। ইতিমধ্যে অর্জিত ফলাফল থেকে আমরা এতই প্রভাবিত, এবং প্রয়োজনটি এতই বাধ্যকারী যে আমরা সকল জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের প্রতি তাদের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কর্তৃক বাস্তবায়িত কার্যক্রমগুলোর মাধ্যমে গঠিত কিশোর দলগুলোকে ইহার অধিকার বলে একটি চতুর্থ মূল কর্মকাণ্ড হিসাবে বিবেচনা করার এবং ইহার-বহু-মাত্রিক উন্নয়নে সাহায্য করার আহ্বান জানাবো।
২৬। একটি নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রমের অগ্রগতির চাবিকাঠি হচ্ছে প্রতিফলনের প্রতি নিবেদিত পর্যায়, এতে কাজ থেকে শেখা জ্ঞানসমূহ স্পষ্টতা লাভ করে এবং পরবর্তী কর্মকাণ্ডের কালচক্রের জন্য পরিকল্পনাগুলোতে সংযুক্ত হয়। ইহার প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রতিফলন সভা-যেমন আনন্দময় উদ্যাপন তেমনি ঐকান্তিক পরামর্শের একটি সময়। অভিজ্ঞতার সযতœ বিশ্লেষণ, অতিশয় জটিলতা ও বি¯তৃত বক্তৃতা স্থলে অংশগ্রহণমূলক আলোচনাসমূহ দূরদৃষ্টির একতা বজায় রাখতে, চিন্তার স্বচ্ছতা তীক্ষè করতে এবং প্রবল উৎসাহ বর্ধিত করতে কাজ করে। এইরূপ একটি বিশ্লেষণের কেন্দ্রে হচ্ছে অপরিহার্য পরিসংখ্যান যা পরবর্তী প্রস্থের যে লক্ষ্যগুলো গ্রহণ করতে হবে তার প্রস্তাবনা প্রদান করে। যে সকল পরিকল্পনা করা হয়, সেগুলোতে একদিকে কালচক্রের সমাপ্তিতে বিভিন্ন করণীয় সম্পাদনের জন্য মানবস¤পদ আকারে প্রাপ্তিযোগ্য বর্ধিত সামর্থ্য এবং অপরদিকে, জনগণের গ্রহণশীলতার সম্বন্ধে পুঞ্জিভুত জ্ঞান ও শিক্ষাদানের গতিময়তার বিষয়গুলো বিবেচনাধীন রাখতে হবে। যখন এক কালচক্র থেকে অপর কালচক্রের মানবসম্পদ সার্বিক বাহা’ই জনসংখ্যার উর্ধগতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বৃদ্ধি পায়, তখন ইহাকে শুধু টেকসই করাই নয় বরং বৃদ্ধি বেগবান করা সম্ভব হয়।
২৭। এইরূপ ১৫০০ নিবিড় কার্যক্রমগুলোর উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জন করতে, বাহা’ই বিশ্বকে বিগত দশ বছরে গড়ে তোলা সামর্থ্য ও অর্জিত অভিজ্ঞতার উপর সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করতে হবে। পবিত্র ভূমি থেকে আপনাদের বহির্গমনের পর, আপনাদিগকে জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলো ও আঞ্চলিক কাউন্সিলগুলোর সাথে বিস্তারিত আলোচনায় লিপ্ত হতে হবে এবং সম্মিলিতভাবে প্রত্যেক জাতীয় সমাজের অবস্থাগুলো নির্ণয় করতে হবে যেন সেই সকল ক্লাষ্টার চিহ্নিত করা যায় যেগুলো কেন্দ্রীভূত মনোযোগ লাভ করবে এবং কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য ভাগ করে বন্টন করা যেতে পারে।
২৮। রিজওয়ান ২০০৬ এর পর যত শীঘ্র সম্ভব এই সকল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। ক্লাষ্টারগুলোকে এক স্তর থেকে পরবর্তীটিতে এগিয়ে নেয়ার অভিজ্ঞতা বর্তমানে এতই বহুবি¯তৃত যে পদ্ধতিগুলো ও সহায়তাকারী যন্ত্রপাতিগুলো সহজে বোধগম্য। ইনস্টিটিউট প্রক্রিয়াকে অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে যেন একটি বেশ বড় সংখ্যক বন্ধুগণ কোর্সগুলোর প্রধান ধারাবাহিকতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারে। নিবিড় ইনস্টিটিউট অভিযানসমূহ, যা অনুশীলন অংশগুলোর উপর পর্যাপ্ত মনোযোগ প্রদান করা এ ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক হবে। মূল কর্মকাণ্ডগুলোর সংখ্যা দ্রুত বহুগুণ বৃদ্ধি করতে হবে, এবং বৃহত্তর সমাজের নিকট পৌঁছানো পদ্ধতিগতভাবে বাড়িয়ে দিতে হবে। অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে, চিন্তার একতা বজায় রাখতে এবং বন্ধুদের শক্তিসমূহ কাজে লাগাতে নিয়মিতভাবে প্রতিফলন সভাগুলো করতে হবে। এবং পরিস্থিতিসমূহের চাহিদা অনুযায়ী ধীরে ধীরে বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালু করার পরিকল্পনাগুলো স্থাপন করতে হবে। যদিও বৃদ্ধি টেকসই করতে ক্লাষ্টার পর্যায়ের সামর্থ্য আগামী বছরগুলোতে সর্বাধিক বাধ্যকরী উদ্বেগ হিসাবে বিদ্যমান থাকবে, আঞ্চলিক ও জাতীয় কাঠামোগুলোর তথ্য প্রবাহ সহজতর করার এবং কর্মক্ষেত্রে ইতস্ততঃ সম্পদসমূহের চলমান উন্নয়ন উপেক্ষা করা যায় না।
২৯। পথিকৃৎগণের একটি বৃহৎ সংখ্যকের অভ্যন্তরমুখী প্রবাহের মাধ্যমে একটি ক্লাষ্টারের প্রতি প্রদত্ত সহযোগীতা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ঐশ্বরিক আহ্বানের প্রতি একটি সাড়াদান হিসাবে ব্যক্তি বিশ্বাসীর হৃদয়ের গভীর থেকে স্বাভাবিকভাবে পথিকৃতের আকাঙ্খা জাগ্রত হয়। যে কেহ ধর্মের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তার নিজ গৃহ পরিত্যাগ করে সে (নারী বা পুরুষ) ঐ সকল মহান আত্মাগুলোর সারিতে যোগদান করে যাদের অর্জনসমূহ বহু দশক হতে বাহা’ই পথিকৃৎদের ঘটনা-পুঞ্জীকে উজ্জ্বল করেছে। আমরা এই আশা করছি যে পরবর্তী পরিকল্পনার সময়ে অনেকে এই প্রশংসনীয় সেবা প্রদানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, হতে পারে তা স্বদেশীয় অথবা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেÑএমন একটি কাজ যা, স্বয়ং, অপরিমিত আশীর্বাদ আকর্ষণ করে। অপরদিকে, এটা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিচক্ষণ বিবেচনা প্রক্রিয়ার অনুশীলন করতে হবে যেন এইরূপ বন্ধুগণ কৌশলগতভাবে স্থলাভিষিক্ত হন। ঐ সকল ক্লাষ্টারে যেগুলো পদ্ধতিগত মনোযোগের কেন্দ্র হতে পারে সেখানে বেগবান বৃদ্ধির পথ প্রস্তুত করার জন্য প্রচেষ্টাগুলোকে জোরদার করার অথবা চলমান কর্মকাণ্ডের কালচক্রগুলোকে স্থিতিশীল করার একটি উপায় হিসাবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পথিকৃৎগণের বসবাসের অগ্রগণ্যতা দিতে হবে। এটা অনুমান করা অযৌক্তিক নয় যে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা গড়ে তোলার একটি মিলিত প্রচেষ্টা অবশেষে এইরূপ ক্লাষ্টারগুলো থেকে ঐ সকল এলাকার জন্য পথিকৃৎদের বহির্গমন এনে দিবে যেগুলো ভবিষ্যৎ বিজয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ার জন্য নির্ধারিত।
৩০। প্রিয় বন্ধুগণ: আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোতে এবং পরিকল্পনা চলাকালীন সময়ে, আপনারা এবং আপনাদের সহকারীগণ বিশ্বাসীদের প্রতি উৎসাহের একটি অব্যাহত উৎস হবেন, এ সময়ে তারা তাদের প্রতি উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জটির উদ্দেশ্যে উত্থিত হবে। আমরা আপনাদের নিকট আহ্বান করছি যে তাদের পথে অনিবার্যভাবে আসা প্রতিবন্ধকতাগুলো উত্তরণে তাদের সামর্থ্যরে উপর আমাদের আস্থার কথা জানিয়ে দেয়ার প্রতিটি সুযোগ আপনারা গ্রহণ করবেন। বিগত দশকে বাহা’উল্লাহর অব্যাহত করুণার মাধ্যমে তারা যা কিছু অর্জন করেছে তার ব্যপ্তি শনাক্ত করতে তারা যেন ব্যর্থ না হয়। প্রথম চার বছরে তারা বিশ্বাসীদের বর্ধিষ্ণু দলগুলোর সাথে আধ্যাত্মিক শিক্ষা ভাগ করে নিতে গ্রহের সর্বত্র প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য সৃষ্টি করেছে। এটা অর্জন করতে গিয়ে, তারা শিক্ষার একটি কঠোর প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয় যা তাদের চোখের সম্মুখে বিশাল অথচ অর্জনযোগ্য সম্ভাবনাগুলোর দৃশ্য-পরম্পরা উন্মোচন করেছে। বিগত পাঁচ বছরে বাহা’ই বিশ্ব প্রার্থনা সভাগুলোর সংখ্যা ছয়গুণ বৃদ্ধি করতে সফল হয়েছে, এছাড়া একই সময়ে শিশু ও কিশোরদের ক্লাসগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণেরও অধিক, বিশ্বব্যাপী অধ্যয়ন চক্রের সংখ্যা এগারো হাজার ছাড়িয়ে গেছে-এইগুলো অসাধারণ শক্তিমত্তার একটি মূল্যায়ন প্রদান করে, তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব বহন করতে বিশ্বাসীগণ ইহাতে নির্ভর করতে পারে।
৩১। সর্বোপরি, বন্ধুগণকে তাদের অধিকারে যে আধ্যাত্মিক শক্তিগুলো রয়েছে উহার বিশালত্ব স¤বন্ধে চির সচেতন থাকা প্রয়োজন। তারা একটি সমাজের সদস্য “যার বিশ্ব-আবেষ্টনকারী, অব্যাহতভাবে একত্রীকরণ কর্মকাণ্ডসমূহ এমন এক বিশ্বে একটি সংহতকরণ প্রক্রিয়া গঠণ করে যার প্রতিষ্ঠানগুলো- ধর্ম-নিরপেক্ষ ও ধর্মীয়-অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিলুপ্ত হচ্ছে”। বিশ্বের সকল জনমণ্ডলীর মধ্যে,“তারাই কেবল বুঝতে পারে যে একটি ঝঞ্ঝাক্ষুদ্ধ যুগের অর্থহীন সংঘাতের মধ্যে, স্বগীয় ত্রানকর্তার হাত রয়েছে যা ইহার গতিপথের রূপরেখা অঙ্কণ করে এবং ইহার নিয়তিগুলোকে নিয়ন্ত্রন করে। তারা-ই কেবল সেই সুশৃঙ্খল বিশ্ব রাষ্ট্র-ব্যবস্থার নিরব প্রসার সম্বন্ধে সচেতন রয়েছে যার বস্ত্র তারা নিজেরা বুনছে।” এগুলো তাদের প্রতিষ্ঠান যা “বিগুদ্ধতার ছাপ ও যুগের গৌরব রূপে গণ্য হবে” প্রতিষ্ঠা করতে তাদের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে। যে “নির্মাণ প্রক্রিয়া”র প্রতি তারা উৎসর্গিত, তা একটি রুগ্ন সমাজের আশা। কারণ,“ইহা ঈশ্বরের অপরিবর্তনীয় উদ্দেশ্যের ফলপ্রসূ প্রভাব দ্বারা প্রবর্তি, এবং তাঁর ধর্মের প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে বিকশিত হচ্ছে।” এবং তাদেকে স্মরণ করিয়ে দিন যে, তারা হচ্ছে সেই সকল উজ্জ্বল আত্মা যারা আব্দুল-বাহা কর্তৃক প্রার্থনায় তাঁর মনশ্চক্ষে এসেছিল: “তাহারা বীর , হে আমার পরম প্রভূ, যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাহাদিগকে পরিচালনা করো। তাহারা পথ-প্রদর্শনকারী, যুক্তি ও প্রমাণসমূহের সহিত তাহাদের সহজবোধ্যভাবে বলিতে দাও। তাহারা ধর্ম-কর্মে সাহায্যকারী সেবক, তাহাদিগকে সেই পেয়ালার চতুর্দিকে ভ্রমণ করিতে দাও যাহা নিশ্চয়তার মদিরা দ্বারা পরিপূর্ণ। হে আমার ঈশ্বর, তাহাদিগকে গায়ক-পাখী হইতে দাও যাহারা নিরপেক্ষতার উদ্যানসমূহে ভক্তিগীত গায়, তাহাদিগকে সিংহে পরিণত কর, যাহারা ঘন জঙ্গলে ওৎ পেতে থাকে, তিমি সকল, যাহারা বিশাল গভীরতায় ঝাঁপ দেয়।”
-সার্বজনীন বিচারালয়