সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়ের বার্তা,২৮ ডিসেম্বর-২০১০

সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়ের বার্তা,২৮ ডিসেম্বর-২০১০

সার্বজনীন বিচারালয়

২৮ ডিসেম্বর, ২০১০

মহাদেশীয় উপদেষ্টা বোর্ডসমূহের সম্মেলনের প্রতি,

১। প্রিয় বন্ধুগণ,

পনেরটি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে যখন এইরূপ একটি উপলক্ষ আমরা পবিত্রভূমিতে সমবেত উপদেষ্টাগণকে বাহা’ই সমাজের সম্প্রসারণ এবং দৃঢ়করণের দ্বৈত প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করার জন্য যে পথ বেছে নিতে হবে তার সম্পর্কে প্রথম অবগত করেছিলাম— এমন একটি পথ যা তাদের পুঞ্জিভূত অভিজ্ঞতা তাদের আত্মবিশ্বাসের সাথে অগ্রসর হতে প্রস্তুত করেছে।  দেড় শতকের এই সংক্ষিপ্ত সময়ে যে পথ পাড়ি দেওয়া হয়েছে তার উপর কোনো মন্তব্যের প্রয়োজন হয় না। (এই সময়ের) অর্জনসমূহই স্বয়ং তার কথা বলে। আজকে আমরা আপনাদেরকে সেই মহান উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা আরম্ভ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাবো যে উদ্যোগে বর্তমানে বাহা’ই বিশ্ব নিযুক্ত রয়েছে, এটি এমন একটি ধাপ যা রিজওয়ান ২০১১—২০১৬ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং উপর্যুপরি দুইটি পাঁচসালা পরিকল্পনার প্রথমটিকে নিয়ে গঠিত এবং যার সমাপ্তি ঘটবে ধর্মের সাংগঠনিক যুগের সূচনার শত বার্ষিকীর মাধ্যমে। আমরা আগামী দিনগুলিতে উপদেষ্টাগণ এবং তাদের সাহায্যকারীরা কিভাবে সমাজকে তাদের অসাধারণ অর্জনগুলিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা দান করতে পারেন তা নিয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা তৈরী করতে আহ্বান জানাচ্ছি— শেখার মনোভাবকে যা সমাজের শিক্ষাদান প্রচেষ্টগুলিকে প্রশ্নাতীতভাবে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে এবং অত্যন্ত কষ্টে অর্জিত সেই মাধ্যম এবং পদ্ধতিগুলোকে উচ্চ মাত্রায় সমন্বয় সাধন করেছে, তার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং যারা ধর্মের দৈব দৃষ্টি সম্পর্কে সচেতন এবং নিষ্ঠার সাথে ঈশ্বর প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তাদের সংখ্যায় পূর্বের যে কোনো সংখ্যার উর্ধ্বে বৃদ্ধি করতে হবে।

২। এই বছরের রিজওয়ান বার্তায় আমরা শেখার প্রক্রিয়ায় চলমান শক্তিগুলির কথা বলেছিলাম যা পরপর চারটি গ্রহব্যাপী পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্রমান্বয় গতি সঞ্চার করেছে এবং তৃণমূল পর্যায়ে নিজেকে সম্পৃক্ত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এই সুউচ্চ স্থান থেকে আমরা যা অবলোকন করি তা বাস্তবিকই বিস্ময়কর। বিশ্বব্যাপী ৩,৫০,০০০ আত্মা যারা ইন্স্টিটিউটের প্রথম কোর্স শেষ করেছেন, তাদের মাধ্যমে এমন একটি জীবরধারা যা ভক্তিমূলক চরিত্র দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত তা লক্ষণীয়ভাবে বাস্তবরূপ নিয়েছে। বৈচিত্রময় প্রেক্ষাপটে, প্রত্যকটি মহাদেশে বিশ্বাসীদের দলগুলি প্রার্থনায় একত্রীত হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি সানুনয় প্রার্থনায় তাদের হৃদয়গুলিকে ফিরাচ্ছে এবং সেই সকল আধ্যাত্মিক শক্তিগুলিকে সাহায্যের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে যার উপর তাদের ব্যপ্তি এবং সমষ্টিগত প্রচেষ্টাগুলির কার্যকারিতা নির্ভর করে। একটি পাঁচ বছর মেয়াদে বাহা’ই শিশুক্লাসের শিক্ষকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হওয়ার ফলে তাদের সংখ্যা প্রায় ১,৩০,০০০ এ উন্নীত হয়েছে, যার ফলে সমাজের পক্ষে বয়:কনিষ্ঠদের আধ্যাত্মিক আকাক্সক্ষার প্রতি আন্তরিক সাড়া দান সম্ভব হয়েছে, একই সময় জুনিয়র ইয়োথদেরকে তাদের জীবনের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় সহায়তাদানের সক্ষমতায় ছয়গুন বৃদ্ধি, সেই বয়স শ্রেণীর তাদের অঙ্গীকারের দৃঢ়তার  ইঙ্গিত বহন করে। উপরন্তু সর্বত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বন্ধুরা নিজেদেরকে বিভিন্ন পটভূমি থেকে আগত এবং বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী মানুষের সাথে কথোপকথনে অংশগ্রহণ করতে নিজেকে প্রস্তুত পাচ্ছে এবং সেই সকল ব্যক্তির সাথে সত্যের অনুসন্ধানে আলাপ, মানব ইতিহাসের বর্তমান পর্যায় যে সকল অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজনগুলি রয়েছে তার সম্পর্কে একটি অভিন্ন ধারণা এবং তার মোকাবেলা করার পথগুলি সৃষ্টি করে। তা ছাড়া গ্রহব্যাপী পদ্ধতিগতভাবে মূল কার্যক্রমের সংখ্যায় বহুগুন বৃদ্ধি যে ইন্ধন যোগাচ্ছে, যে কোন একটি সময়ে অর্ধেক মিলিয়নের মত এমন অংশগ্রহণকারী যাদের সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে জানা আছে এবং প্রায় ৭০,০০০ এর মত এমন বন্ধু যাদের সামর্থ্য রয়েছে অধ্যয়ণ চক্রের টিউটর হিসেবে সেবা দান করার।

৩। আমাদের রিজওয়ান বার্তায় যেরূপ স্পষ্ট করা হয়েছিল যে, মানবসম্পদ উন্নয়নের যে পদ্ধতি মহত্তম নামের অধিকারী সমাজে অসীম সম্ভাবনার অধিকারী একটি মাধ্যম। ব্যাপক বৈচিত্রময় অবস্থায়, কার্যত যে কোনো ক্লাস্টারে ব্যক্তি দলের একটি ক্রমবর্ধমান মূল দলের জন্য এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে মানুষকে পরিচালিত করা সম্ভব হয়েছে। এক দশক পূর্বে যখন আমরা ক্লস্টারের ধারণা প্রবর্তন করেছিলাম, যার লক্ষ্য ছিল ধর্মের প্রসারের ধারণাকে সহজবোধ্য করার জন্য একটি ভৌগলিক গঠন—আমরা তার উন্নয়নের পথের ৪টি প্রশস্ত রূপরেখা প্রদান করেছিলাম। বাহা’ই সমাজ যখন পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়নের দিকে যাত্রা শুরু করে তখন এই রূপরেখা সেই প্রক্রিয়াকে—যা মূলত একটি চলমান প্রক্রিয়া ছিল—আকার প্রদান এবং সংজ্ঞায়িত করতে অত্যন্ত সার্থক প্রমাণিত হয়েছে। তখন থেকে যে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তা এখন বিশ্বাসীদেরকে আধ্যাত্মিক শক্তিসমূহ দ্বারা ক্রমান্বয় বলীয়ান হওয়া মানুষের অগ্রযাত্রাকে পূর্বের অগ্রগতির একটি সমৃদ্ধ এবং গতিশীল ধারাবাহিকতার আলোকে দেখতে সক্ষম করেছে। কোনো ক্লাস্টারে যে প্রক্রিয়াটি উন্মোচিত হয় যদিও আপনারা সকলেই তার সাথে সুপরিচিত কিন্তু তার একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা মূলত: ইহার প্রকৃতি গঠনের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করবে।

৪। বৃদ্ধির কার্যক্রম

একটি ক্লাস্টারে বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার সুযোগগুলি কিভাবে সৃষ্টি হয় তা ব্যতিক্রমহীনভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে বিশ্বাসীদের অথবা কোনো একজন স্বদেশীয় পথিকৃৎ এর অর্থবহ এবং নির্দিষ্ট কথোপকথনের সূচনা নির্ধারণ করে দেয়। বন্ধুরা সহকর্মীদের নিয়ে কোনো অধ্যয়ন চক্র, কয়েকটি পাড়ার শিশুদের নিয়ে একটি শিশুক্লাস, স্কুলের সময়ের পরে একটি জুনিয়র ইয়ুথ গ্রুপ গঠন, পরিবার বা বন্ধুদের জন্য আয়োজিত একটি প্রার্থনা সভা, এইগুলির যে কোন একটি বৃদ্ধির জন্য উদ্দিপক হিসেবে কাজ করতে পারে। এর পরের ঘটনাগুলি কোনো নির্দিষ্ট গতিপথ অনুসরণ করে না। পারিপাশি^র্ক অবস্থাই ঠিক করে দিতে পারে যে, কোনো একটি মূল কার্যক্রমকে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা যেতে পারে, যে কার্যক্রম অন্যগুলির তুলনায় দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইভাবে এটাও সম্ভব যে, চারটির প্রত্যেকটিই তুলনামূলকভাবে একই গতিতে অগ্রসর হবে। কিছু কার্যক্রম যদি দুর্বল হয় সেক্ষেত্রে তাদের অনুপ্রেরণার জন্য অন্য স্থান থেকে বন্ধুরাও তাদের সহায়তার জন্য আসতে পারেন, কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক না কেন ফলাফল একই হতে হবে। প্রত্যেকটি ক্লাস্টারের অভ্যন্তরে মূলকার্যক্রমগুলির মধ্যে সমন্বয়ের স্তর এমনই হতে হবে যেন ধর্মের প্রসারণ এবং দৃঢ়করণের একটি উন্নতিশীল কার্যক্রম তাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ করা যেতে পারে। অর্থাৎ কর্মপদ্ধতির যে কোনো বিন্যাস গ্রহণ করা হোক না কেন এবং সংখ্যায় তারা যতই ক্ষুদ্র হোক, ভক্তিমূলক সভা, শিশুক্লাস এবং জুনিয়র ইয়ুথ গ্রুপগুলি তাদের দ্বারাই চালিত হচ্ছে যারা ইন্সটিটিউটের কোর্সসমূহের ধারাবাহিকতার মধ্যে এগিয়ে আসছে এবং তারা যে ব্যপ্তি এবং সমষ্টির মধ্যে যে রূপান্তর উৎসাহিত করতে ব্রত তার প্রতি তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পদ্ধতিগত কর্ম প্রক্রিয়ায় মানব সম্পদের এই প্রাথমিক প্রবাহ টেকসই বৃদ্ধির পথে একাধিক মাইলফলকের মধ্যে প্রথমটিকে চিহ্নিত করে।

৫।    সকল প্রতিষ্ঠান এবং এজেন্সীসমূহ এবং সবোর্পরি সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যদের বন্ধুদেরকে এই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং সেখানে পৌঁছানোর যে বহু পথ রয়েছে তা কল্পনা করতে সহায়তা করা হবে সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যদের এবং তাদের সহায়কদের, যারা গ্রহব্যাপী পরিকল্পনাসমূহের বর্তমার ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তাদেরকে এমন দক্ষতা এবং নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে হবে যা এমন একটি গতিশীল প্রক্রিয়ার জন্ম দাবি করে। এমন ক্রমবর্ধমান সংখ্যার দায়িত্বের কেন্দ্রীয় বিষয় । তাদের অন্যান্য কাজের মত এই কাজেও অবশ্যই তাদের কল্পদৃষ্টির  প্রসস্ততা এবং   চিন্তার স্বচ্ছতা, কর্মক্ষেত্রে নমনীয়তা এবং উপায় উদ্ভাবনে দক্ষ হতে হবে। তাদেরকে বন্ধুদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে, প্রতিকূল অবস্থায় তাদের সহায়ক এবং তাদের আনন্দে অংশীদার হবে। এই সকল বন্ধুদের মধ্য থেকে কয়েকজন দ্রুত কর্মকাণ্ডের অগ্রভাগে চলে আসবে, আবার অন্যান্যরা তুলনামূলকভাবে ধীর গতিতে এগোবে কিন্তু তাদের সকলেরই সাহায্য এবং উৎসাহদানের প্রয়োজন রয়েছে এবং তা (সাহায্য ও উৎসাহ) কোনো বিমূর্তভাবে নয় বরং তার ভিত্তি হবে পরিস্থীতির গভীর সম্পৃক্ততা যা শুধুমাত্র সেবার ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করার ফলে অর্জিত হয়। যারা পরিকল্পনায় বিশ্বাসীদের আন্তরিক অংশগ্রহণকে উৎসাহ দিতে চান তাদেরকে অবশ্যই প্রত্যেক উৎসুক ব্যক্তি বাহা’ই—এর সক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, এটাই তাদের প্রচেষ্টার জন্য অপরিহার্যভাবে প্রমাণিত হবে। তারা যদি অংশগ্রহণকারীদের সংশয়কে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস থেকে নির্গত সাহসে এবং সাময়িক উত্তেজনাকে দীর্ঘমেয়াদী কর্মের প্রতি তাদের অঙ্গীকারে রুপান্তর করতে চায় তাহলে একান্ত প্রয়োজন হবে কর্তৃত্বমুক্ত শর্থহীন ভালোবাসা। তারা যদি দেখাতে চায় যে, পথের বাধাগুলিকে কিভাবে এগিয়ে যাওয়ার উপায়ে পরিণত রা যায় তাহলে স্থীর সংকল্পের প্রয়োজন হবে। কতিপয় বন্ধুকে একতাবদ্ধভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা  উপলব্ধি করতে যেসকল বিষয় বাধা প্রদান করছে, তা চিহ্নিত করার জন্য অন্যের কথা শোনার জন্য উচ্চতর আধ্যাত্মিক মনোভাবের প্রয়োজন হবে।

৬। ক্রমবর্ধমান তীব্রতা

এই বিষয়টার প্রতি লক্ষ্য রাখা গুরুতপূর্ণ যে যখন একটি বৃদ্ধির কার্যক্রম জন্ম নেয় তখনই একটি উদয়মান সমাজের চেতনা ঘটনাপ্রবাহের উপর তার প্রভাব বিস্তার আরম্ভ করে দেয়। কার্যক্রম কোনো ক্লাস্টারের ভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকুক বা কোনো একটি গ্রাম বা এলাকায় সীমাবদ্ধ হোক, বন্ধুদের মধ্যে তাদের কর্মতৎপরতায় একটি অভিন্ন চেতনা দ্বারা বৈশিষ্ট্যতা লাভ করে। এই চেতনাকে পরিচালিত করার জন্য সাংগঠনিক স্তর যাই হোক না কেন, মূল কার্যক্রমের পদ্ধতিগত এবং পরস্পর সমন্বয়ীত বৃদ্ধি অচিরেই সাংগঠনিক স্তরকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াকে অপরিহার্য করে দেয়। বিভিন্ন মাধ্যমে কার্যক্রমকে উচ্চতর কাঠামো প্রদান করা হয় যে সকল উদ্যোগ পূর্বে সাধারণত ব্যক্তির ইচ্ছা দ্বারা আকার ধারণ করেছিল, যেগুলিকে এখন সমষ্টিগত রূপ প্রদান করা হয়। তখন অধ্যয়ন চক্র, জুনিয়র ইয়ুথ গ্রুপ এবং শিশুক্লাসের জন্য ইন্সটিটিউট কতৃর্ক নিয়োগকৃত সমন্বয়কারীগণের একদল এগিয়ে আসে। তাদের নিয়োগের যে কোনো ক্রমই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতির তীব্র উপলব্ধি ছাড়া অন্য কিছু এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিয়ামক হতে পারে না। কেননা এখানে মূল বিষয়টা নিছক নিয়মাবলীর একটি তালিকা মেনে চলা নয় বরং একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়র ক্রমন্বয় উন্মোচনের এমন প্রক্রিয়া যার মধ্যে বৃহৎ সংখ্যায় মানুষকে আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষমতায়নের সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে।

৭। ইন্সটিটিউট প্রক্রিয়া সমর্থনে কাঠামো প্রতিষ্ঠার সমান্তরালে অন্যান্য প্রশাসনিক কাঠামোগুলিও ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে থাকে। কিছু বন্ধুদের মাঝে মধ্যে একত্রিত হওয়া একসময় বন্ধুদের একটি নিবিড় এবং বৃদ্ধমান গ্রুপ যে জন্ম দেয় যারা নিয়মিত এই বিষয়ে আলোচনা করেন যে, কিভাবে পুঞ্জিভূত কর্মশক্তিকে সেবার ক্ষেত্রে চালিত করা যেতে পারে। বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার গতি সঞ্চার করার সাথে সাথে পরিকল্পনা প্রস্তুত করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার এই পদ্ধতি প্রয়োজন মিটাতে ব্যর্থ হয় এবং তখন একটি এরিয়া টিচিং কমিটি গঠন করা হয় এবং প্রতিফলন সভাকে আনুষ্ঠানিক রূপ প্রদান করা হয়। সেই কমিটি ইন্সটিি্টউট এবং সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যদের সম্মিলিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সমস্ত কর্মসূচির সমন্বয় সাধনের জন্য একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তব রূপ নেয়, যার মধ্যে কোনো পরিকল্পনার জন্য নির্দেশনা, অর্থ এবং তাদেরকে কার্যকর যোগান দেওয়ার দক্ষতার অন্তর্ভূক্ত থাকে। এই অবস্থায় ক্লাস্টারে বৃদ্ধির প্রক্রিয়া  প্রসারণ এবং দৃঢ়করণের সুস্পষ্ট চক্রগুলির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ছন্দের সাথে মিলে থাকে যেখানে তিন মাস পর পর নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রতিফলন এবং পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হতে থাকে।

৮। এখানেও এটা সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্য এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও এজন্সীসমূহ যেমন—আঞ্চলিক বাহা’ই কাউন্সিল এবং ইনষ্টিটিউট বোর্ডের দায়িত্বে যে তারা নিশ্চিত করবে ক্লাস্টারগুলিতে যে প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠছে সেগুলি যেন প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণ করে। নির্দিষ্ট করে বললে ইনষ্টিটিউটের ব্যবহারের জন্য আমরা কোর্সগুলির যে ধারাবাহিকতা সর্বত্র ব্যবহারের জন্যে সুপারিশ করেছি, যা চলমান রুপান্তরের প্রক্রিয়াকে এমন কার্যকরভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে তা এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যা সার্বজনীন অংশঘ্রহণ এবং পরস্পর সমর্থন ও সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক। এই পরিবেশে ব্যক্তিবর্গের যারা প্রত্যেকেই বিশ্বাস করেন যে, তারা সেবাদানের এক অভিন্ন পথে চলছেন, পারষ্পরিক সম্পর্কের প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের রিজওয়ান বাতার্য় সংক্ষেপে বলা হয়েছিল। আমরা সেখানে আরও ইঙ্গিত দিয়েছিলাম যে, এইরূপ একটি পরিবেশ ধর্মের প্রশাসনিক বিষয়গুলির উপর যে প্রভাব বিস্তার করে না তা নয়। যখন শেখার একটি নমনীয় মনোভাব নিয়ে বিশ্বাসীগণ ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় শিক্ষাদান এবং প্রশাসনিক কাজে অংশগ্র্র্রহণ করে, তারা প্রত্যেকটি কাজ প্রত্যেকটি মিথস্ক্রিয়াকে প্রগতির অন্বেষণ এবং ধর্মের সেবায় তাদের প্রচেষ্টাগুলিতে একে অপরের সহগামী হওয়ার একটি সুযোগ রুপে দেখতে পায়। এভাবেই অতিরিক্ত আদেশ—নির্দেশের প্রবণতা প্রশমিত হবে। এভাবে রুপান্তরের মত একটি জটিল প্রক্রিয়াকে অতি সরলিকৃত ধাপগুলিতে কোনো নির্দেশিকাতে দেওয়া নিয়মগুলিতে পরিণত করার প্রবণতা এড়ানো যায়। পরস্পর বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডগুলিকে এক সূত্রে আবদ্ধ করা হয় এমনকি অতি ক্ষুদ্র পদক্ষেপগুলিও অর্থ দ্বারা অলঙ্কৃত হয়। সেবার ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক শক্তিসমূহের সক্রিয়তা ক্রমবর্ধমানভাবে দ্রশ্যমান হয় এবং বন্ধুত্বের বন্ধন যা সুস্থ বিকাশের আদর্শের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ তা ক্রমাগতবাবে শক্তি অর্জন করতে থাকে।

৯। বিকাশমান প্রক্রিয়াসমূহ, উদিয়মান কাঠামো এবং স্থায়ী সাহচর্য —এর পটভূমিতে সেই মুহূর্ত আসে যা একটি নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রমের ‘সূচনা’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে, যা এই বাস্তবতার সচেতন স্বীকৃতি যে ধর্মের প্রসারণ এবং দৃড়করণের জন্য সমস্ত উপকরণ শুধু যে উপস্থিত রয়েছে তা নয় বরং সেগুলি যথেষ্ট মাত্রায় কাজও করছে। এটা একটি জনসমষ্টির আধ্যাত্মিক শিক্ষার একটি চির প্রসারণশীল এবং স্বনির্ভর পদ্ধতির পরিপক্কতার প্রতিও ইঙ্গিত করে। বন্ধুদের একটি নিয়মিত প্রবাহ প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের কোর্সসমূহের ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং নিজেকে তদ্বনুযায়ী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে, যা পরবর্তীতে ধর্মে নতুন অন্তর্ভুক্তির কারণ হয়, যাদের (নতুন বিশ্বাসীদের) একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অবধারিতভাবে ইন্সটিটিউট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং এইভাবে প্রক্রিয়ার প্রসারণ নিশ্চিত করে। এটা এমন একটি মাইলফলককে চিহ্নিত করে যেখানে সকল ক্লাস্টারে পরিশ্রমরত বন্ধুরা একসময় পৌছানোর জন্য সচেষ্ট থাকবেন।

১০। আমরা পূর্ববর্তী উপলক্ষগুলিতে যা বলেছিলাম তা এখানে পুনরাবৃত্তি করে আমরা আশা করছি যে আপনারা এই বিষয়টা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন যে যদি কোনো অপ্রাসঙ্গিক জটিলতা সৃষ্টি করা না হয় তাহলে অত্যন্ত সাবলীলভাবে কোনো জনগোষ্ঠীকে ধর্মের উদ্দেশ্য এবং নীতিসমূহের দিকে পরিচালিত করা যেতে পারে। উপরে উল্লেখিত যে পথের বর্ণনা এত সংক্ষিপ্তভাবে করা হয়েছে তা যে বাধাহীন, আমরা এমন কোনো অলীক কল্পনা করছি না। প্রগতি সংকট এবং বিজয়ের দ্বন্দের মাধ্যমেই অর্জিত হয়, তাই বাধাবিপত্তিগুলি অবসম্ভাবী। অংশগ্রহণের সংখ্যা হ্রাস, কর্মকান্ডের চক্রের বিঘ্ন, একতা বন্ধনগুলিতে সাময়িক ফাটল, এইগুলি হল এমন অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে কয়েকটি যার সম্মুখীন হতে পারে। প্রায়ই দ্রুত সম্প্রসারণ যে পরিমাণে মানব সম্পদ এবং তাকে কাজে নিয়োজিত করার যে চাহিদা দাবি করে তা পূরণ করতে ব্যর্থ পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু এমন অবস্থায় বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার কোনো নির্দিষ্ট ফরমুলা চাপিয়ে দিলে বৃদ্ধির কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্য অর্জিত হবে না। বিভিন্ন কর্মকান্ডে সাময়িক ভারসাম্যহীনতা এই প্রক্রিয়ারই সহজাত এবং যদি ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করা হয় তাহলে সময়ের সাথে ঠিক করে নেওয়া যায়। কোনো বিকাশমান কার্যক্রমকে সমন্বয়পূর্ণ বৃদ্ধির কোনো তাত্ত্বিক ধারণার কারণে সংকোচিত করা প্রায়ই শান্তির কারণ প্রমাণিত হয়। যদিও কোনো কোনো ক্লাস্টারের বন্ধুরা অন্য কোনো ক্লাস্টারের বন্ধুদের এমন অভিজ্ঞতা থেকে লাভবান হতে পারেন, যেখানে অন্য ক্লাস্টারের বন্ধুরা ইতিমধ্যে কর্ম প্রণালীর একটি প্রয়োজনীয় ছক তৈরী করে ফেলেছেন, কিন্তু শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব অব্যাহত কর্মতৎপরতা, প্রতিফলন এবং আলোচনার মাধ্যমেই তারা তাদের নিজের বাস্তবতাকে বুঝতে শিখবেন, নিজের সম্ভাবনাগুলিকে দেখতে পারবেন, নিজের সম্পদের ব্যবহার করা শিখবেন এবং আসন্ন বৃহৎ আকারে সম্প্রসারণ এবং দৃঢ়করনের জরুরি প্রয়োজনগুলির প্রতি সাড়া দিতে পারবেন।

১১। বর্তমানে বিশ্বজুরে প্রায় ১৬০০ ক্লাস্টার রয়েছে যেখানে বন্ধুরা নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রমের অনুসঙ্গী কাজের একটি ছোট সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই অর্জনকে কোনো মতেই সেই প্রক্রিয়ার পরিনিতি ধরে নেওয়া যাবে না যা প্রত্যেকটি ক্লাস্টারে গতি সঞ্চার করছে। বন্ধুদের কাছে শেখার নতুন সীমান্তগুলি উন্মোচন হচ্ছে, তাদেরকে তাদের শক্তিসমূহকে প্রাণবন্ত সমাজগুলির সৃষ্টি করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, যেগুলি আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানবতার জন্য বাহা’উল্লাহর কল্পদৃষ্টি অধিক থেকে অধিকতরভাবে প্রতিফলিত করছে। এই সকল ক্লাস্টারগুলিকে সম্ভাব্য পথিকৃৎদের আধারস্বরূপও কাজ করতে হবে, যাদেরকে মূলত স্বদেশীয় পথিকৃৎ হিসেবে ক্লাস্টারের পর ক্লাস্টারে প্রেরণ করা যেতে পারে, কোনো কোনো ক্লস্টারে তারা তাঁর প্রত্যাদেশের আলোর কিরণ প্রথমবারের মতো ছড়াবে, আবার অন্য ক্লাস্টারগুলিতে ধর্মের উপস্থিতিকে সুদৃঢ় করবে এবং সকলকেই দ্রুত উন্নতির পথের প্রথম মাইলফলক এবং তাও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম করবে। এই লক্ষ্য মনে রেখে আমরা রিজওয়ান ২০২১ এ সর্বমহান নাম—এর সমাজের প্রতি আহ্বান জানাবো যেখানে বৃদ্ধির  কর্মসূচী চলমান রয়েছে, তাদের কার্যক্রমের স্তর যাই হোক না কেন, তাদের সংখ্যাকে ৫০০০—এ বৃদ্ধি করার অর্থাৎ বর্তমানে বিশ্বের মোট ক্লাস্টারের সংখ্যার এক তৃতীয়কে এই পর্যায় আনা।

১২। শেখার সীমানার প্রসারণ

পূর্ববর্তী অনুচ্ছেগুলি এবং বিগত দেড় মশক ধরে অনেকগুলি বার্তায় আমরা যা বর্ণনা করেছি তাকে বাহা’ই সমাজের বিকাশের প্রথমসমূহের একটি ধারাবাহিক হিসেবে দেখা ভালো হবে, প্রত্যেকটি পথ ছিল সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পরিস্থিতির জন্য মানানসই। এই ঐশী শক্তি দ্বারা পরিচালিত বৃদ্ধির প্রক্রিয়া আজ থেকে ১৬০ বছরেরও বেশি সময় পূর্বে যার ধর্মের সূতিকাগারে ধর্মীয় উদ্দিপনার মাধ্যমে সূচনা হয়েছিল। যখন হাজার হাজার মানুষ নতুন দিনের আহ্বানের প্রতি সাড়া দিয়েছিলেন এবং এই প্রক্রিয়অয় প্রথম দিকের বিশ্বাসীদের প্রয়াসে বাহা’উল্লাহর বার্তার পূর্বে অবস্থিত দেশগুলিতে এবং পশ্চিমে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে পৌছায়, এটা আব্দুল—বাহার ‘ট্যাবলেট অব ডিভাইন প্লান (ঐশী পরিকল্পনার ফলকলিপিসমূহ)’ এর মাধ্যমে অধিকতর সুশৃঙ্খল কাঠামো তৈরী করে এবং এই প্রক্রিয়া গতি সঞ্চার করে যখন বন্ধুরা অভিভাবকের দিক নির্দেশনায় বাহা’ই কার্যক্রমের ছোট ছোট কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েন এবং বাহা’ই প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রথম স্তম্ভগুলি স্থাপন করেন। এটা অধিকতর শক্তি সঞ্চার করে কিন্তু এই প্রক্রিয়ার গতি উল্লেখযোগ্যভাবে মন্থর হয়ে যায় যখন বন্ধুরা বৃহৎ আকারে প্রসারণ এবং সংকলনকে ধরে রাখার জন্য পদ্ধতি সচেষ্ট হলেন এবং তখন গত ১৫ বছর ধরে চারসালা পরিকল্পনার শুরুতে বাহা’ই বিশ্বকে তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের শিক্ষাদান কাজকে পদ্ধতিগত করার যে আহ্বান জানিয়েছিলাম তা কয়েক দশকের কঠিন কিন্তু অমূল্য শেখার ফলে আবার গতি সঞ্চার করছে। বৃদ্ধির প্রতি বর্তমসান দৃষ্টিভঙ্গি যতই কার্যকর হোক না কেন, তাকে কোনো ক্লাস্টারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে অবশ্যই আরো পরিশিলীত এবং উন্নত পর্যায়ে বিবর্তীত হতে হবে এবং অধিকতর লক্ষ্যণীয়ভাবে ধর্মে সমাজ গড়ার যে শক্তি অন্তর্নিহিত রয়েছে তা এমনভাবে প্রদর্শন করতে হবে যেন অল্প সংখ্যক মানুষ ব্যতীত সকলেই তা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে্

১৩। গ্রহব্যাপী বাহা’ই সমাজের বিকাশ প্রসঙ্গে প্রিয় অভিভাবক কতবারই না বন্ধুদের লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ় সংকল্প এবং তাদের প্রচেষ্টায় অধ্যবসায়ী হতে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি সন্তুষ্টির সাথে লক্ষ্য করেছেন“ তাদের সুউচ্চ আদর্শের সম্পর্কে সচেতন, তাদের ধর্মের সমাজ গড়ার যে শক্তি রয়েছে তার প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে তারা অপ্রতিহত এবং আকক্সিক্ষত, তারা সেই সকল প্রয়োজনীয় উপায় উদ্ভাবন এবং তাকে নিখুঁত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যার মধ্যে বাহা’উল্লাহর বিশ্ব ব্যবস্থার ভ্রম্নণ পরিপক্ক এবং বিকশিত হবে।” তিনি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন যে “এই ধীরগতি এবং প্রায় অদৃশ্য” প্রক্রিয়ায় হলো নিরাশ মানবতার “আশার একমাত্র অবলম্বন এবং এই প্রক্রিয়ার পরিধি এবং প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকার এবং সময় উপস্থিত হলে তাঁর লেখনাবলী থেকে এটা সুস্পষ্ট যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা “নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার শুধু কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে না বরং স্বয়ং সেই ব্যবস্থার প্রকৃত আদর্শ স্বরূপ গণ্য হবে।” তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন “ এমন একটি বিশ্বে যার রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি ত্রুটিপূর্ণ, যার দৃষ্টি কুয়াশাচ্ছন্ন, যার বিবেক কিংকর্তব্যবিমূঢ়, যার ধর্মীয় বিধানসমূহ জীবনী শক্তিহীন হয়ে গেছে এবং তাদের সদগুণগুলি হারিয়ে গেছে, তাকে এই নিরাময়কারী মাধ্যম, এই জীবনদানকারী শক্তি, এই একতাবদ্ধকারী ক্ষমতা, প্রগাঢ়ভাবে জীবন্ত এবং সর্ববেষ্টনকারী আকার ধারণ করছে।” এবং ‘প্রতিষ্ঠানসমূহের রূপ ধারণ করছে’ এবং ‘তার শক্তিসমূহকে সংহত করছে।’

১৪। যে বিষয়টা সুস্পষ্ট থাকা উচিত তা হল প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে যদি ভবিষ্যত সমাজের আদর্শস্বরূপ হতে হয় তাহলে যে সমাজের অভ্যন্তরে তা বিকশিত হচ্ছে তা শুধু যে সেই সমাজের ক্রমবর্ধমান জটিল হওয়অর পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলির প্রতি মনোযোগি হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে তা না, তাদেরকে আকারে বৃহৎ হতে বৃহত্তরও হতে হবে। কি করে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। একটি ক্ষুদ্র সমাজ যার সদস্যরা তাদের অভিন্ন বিশ্বাস দ্বারা একতাবদ্ধ, তাদের উচ্চ আদর্শ দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, তাদের বিষয়াদি ব্যবস্থাপনায় এবং নিজের প্রয়োজনগুলির প্রতি মনোযোগি এবং সম্ভবত তারা কিছু জনহিতকর প্রকল্পও পরিচালনা করছে— এমন একটি সমাজ যা সমৃদ্ধি লাভ করছে কিন্তু বিপুল জনগোষ্টির জীবনের বাস্তবতা থেকে একটি নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে, তা কখনো সমগ্র সমাজের পূনর্গঠনের জন্য আদর্শরূপে কাজ করার আশা করতে পারে না। তবে বিশ্বব্যাপী বাহ’ই সমাজ যে আত্মতুষ্টির বিপদগুলি এড়াতে সক্ষম হয়েছে তা আমাদের জন্য আনন্দের একটি স্থায়ী উৎসভ বাস্তবিকই সমাজ তার প্রসারণ এবং দৃঢ়করণ ভালমতোই করেছে। তা সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে গ্রাম ও শহরগুলিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের বিষয়াদি পরিচালনা করা – বাহা’উল্লাহর বিশ্ব ব্যবস্থার পতাকা এমনভাবে তুলে ধরা যেন তা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়— এখনো একটি দূরবর্তী লক্ষ্য।

১৫। এখানেই শেখার যে প্রক্রিয়া আগামী পরিকল্পনায় অব্যাহতভাবে অগ্রসর হতে থাকার সেই প্রক্রিয়ার অগ্রভাগে যারা রয়েছেন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেখানেই একটি নিবিড় বৃদ্ধির কর্মসূচী প্রতিষ্টিত হয়েছে, সেখানেই বন্ধুরা যেন অংশগ্রহণের স্তরকে বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যেন কোনো কার্পণ্য না করে। সেই ব্যবস্থাকে তারা এত কষ্ট করে প্রতিষ্ঠা করেছে তা যেন নিজের মধ্যে গুটিয়ে না যায় বরং ক্রমবর্ধমান প্রসারিত হয়ে অধিক থেকে অধিকতর মানুষকে আলিঙ্গণ করে তা নিশ্চিত করতে তারা যেন চেষ্টার কোনো ত্রুটি না রাখে। তারা যে লক্ষ্যণীয় গ্রহণশীলতা পেয়েছেন শুধু তাই না, যে অধীর আগ্রহের সাথে তারা বন্ধুদের অপেক্ষা করছিলেন তারা যখন জীবনের সকল স্তরের মানুষের সাথে বাহা’উল্লাহর ব্যক্তিত্ব  ও তাঁর প্রত্যাদেশ সম্পর্কে কথা বলার ক্ষেত্রে আরো আত্মবিশ্বাস অর্জন করবেন তখন এই বিষয়টা যেন বন্ধুদের চোখের আড়াল না হয়। তাদের এই বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস থাকুক যে যখন ধর্মের বাণী সরাসরি উপস্থাপন করা হয়, তা যখন গভীরতার পর্যাপ্ত একটি স্তরে এবং দৃঢ় করণের যুক্তিসঙ্গত উপায় দ্বারা সমর্থিত হয় তখন স্থায়ী ফলাফল নিয়ে আসে এবং তারা অতীতের সে শিক্ষাগুলি যেন না ভুলে যায় যে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে ধর্মের সক্রিয় সমর্থকদের একটি তুলনামূলকভাবে ছোট একটি দল তারা যতই উদ্ভাবনশীর হোকত না কেন, যতই নিবেদিত প্রাণ হোক না কেন, তারা শত শত না বরং হাজার হাজার নারী, পুরুষ এবং শিশু নিয়ে গঠিত কোনো সমাজের প্রয়োজন মিটাতে পারে না। এটার অর্থ খুবই স্পষ্ট। কোনো ক্লাস্টারে যারা প্রসারণ এবং দৃঢ়করণের দায়িত্ব পালন করছেন তাদের সংখ্যা যদি দশ বা তার অধিক হয় এবং সেখানে সমাজ জীবনের কর্মকান্ড যারা অংশগ্রহণ করছেন তাদের কয়েকশ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়ে এক বা দুই হাজার অংশগ্রহণকারীদের জন্য যেন এক বা দুইশত সাহায্যকারী থাকে।

১৬। এটা উৎসাহজনক যে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ১৬০০ ক্লাস্টারের মধ্যে প্রায় ৩০০টিতে নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রম সক্রিয় রয়েছে, বিশ্বাসীরা এখন তাদের সম্মুখে উন্মুক্ত নতুন ক্ষেত্রে প্রবেশ  করেছেন এবং তার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে তারা কর্মক্ষেত্র প্রসারিত করেছে। স্পষ্টতই এই সকল ক্লাস্টারে, যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব প্রয়োজন রয়েছে, প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট কতৃর্ক শুরু করা শিক্ষামূলক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা, সমাজের কনিষ্ঠতম সদস্যদের জন্য নিয়মিত ক্লাসের আয়োজন করা, জুনিয়ল ইয়োথদের নিবিড় দল গঠন এবং যুবক ও প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য অধ্যয়ন চক্রের আয়োজন করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এই কাজ সম্পাদন করার জন্য যা কিছু করণীয় তার অধিকাংশ রিজওয়ান বার্তায় অলোচিত করা হয়েছে। কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া, ইন্সটিটিউট প্রক্রিয়ার রূপান্তরকারী প্রভাব হাতে কলমে প্রত্যক্ষ করার পরে, এই সকল ক্লাস্টারে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্নিহিত চালিকাশক্তি পরিপূর্ণ উপলব্ধি অর্জন করার চেষ্টা করছেন, যে শক্তি সাহচর্যে্যর আবহ সৃষ্টি করে, অংশগ্রহণমূলক পথ যা এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করে, উপলব্ধির যে গভীরতা তা লালন করে, সেবার যে কাজগুলি সুপারিশ করে, এবং সর্বপরি ঈশ্বরের বাণীর উপর তার নির্ভরতা। এটা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে যেন ইন্সটিটিউট কোর্সগুলি সুস্পষ্টভাবে “প্রকৃত সত্তা” এবং “বর্তমান কর্ম” যে এক অপরের পরিপূরক এই ধারণাকে যেন প্রতিফলিত করে তা নিশ্চিত করা; এই প্রক্রিয়া উক্ত ধারণা মধ্যে ভ্রান্ত বিপরীত্য এড়াতে তারা যে গুরুত্ব প্রদান করে; সৃজনশীল শব্দ মুখস্ত করার প্রতি এই প্রক্রিয়ার যে জোর দেয় এবং নিজের জিদপূর্ণ সত্তএক জাগ্রত না করে সচেতনতা বাড়ানোর তাদের সযত্নে অনুশীলন।

 

প্রশাসনিক সার্মথ্য বৃদ্ধিকরণ

১৭।   যদিও শেখার প্রক্রিয়ায় অগ্রগামী ক্লাস্টারগুলিতে বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় উপাদানগুলি অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু তাদের অধিক সংখ্যার কারণেই তাদের সাংগঠনিক কর্ম—পরিকল্পনাগুলির জন্য একটি উচ্চতর যৌগিক (বহু স্তর বিশিষ্ট) পর্যায় উন্নীত হওয়ার প্রয়োজন হয়। ভৌগলিক বিবেচনা এবং সংখ্যাগত বৃদ্ধি উভয়ের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: ক্লাস্টারসমূহকে ক্ষুদ্রতর এককে ভাগ করা, অনুচিন্তন বা প্রতিফলন সভাগুলির বিকেন্দ্রীকরণ, ইন্স্টিটিউটের সমন্বয়কারীদের জন্য সাহায্যকারী নিয়োগ করা এবং মাঠ পর্যায়ে অন্যদের সহায়তার জন্য অভিজ্ঞ বন্ধুদের দল প্রেরণ। আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে  যে, আপনাদের দক্ষ সহায়তা পরবর্তী পরিকল্পনা চলাকালে আন্তর্জাতিক শিক্ষাকেন্দ্র এই অগ্রতিগুলির প্রতি লক্ষ্য রাখবেন এবং অর্জিত শিক্ষাগুলিকে সুপ্রমাণিত পদ্ধতি এবং মাধ্যমে একত্রীত করবেন। এই লক্ষ্যে আনাকে এবং আপনাদের সাহায্যকারীদের এমন একটি পরিবেশের চর্চা করতে হবে যা বন্ধুদের সুশৃঙ্খল হতে উৎসাহ দান করে, একগুঁয়ে হতে নয়, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হতে উৎসাহ দেয় কিন্তু হঠকারী হতে নয়, অন্যদের প্রতি যত্নবান হতে উৎসাহ দেয় কিন্তু অন্যদের প্রতি কৃতিত্ব স্থাপনকারী নয়। বুঝতে হবে যে  চূড়ান্ত বিচারে কোনো কৌশল নয় বরং চিন্তার একতা, স্থীর কর্ম উদ্যোম এবং শেখার প্রতি আত্মোৎসর্গই প্রগতি আনতে পারে।

১৮।   ক্লাস্টার পযার্য়ে বৃহৎ মাত্রায় কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য গৃহীত ব্যবস্থার প্রকৃতি যাই হোক না কেন, অব্যাহত প্রগতি নির্ভর করে স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের উন্নতি এবং আঞ্চলিক বাহা’ই কাউন্সিলসমূহের বর্ধিত সামর্থ্য এবং সবোর্পরি জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের উপর। রিজ্রয়ান বার্তায় আমরা জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের ক্রমবর্ধমান শক্তি লক্ষ করে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম এবং আমরা আগামী পাঁচ বছরের দিকে অত্যন্ত আশা নিয়ে তাকিয়ে আছি যাতে আমরা এওই বিষয়ে নিশ্চিতরূপে বিরাট অগ্রগতি দেখতে পাব। অধিকন্তু আমাদের কোন সন্দেহ নাই যে, জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের সাথে কাজ করে আপনারা আঞ্চলিক বাহা’ই কাউন্সিলসমূহকে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য উন্নত করতে সক্ষম হবেন। বর্তমানে সারা বিশ্বে ৪৫টি দেশে ১৭০টি এইরূপ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং তাদের সংখ্যা আগামী পরিকল্পনার সময় নিশ্চিতরূপে বৃদ্ধি পাবে। সকল আঞ্চলিক পরিষদগুলির জন্য অত্যাবশ্যক যে, তারা প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউটের কার্যক্রম এবং এরিয়া টিচিং কমিটিগুলির কার্যক্রমের প্রতি গভীর মনোযোগ প্রদান করবে। এই বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখলে তারা ক্লাস্টার পযার্য়ে বিকাশমান বৃদ্ধির ধারা এবং তার সাথে সম্পৃক্ত শেখার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি পদ্ধতি সৃষ্টি এবং তার উন্নতিসাধনকে অপরিহার্যরূপে দেখতে পাবেন। তার মধ্যে একটি সুষ্ঠভাবে পরিচালিত আঞ্চলিক কাযার্লয় যা সেক্রেটারীকে মৌলিক সাংগাঠনিক সহায়তা প্রদান করে, হিসাব রক্ষণের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা যা ক্লাস্টারের সাথে আর্থিক লেনদেনের দিকটাকে দেখাশোনা করতে পারে, যোগাযোগের এমন একটি কার্যকর ব্যবস্থা যা গ্রাম ও সংশ্লিষ্ট এলাকার জীবনব্যবস্থাকে বিবেচনায় রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং যেখানে অপরিহার্য, সেখানে ভৌত অবকাঠামো নিমার্ণ যা নিবিড় এবং সুসংহত কার্যক্রমকে সহজতর করবে। এখানে যে বিষয়ের প্রতি স্বীকৃতি প্রদান গুরুত্বপূর্ণ তাহলো এই জাতীয় ব্যবস্থা শুধুমাত্র তখনই কার্যকর হবে যখন স্বয়ং কাউন্সিলগুলি শেখার প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত হবে। অন্যথায়, পাড়া ও গ্রামগুলোতে কর্মের মাধ্যমে শেকার প্রক্রিয়ায় অংগ্রহণকারীদের সংখ্যায় ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির জন্য যে পদ্ধতি গড়ে তোলা হচ্ছে তা অত্যন্ত সুক্ষèভাবে তার বিপরীত কাজ করতে পারে এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে তৃণমূলপযার্য়ে উদীয়মান সম্ভাবনাগুলিকে দমিয়ে দিতে পারে।

১৯। প্রশাসনিক সার্মথ্য বৃদ্ধিকরণ

যদিও জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ এবং আঞ্চলিক কাউন্সিলসমূহের সাথে সহযোগিতা আপনাদের অন্যতম বিষয় থাকবে, আপনাদের সাহায্যকারীদের তাদের কর্মশক্তিকে অধিকতরভাবেস্থানীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বুদ্ধির প্রতি নিয়োগ করতে হবে, যেখানে সমাজ গঠনের দাবি সন্দেহাতীতভাবে উপস্থিত। সর্বত্র এবং বিশেষ করে এমন সব ক্লাস্টারে যেগুলি ব্যাপক আকারে প্রসারণ এবং দৃঢ়করণের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, সেসব স্থানে সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্য এবং তাদের সহকারীদের সম্মুখে যা করণীয় রয়েছে তা কল্পনা করায় আপনাদেরকে সাহায্য করার জন্য আমরা প্রথমত বিশ্বের অনেক গ্রামীণ এলাকায় স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলির প্রতি মনোনিবেশ করতে বলব, কেননা সেখানেই এমন ক্লাস্টারগুলির সংখ্যাগরিষ্ট রয়েছে।

২০। আপনারা অবগত আছেন যে, প্রায়ই একটি গ্রামীণ ক্লাস্টার অনেকগুলি গ্রাম এবং একটি বা দুইটি শহর নিয়ে গঠিত, কিন্তু যখন নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রম সম্পর্কিত কর্মকান্ড প্রতিষ্ঠিত করা হয় তখন বন্ধুদের প্রচেষ্টাগুলি কয়েকটি জনপদে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু যেভাবে এই বছরের রিজওয়ান বার্তায় বলা হয়েছে, একবার প্রতিষ্ঠিত হলে এই ছকটি দ্রুত গ্রামের পর গ্রামে সম্প্রসারিত করা যায়। প্রাথমিকভাবে প্রত্যেকটি এলাকায় স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ অস্তিত্ব লাভ করে এবং তার ক্রমবিকাশের সমান্তরালে এবং তার সাথে নিবিড় সম্পর্কে জড়িত থাকে সেই গ্রামে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে বৃদ্ধির প্রক্রিয়া এবং এই প্রক্রিয়ার অন্যান্য দিকগুলির মতই স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদরে বিকাশকেও সামর্থ্য বৃদ্ধির আলোকে দেখা সর্বোত্তম হবে।

২১। প্রথমত যা হওয়া প্রয়োজন তা তুলনামূলকভাবে সহজ; গ্রামে বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সম্পর্কে ব্যক্তির সচেতনতা গতিবেগ অর্জন করে এবং তা জন্ম নেয় প্রত্যেক ব্যক্তির মূল কার্যক্রমে ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততারফলে, এই (ব্যক্তি) সম্পৃক্ততাকে অবশ্যই একটি সমষ্টিগত চেতনায় একত্রিত হতে হবে, যে চেতনা একই সময় চলমান রুপান্তরের প্রবৃতিকে এবং তাকে লালন করার ক্ষেত্রে পরিষদের দায়িত্ব উভয়কে স্বীকৃতি প্রদান করে। নিঃসন্দেহে কিছু মৌলিক প্রশাসনিক কার্যক্রমের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে, যেমন পরিষদের সভার মোটামোটি নিয়মিতভাবে আয়োজন, উনিশ দিবসের ভোজানুষ্ঠান পালন করা, পবিত্র দিবসসমূহ উদ্্যাপনের জন্য পরিকল্পনাগ্রহণ করা, একটি স্থানীয় অর্থভাণ্ডার গঠন এবং বাহা’ই নিয়ম অনুযায়ী বার্ষিক নিবার্চনের ব্যবস্থা করা। তা সত্ত্বেও এই সকল প্রচেষ্টার পাশাপাশি একজন সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যের সহযোগির উৎসাহদানের মাধ্যমে কোন স্থানীয় পরিষদের জন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে এক বা দুই সমাজ জীবনের জন্য আশু প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে পরামর্শ করা কঠিন হবে না; যারা ইতিমধ্যে ইনষ্টিটিউটের প্রথম কোর্স  সম্পন্ন করেছেন তাদের মাধ্যমে গ্রামের ভক্তিমূলক জরিত্রের উন্নতি সাধন করা যেতে পারে; ইনষ্টিটিউট যে শিক্ষক তৈরি করেছে তারা শিশুদের আধ্যাত্মিক শিক্ষার লক্ষ কি করছেন; জুনিয়র ইয়ুথদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতায়ণের জন্য যে কার্যক্রম রয়েছে তা কতদুর তাদের সম্ভাবনাগুলিকে উন্মোচিত করেছে; বন্ধুদের একে অপরের বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করার ফলে কিভাবে সমাজের আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক কাঠামো শক্তিশালী হচ্ছে। পরিষদ যখন এই সকল ধর্তব্য বিষয়গুলি নিয়ে পরামর্শ করে তখন তারা বিকাশমান প্রক্রিয়াকে ভালোবাসাপূর্ণ এবং ধৈর্যসহকারে লালন করতে শেখে তখন এরিয়া টিচিং কমিটি এবং ইনষ্টিটিউটের সাথে পরিষদের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে একটি অভিন্ন লক্ষে সুদৃঢ় হয়ে যায়। কিন্তু এই সকল কিছু থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে, এটা সেই ভিত্তি স্থাপনের সূচনা করবে যার উপর একটি অনন্য স্নেহময় এবং অকৃত্রিম সহায়ক সম্পর্ক গড়ে উঠবে, যার সম্পর্কে প্রিয় অভিভাবক তাঁর বহুসংখ্যক বাতার্য় এমন সম্পর্ক হিসেবে বর্ণনা করেছেন যা স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের একক বিশ্বাসীদের সাথে স্থাপন করা কাম্য।

২২।  স্পষ্টতই বিশ্বব্যাপী পরিকল্পনা সম্পর্কিত নির্দিষ্ট বিষয়গুলির উপর, সেগুলি যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন পরার্মশ করতে শেখা সামর্থ্য বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার শুধুমাত্র একটি দিক যাতে স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদকে অবশ্যই নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এটার অব্যাহত বিকাশ আব্দুল—বাহা কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের প্রতি আনুগত্যে থাকার অর্থ প্রকাশ করে যে, “সমস্ত আলোচনাকে অবশ্যই আধ্যাত্মিক বিষয়াবলীর মধ্যে সীমাবদ্ধ  থাকতে হবে, যেগুলি আত্মাসমূহের প্রশিক্ষণ, দরিদ্রদের সাহায্য, বিশ্বের সকল শ্রেণীর দুর্বলদের সহায়তা, সকল মানুষের প্রতি দয়া, ঈশ্বরের সৌরভ ছড়িয়ে দেওয়া এবং তার পবিত্র বাণীর মহিমার উন্নয়নের সাথে যুক্ত থাকতে হবে।” ইহার অবিচলিত অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সমাজের সবোর্ত্তম মঙ্গল সাধনের প্রতি অনমনীয় অঙ্গীকার এবং বিকাশের প্রক্রিয়াকে নৈতিক অবক্ষয় যা তার গতির প্রতি হুমকি স্বরূপ থেকে রক্ষা করার জন্য সজাগ প্রহরা দান। এই প্রক্রিয়ার চলমান প্রগতি দায়িত্বশীলতার এমন এক চেতনার দাবি জানায় যা মূল কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত বন্ধু এবং পরিবারের বৃত্তকে অতিক্রম করে গ্রামের সমস্ত মানুষকে পরিবেষ্টন করে এবং তার ক্রমান্বয় অর্জিত পরিপক্কতা হচ্ছে আব্দুল—বাহার এই আশ্বাসের প্রতি অবিচল আস্থা যে, তিনি প্রত্যেকটি আধ্যাত্মিক পরিষদকে তাঁর তত্ত্বাবধান এবং আশ্রয়ের মধ্যে আলিঙ্গনাবদ্ধ করবেন।

২৩। সমষ্টিগত এই চেতনার উত্থানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে পরিষদগুলির তাদের বিভিন্ন কাজে ক্রমবর্ধমান সমার্থ্য অর্জন যেমন তাদের সম্পদের তা আর্থিক বা অন্যান্য যাই হোক না কেন তার যথাযথ মূল্যায়ন ও ব্যবহার সমাজের কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদান এবং তাদের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে যার মধ্যে একসময় যুক্ত হতে পারে বিচক্ষণতার সাথে কমিটিগুলির নিয়োগ এবং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিমিত আকারে প্রশাসনিক ভবনের ব্যবস্থা করা।

এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যা বৃহৎ সংখ্যায় প্রণালীবদ্ধ কার্যক্রমে অংশগ্রহণে সহায়ক হবে এবং তাদের কর্মশক্তি ও সেবার মাধ্যমে অগ্রগতিতে অবদান রাখবে, তাও কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই সকল ক্ষেত্রেই সমাজের আধ্যাত্মিক মঙ্গলই পরিষদের চিন্তার সবার্গ্রে থাকে। যখন অনিবার্য কারণে কোন সমস্যার উদ্ভব হয়, হোক না তা কোনো কার্যক্রমের বিষয়ক বা ব্যক্তিদের মধ্যে, সেগুলি স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের নিকট প্রেরিত হবে, যা ইতিমধ্যে সমাজের সদস্যদের এমন এরূপ আস্থা অর্জন করবে যে, সকলেই সহায়তার জন্য তাদের শরণাপন্ন হবে। ইহার অর্থ এই যে, পরিষদ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখে নিয়েছে যে, কিভাবে বন্ধুদেরকে বিভেদ সৃষ্টিকারী পক্ষপাত যুক্ত মানসিকতা পরিহার করতে সাহায্য করা যেতে পারে, কিভাবে অত্যন্ত জটিল এবং সমস্যাশঙ্কুল পরিস্থিতিতেও একতার উৎস খুঁজে পাওয়া যেতে পারে এবং কিভাবে তাকে সর্বদা ন্যায়বিচারের মান সমন্নত রেখে ধীরে ধীরে, ভালোবাসার সাথে প্রতিপালন করা যেতে পারে।

২৪। আমরা অতীতে জানিয়েছিলাম যে, সমাজ যখন আকারে বৃদ্ধি পায় এবং ইহার প্রাণচাঞ্চল্য ধরে রাখার সামর্থ্য অর্জন করে তখন তারা আরও গভীরভাবে বৃহত্তর সমাজের অভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হবে এবং গ্রামগুলি যে সম্প্রসারণশীল সমস্যাগুলির সম্মুখীন তা সমাধানের যে পথগুলি তারা শিখেছেন এখন তা প্রয়োগ করার চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে। সমন্বয়ের প্রশ্ন, যা একন পর্যন্ত অর্জিত বৃদ্ধির জন্য এত অপরিহার্য ছিল তা পরিকল্পনার বিবর্তনশীল কর্ম—কাঠামোর জন্য এখন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। যখন কর্ম, পযার্লোচনা এবং পরামর্শের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধর্মের শিক্ষাগুলিকে অবস্থার উন্নতির জন্য ব্যবহার করার লক্ষে সচেষ্ট হয় তখন তাদের প্রচেষ্টার সাধুতা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এই অবস্থায় স্থানীয় পরিষদের উপর অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে প্রকল্পগুলির পরিচালক বা নিবার্হক হিসেবে নয় বরং নৈতিক কর্তৃত্বের কন্ঠস্বর হিসেবে।

২৫। আমাদের রিজওয়ান বাতার্য় তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক উদ্যোগের এবং তা যে শতার্বলী অবশ্যই পুরণ করবে তার কিছু বৈশিষ্টের বর্ণনা ছিল। কোন গ্রামে সাধারণত এই ক্ষেত্রে ও প্রচেষ্টা ক্ষুদ্র আকারে শুরু হয়, সম্ভবত বন্ধুদের একটি দলের অভ্যুদয়ের সাথে যারা কোন একটি নির্দিষ্ট সামাজিক অথবা অর্থনৈতিক প্রয়োজনকে চিহ্নিত করেছেন এবং এমন প্রত্যেকটি দল যথাযথ কর্মকাণ্ডে একটি সরল ধারাকে অরুসরণ করছে। উনিশ দিবসের ভোজানুষ্ঠানে প্রদত্ত পরামর্শ সমাজে ক্রমবর্ধমান সামাজিক সচেতনতার গঠনমূলক প্রকাশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। এই জাতীয় কর্মকাণ্ডের প্রকুতি যাই হোক না কেন স্থানীয় পরিষদকে অবশ্যই এই পথে সম্ভাব্য ফাঁদ সম্পর্কে মনোযোগি হতে হবে এবং যদি প্রয়োজন হয় তাহলে বন্ধুদেরকে তা এড়াতে সাহায্যও করতে পারে—যেমন অতি উচ্চ আকাক্সক্ষী প্রকল্পের লোভ, যেগুলি প্রচুর শক্তি গ্রাস করে ফেলে এবং অবশেষে তা অকার্যকর প্রমাণিত হয়, আর্থিক অনুদানের প্রলোভন যা পরিণামে হবে বাহা’ই নীতি থেকে বিচ্যুতি, প্রতারণামূলক ভাষায় পরিবেশিতপ্রতিশ্রম্নতিগুলি যা গ্রামগুলিকে তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত করবে এবং বিভক্তিকরণ এবং অনৈক্যের দিকে চালিত করবে। অবশেষে গ্রামে ইনষ্টিটিউট প্রক্রিয়ার শক্তি এবং ব্যক্তিদের মধ্যে বর্ধিত সামর্থ্যকে জন্ম দিয়েছে, তা বন্ধুদেরকে এমন পদ্ধতি এবং কর্মসূচির সুবিধা নিতে সক্ষম করবে যেগুলির কার্যকারীতা প্রমাণিত এবং যেগুলি এক বা একাধিক বাহা’ই অনুপ্রাণিত সংস্থা কতৃর্ক প্রস্তুত এবং তাকে আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দপ্তরের পরামর্শে বা সহায়তায় ক্লাস্টার পর্যায়ে প্রবর্তন করা হয়েছে। অধিকন্ত, পরিষদকে অবশ্যই স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামোর সাথে যোগাযোগ রাখা এবং ধীরে ধীরে ধর্মের উপস্থিতি গ্রামের অগ্রগতিতে ধর্ম যে প্রভাব বিস্তার করছে তার সম্পর্কে সচেতনতার স্তর উচ্চতর করা শিখতে হবে।

২৬। পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদগুলি শুধুমাত্র অল্প কিছু বৈশিষ্টগুলিরই প্রতিনিধিত্ব করছে যা বিশ্বের অনেক গ্রামে স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলি তাদের সমাজকে সেবা করার সময় ক্রমন্বয় অর্জন করবে, যে সকল সমাজে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যায় মানুষ তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে। যারা তাদের সুপ্ত সামর্থ্য এবং শক্তিগুলি ক্রমবধমানভাবে প্রকাশ করবে তখন প্রত্যেকটি গ্রামের অধিবাসীরা তাদেরকে মানব মন্ডলীর মধ্যে পরম করুনাময়ের বিশ্বস্ত ব্যক্তিবর্গ রূপে গণ্য করবে। এইভাবে এই পরিষদগুলি “উজ্জল প্রদীপ এবং স্বর্গীয় উদ্যগে পরিনত হবে যা থেকে পবিত্রতার সুঘ্রান সকল অঞ্চলে ছড়াইয়া যাবে এবং জ্ঞানের আলো সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর উপর বর্ষীত হবে। তাদের থেকে জীবনের চেতনা চারিদিকে প্রভাবিত হবে”।

২৭। এমন একটি অত্যুচ্ছ কল্পদৃষ্টি অবশ্যই বিশ্বের সকল স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের প্রতি সমান ভাবে প্রযোজ্য। এমন কি কোন প্রধান মহানগরেও একটি পরিষদের উন্নয়নের প্রকৃতিও মূলত উপরের বনর্নায় অন্যরূপ। পাথ্যকটি মূলত নির্ভর করে জনসংখ্যা এবং তার বৈচিত্রের উপরে। প্রথমটি পরিষদের অধিক্ষেত্র (এক্তিয়ারের এলাকা) কে বৃদ্ধির প্রয়োজন অনুযায়ী এলাকায় ভাগ করা এবং প্রত্যেকটি এমন এলাকায় ধর্মের প্রশাসনিক বিষয়াবলী পরিচালনা করার জন্য পদ্ধতির প্রচলন করা। দ্বিতীয়টি পরিষদকে অসংখ সামাজিক স্থানের সাথে পরিচিত হওয়ার দাবি জানায় যেখানে সবাই একত্রিত হয়, এই সামাজিক স্থানটি তাদের ভৌগলিক সীমার বাহিরেও থাকতে পারে এবং সেখানে যতদুর সম্ভব ঐশী শিক্ষার মধ্যে যে বিজ্ঞতা সন্নিবেশিত তা তাদেরকে  কাছে উপস্থানপন করবে। তা ছাড়াও পরিষদকে এলাকার শহর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো—সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক এর সাথে অধিকতর ব্যাপক পরিসর এবং সংখ্যায় বিজড়িত হওয়া শিক্ষতে হবে।

বাহা’ই প্রতিষ্ঠানসমূহে সেবাদান

২৮। আগামী পাঁচসালা পরিকল্পনা চলাকালে ধর্মের প্রশাসনিক কাজে আমরা যে অগ্রগতি দেখতে আগ্রহী তা পূর্ববর্তী পৃষ্টাগুলিতে বর্ণনা করতে গিয়ে আমাদেরকে এই বিষয়ে অভিভাবকের পুন:উচ্ছারিত সর্তকবাণীর কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেছেন, “আসুন আমরা সর্তক হই যেন ধর্মের প্রশাসনিক যন্ত্রের উৎকর্ষ সাধনে আমাদের পরম উদ্বেগে আমরা যেন যে ঐশী উদ্দেশ্যে তাকে সুষ্টি করা হয়েছে তা আমাদের দৃষ্টির আড়ালে না হয়ে যায়। তিনি বারংবার বিবৃত করেছেন যে “বাহা’ই প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে একটি উপায় স্বরুপ বিবেচনা করতে হবে স্বয়ং লক্ষ নয়”। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে এর লক্ষ হলো “একটি দ্বি—মুখী উদ্দেশ্য সাধন”। একদিকে যেমন তা “ধর্মের অবিচলিত এবং ক্রমান্বয় পরিচালিত প্রসারনের লক্ষ হবে যা এমন পথে অগ্রসর হবে যা একই সময় প্রশস্ত, যুক্তিসঙ্গত এবং সার্বজনীন”। অন্যদিকে তা ইতিমধ্যে অর্জিত কাজের অভ্যন্তরীন দৃঢ়করন নিশ্চিত করবো: তিনি আরো ব্যাখা করেছেন, “এটা ধর্মের মধ্যে যে গতিশীল শক্তিগুলি সুপ্ত রয়েছে সেগুলি যেন মানুষের জীবন এবং আচরন প্রকাশীত, গঠিত এবং আকার ধারনের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে একই সাথে বাহা’ই সমাজ যে বৈচিত্রময় উপাদান নিয়ে গঠিত তাদের মধ্যে চিন্তাভাবনার আদান প্রদান এবং তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।

২৯। আমাদের আন্তরিক আশা যে, আগামী পরিকল্পনার, বাহা’ই প্রশাসনের সকল স্তরে স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সুস্ত এবং সমন্বয়পূর্ন উন্নয়নে আপনাদের সকল প্রচেষ্টায় আপনারা বন্ধুদেরকে বিশ্বব্যাপি বৃদ্ধির যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া গতিবেগ অর্জন করছে তার আলোকে তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে সর্বাত্ত্বক সহায়তা দান করবেন। এই আশার বাস্তবায়ন বহুল অংশে নির্ভর করবে তাদের উপরে যাদেরকে এই সেবাদান করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা কোন আধ্যাত্মিক পরিষদে নির্বাচিত হতে পারে অথবা তার কোন একটি এজেন্সীতে নিয়োগ হতে পারে, তারা ইন্সটিটিউট কো—অডিনেটর নিয়োগ হতে পারে অথবা তারা আপনার একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত হতে পারে। তাদেরকে যে সুমহান অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়েছেন তা উপলব্ধি করতে হবে এবং সেই অনুগ্রহ তাদের জন্য যে সীমা নির্ধারন করে দিয়েছে বুঝতে হবে।

৩০। ধর্মের কোন প্রতিষ্ঠান এবং এজেন্সিতে সেবাদান করা নিসন্দেহে একটি অসাধারন  অনুগ্রহ। কিন্তু তা এমন না অন্য কোন ব্যাক্তি আকাঙ্খা করবে, এটা এমন একটি দায়িত্ব এবং কর্তব্য যার জন্য কোন নারী বা পুরুষকে এক সময় আহ্বান জানানো যেতে পারে। অবশ্যই এটা বোধগম্য যে যারাই বাহা’ই প্রশাসনের সাথে জড়িত তারা যথাযতই মান করতে পারেন যে তাদেরকে, যে কোন রূপে এমন একটি কাঠামো অংশ হওয়ার অনন্য সাধারন সম্মান প্রদান করা হয়েছে যার মাধ্যমে ধর্মের আত্মা প্রবাহিত হয়। একই সময় তাদের এমন মনে করা উচিৎ হবে না যে সেবা তারা প্রদান করছে তা তাদেরকে চতুর দিকে শিক্ষার যে প্রক্রিয়া শক্তি অর্জন করছে তারা তার বহিসীমায় কোথাও ক্রিয়াশীল এবং সেই প্রক্রিয়ার অন্তর্নিহিত দায়িত্বগুলি থেকে দায় মুক্ত । এটাও ধরে নেওয়া উচিৎ হবে না যে প্রশাসনিক সংস্থাগুলির সদস্যপদ তাদেরকে পবিত্র লিখনাবলীতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার তাদের নিজের উপলব্ধিকে প্রচার করার কিভাবে ঐশী শিক্ষাগুলিকে প্রয়োগ করা হবে, এবং সমাজকে ব্যক্তিগত পছন্দের কোন দিকে পরিচালিত করার সুয়োগ প্রদান করে। আধ্যাত্মিক পরিষদের সদস্যদের বিষয় অভিভাবক লিখেছেন যে, “তারা তাদের নিজের পচন্দ—অপছন্দগুলিকে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং প্রবনতাগুলিকে চুড়ান্তরূপে অগ্রাহ্য করে তাদের চেতনাকে ঐ সকল পদক্ষেপগুলির প্রতি কেন্দ্রীভূত করবে যা বাহা’ই সমাজের কল্যান এবং সুখের জন্য সহায়ক হবে এবং সকলের মঙ্গলের উন্নতি সাধন করবে। বাহা’ই প্রতিষ্ঠানসমূহ অবশ্যই বন্ধুদেরকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে  এবং ব্যক্তিবর্গ এবং সমাজগুলির নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু এই কার্যাবলী এই বাস্তবতাকে মেনে সম্পাদন করতে হবে যে ভালবাসাপূর্ন সেবাদান বাহা’ই প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতিকে পরিব্যপ্ত করে। কতৃত্ব এবং প্রভাবকে এই ভাবে শর্ত সাপেক্ষে করা যাদের প্রতি ধর্মের বিষয়াবলী পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে তাদের ত্যাগের প্রতি ঈঙ্গিত বহণ করে। আব্দুল বাহা কি আমাদের বলেন নাই যে, “যখন একখণ্ড লোহা চুলিতে নিক্ষেপ করা হয় তার ধাতব গুণাবলী যেমন কৃষ্ণতা, শীতলতা এবং কাঠিন্য, যা মানব জগতের গুনাবলীর প্রতিক, তা প্রচ্ছন্ন এবং অদৃশ্য হয়ে যায় এবং আগুনের পৃথক গুণাবলী রক্তিমতা, উষ্ণতা ও তারল্য, যা ঐশী রাজ্যের গুণাবলী সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়”। যেরুপ তিনি নিশ্চিত করেছেন ‘তোমরা অবশ্যই এই বিষয়ে, অর্থাৎ মানব জাতির সেবাদানে তোমাদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করবে এবং যখন তোমাদের জীবন সম্পন্ন করবে, তখন আনন্দীত হবে”।

৩১। প্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা ভালভাবেই জানেন যে, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকটি হৃদয় এবং আত্মার ঈশ্বরের প্রেমের আগুন প্রজ্জ্বলিত রাখতে, শেখার অগ্রগতি এবং  সৎ ও প্রশংসণীয় চরিত্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় সকলকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আপনারা এবং আপনাদের সাহায্যকারীগণ অগ্রভাবে সেবাদানের যোগ্যতার সাথে আপনাদের দায়িত্ব পালন করছেন তা লক্ষ করে আমরা অত্যন্ত আনন্দ বোধ করি। যখন উত্তর আমেরিকার বাহাা’ই সমাজ ঐশী পরিকল্পনার ফলকলিপিতে তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনে প্রথম সাতসালা পরিকল্পনায় অংশগ্রহনে ব্রত হয়, তখন ১৯৩৮ সালের ২৫শে ডিসেম্বরে অভিভাবক সে দেশের বন্ধুগনের প্রতি একটি বেশ দীর্ঘ এবং জোরালো চিঠি লেখেন যা পরবর্তীকালে ‘দ্যা এ্যাডভেন্ট অব ডিভাইন জাষ্টিস’ নামে প্রকাশিত হয়। উপস্তিত দায়িত্বের প্রকৃতি বিশদ বর্ণনা করে চিঠিতে অভিভাবক সকল বাহা’ই উদ্যোগের সাফল্যের আধ্যাত্মিক পূর্বশর্তের উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে তিনি তিনটি সম্পর্কে বলেন যে সেগুলি “অগ্রগণ্য এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ রূপে লক্ষণীয়” আচরনের সাধূতা, নিস্পাপ ও পবিত্র জীব এবং নিতীবাচক পূর্ব ধারণা থেকে মুক্তি। বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আপনারা যদি ক্লাস্টারের পরে ক্লাস্টারে বাহা’উল্লাহর প্রত্যাদেশের চেতনা দ্বারা উদ্ভদ করার গ্রহব্যাপী বাহা’ই সমাজের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে তাঁর (অভিভাবক) মন্তব্যগুলির তাৎপর্যের প্রতি মনোযোগ প্রদান করেন তাহলে আপনারা উপকৃত হবেন।

৩২। চরিত্রের সাধুতা প্রসঙ্গে শৌগি এফেন্দি বলেছেন, “ন্যায়বিচার, সাম্যভাব, সত্যবাদিতা, সততা, পক্ষপাতশূণ্যতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা” অবশ্যই “বাহা’ই সমাজ জীবনের প্রত্যেকটি স্তকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করবে।” যদিও সমাজের সকল সদস্যের প্রতি প্রযোজ্য, তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, সেটা প্রধাণত সমাজের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ, হোক তারা স্থানীয়, আঞ্চলিক অথবা জাতীয়, তাদের নৈতিক চরিত্রের বোধকে সেই নীতিভ্রষ্টকারী প্রভাবের যা দুনীর্তিগ্রস্ত রাজনৈতিক জীবন এত স্পষ্টভাবে প্রকাশিত করে । তার বিপরীত সুস্পষ্টভাবে দাঁড়াতে হবে। অভিভাবক এই “অস্বাভাবিকভাবে বিসৃঙ্খলিত বিশ্বে” “বিচ্যুতিহীন ন্যায়পরায়ণতা একটি অক্ষয় চেতনার” আহ্বান জানিয়েছেন এবং বাহা’উল্লাহ্ ও আব্দুল—বাহা’র লেখনাবলী থেকে ব্যাপক উদ্ধৃতির মাধ্যমে বন্ধুদের দৃষ্টি সততা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার সর্বোচ্চ মানদন্ডের দিকে আকৃষ্ট করেছেন। তিনি জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন, পারিবারিক জীবনে তারা যে কর্মেই নিয়োজিত থাকুক না কেন, ধর্ম বা তাদের সমাজের প্রতি তাদের যে কোন সেবায়, চরিত্রের সাধুতা প্রতিফলিত করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ধর্ম ও তাদের সমাজে মানুষের জন্য প্রত্যেকটি সেবা, কর্মে ধর্মের বিধানসমূহ এবং তাঁর নীতি আপোষহীনভাবে পালন করতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্তরবর্তী বছরগুলিতে রাজনৈতিক জীবনে সর্বত্র আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি ঘটেছে, রাষ্ট্রনায়কোচিত বিজ্ঞতার ধারণা তার সমস্ত অর্থ হারিয়ে ফেলেছে, প্রগতির নামে এমন নীতিগুলি গ্রহণ করা হচ্ছে যা শুধুমাত্র গুটি কয়েক মানুষের অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ করে এবং কপটতাকে কিভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংশ করতে দেওয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত স্পষ্ট। ধর্মের চারিত্রিক মানদণ্ড তুলে ধরার জন্য সেই সময় বন্ধুদের জন্য যে বৃহৎ প্রচেষ্টার প্রয়োজন ছিল, তাহলে এখন পৃথিবী যখন অসততাকে পুরস্কৃত করে, দূর্নীতিকে উৎসাহ দান করে এবং সততাকে একটি আলোচনা সাপেক্ষ পণ্য হিসেবে গণ্য করে তখন এই মানদণ্ড তুলে ধরার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা কতগুণই না বেশি হবে। সমাজের ভিত্তির জন্য এই বিভ্রান্তি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক, তাই বাহা’ই কর্মকান্ডে যারা সম্পৃক্ত তাদের সংকল্প অবশ্যই অবিচল থাকতে হবে যেন নি:স্বার্থের সামান্যতম চিন্তাও তাদের চিন্তা—ভাবনাকে আচ্ছন্ন করতে না পারে। তাই প্রত্যেকটি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের কো—অর্ডিনেটরগণ, প্রত্যেক এরিয়া টিচিং কমিটির সদস্য, প্রত্যেক সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্য এবং তাদের সহায়তাকারীগণ, প্রত্যেকটি স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং জাতীয় বাহা’ই প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণ, তা নির্বাচিত হোক বা নিয়োগকৃত, সকলকে তাদের হৃদয়ে নৈতিক সাধুতার নিহিতার্থগুলির তাৎপর্য বিষয়ে অভিভাবক যা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন তার প্রতি গভীরভাবে চিন্তা করা উচিৎ। যেন তাদের কর্মকাণ্ড অবরুদ্ধ এবং ক্লান্ত মানবজাতির জন্য তাদের মহান নিয়তি এবং অন্তর্নিহিত মহত্বের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

৩৩। আজও বাহা’ই উদ্যগের সাফল্যর জন্য নিষফলক এবং পবিত্র জীবনের গুরুত্ব শালিনতাবোধ, পবিত্রতা, মিতাচার, শোভনতা এবং নির্মল মন” যার নিহিতার্থ সম্পর্কে অভিভাবকের দ্বিধাহীন মন্তব্য কোন অংশে কম প্রাসঙ্গিক নয়। বন্ধুদেরকে এমন জীবনের দিকে আহ্বান জানানোর সময় যা অশালীনতা, কলহ, মেকী মানদণ্ড যা একটি প্রকৃতভাবই ক্রটিযুক্ত নৈতিক ব্যবস্থা থাকে মেনে নেয়, স্থায়ীত্ব দান এবং প্রতিপালন করে থেকে বিশুদ্ধ তার ভাষা ছিলো দ্বার্থহীন। এমন একটি ক্রটিপূর্ণ ব্যবস্থা যা আজকে গোটা পৃথিবীর উপর তার প্রভাব বিস্তার করছে, আপনাদেরকে তার প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন আমাদের নাই, এই গ্রহের প্রত্যান্ত স্থান পর্যন্তও তার প্রলোভনের দ্বারা বিমোহিত। তা সত্তেও আমরাসুনিদিষ্টভাবে পবিত্রতা সম্পকিত কতিপয় বিষয় উল্লেখ করতে নিজেকে বাধ্য মনে করছি। যুবকদের যাদের প্রতি অভিভাবকের আহ্বান ছিলো সবচাইতে বেশী আকুল, তাদের মন ও মনের উপর যে শক্তিগুলি ক্রিয়াশীল সেগুলি নিসন্দেহে সর্বনাশা। পবিত্র ও নিষকলঙ্ক থাকার উপদেশ ঐ শক্তিগুলিকে প্রতিরোধ করাতে একটি পর্যায় প্রযন্তই সাহায্য করতে পারে। এই বিষয় আমাদের যা বুঝা প্রয়োজন তা হচ্ছে স্বয়ং পিতামাতারা তাদের জীবনে যা বেছে নিয়েছেন তা দ্বারা ঐ কচি মনগুলি কতটা প্রভাবিত হয়েছে, কেননা তারা যতই অনিচ্ছাকৃত ভাবে এবং সরল চিত্তে সেগুলি বেছে থাকুন না কেন তাতে কিছু আসে যায় না, এমন সিদ্ধান্তগুলি এই জগতের উন্মত্ততাকে ক্ষমতার প্রতি তার মুগ্ধতা প্রতিষ্টার প্রতি ভক্তি, বিলাসিতার ভালোবাসা, তুচ্ছ বিষয়াবলীর প্রতি আসক্তি, সহিংসতাকে গৌর্বানিত করা তার প্রবনতা এবং আত্ম তৃপ্তির প্রতি এই জগতের আচ্ছন্নতা মত বিষয়গুলিকে মেনে নেয়। এটা অবশ্যই বুঝতে হবে যে যেই বিচ্ছিন্নতা ও হতাশা দ্বারা যত অধিক সংখ্যাক লোক কষ্টভাগ করছে  তা একটি সর্বগ্রাসী বস্তুবাদ দ্বারা পরিবেশের সৃষ্টি। বন্ধুগণ এর আলোকেই আমাদেরকে বাহা’উল্লাহ্ এই বাণীর তাৎপর্য বুঝতে হবে যে “বর্তমান যুগের ব্যবস্থা” কে অবশ্যই গুটিয়ে ফেলা হবে এবং তার পরিবর্তে একটি নতুন ব্যবস্থা বিস্তৃত করা হবে”। আজকে পৃথিবীর সর্বত্র যুবকরাই পরিবঞ্চনার সর্বাধিক উৎসাহি সমর্থক এবং ধর্মের সবচেয়ে আন্তরিক প্রবক্তা, আমরা নিশ্চত যে তাদের সংখ্যা প্রতি বছরে বৃদ্ধি পাবে। তাদের প্রত্যেকে যেন পবিত্রতা দ্বারা সুশোভিত জীবনের বদান্যতা সম্পর্কে জানতে পারে এবং পবিত্র প্রণালীর মাধ্যমে যে শক্তি প্রবাহিত হচ্ছে তা নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতে শিখতে পারে।

৩৪। অতএব অভিভাবক পক্ষপাতের বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন এবং সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে বাহা’ইদের মধ্যে কোন প্রকার বিভক্তি বা ফাটল স্বয়ং ধর্মের উদ্দেশ্য, তার নিতীসমূহ এবং আদর্শের সাথে সম্পুর্ন বেমানান। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে বন্ধুরা “অন্য জাতি, শ্রেণী, ধর্ম বা বর্ণের মানুষের সাথে”  তাদের ব্যবহারে পক্ষপাত থেকে সম্পুর্ণ সস্তি প্রকাশ করবে। বর্ণগত কুসংস্কারের নিদিষ্ট প্রশ্নে তিনি দীর্ঘ আলোচনায় অবর্তীন হোন তিনি বলেন যে “বর্ণবাদের অবক্ষয় আমেরিকার সমাজের বর্ণকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে এবং গোটা মার্কিন সমাজের কাঠামোকে আক্রমন করেছে। এবং তিনি সে সময় দৃঢ়রূপে ঘোষণা করেছিলেন যে এটাকে বাহা’ই সমাজের বিবর্তনের বর্তমান ধাপে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেনি্জং প্রশ্ন বলে গণ্য করতে হবে। এই বিষয়ে আমেরিকান জাতি এবং তার অভ্যন্তরে বিকাশমান বাহা’ই সমাজের গৃহিত পদক্ষেপ সমূহের শক্তি বা দূর্বলতার উদ্ধে বাস্তবতা হলে যে সকল প্রকার কুসংস্কার  যেমন বর্ণগত, শ্রেণী সম্পকৃত, জাতি, লিঙ্গ, ধর্মগত মানবজাতির উপর তা শক্তি চাপ অব্যহত রেখেছে। যদিও এটা সত্য যে গণ আলোচনার স্তরে যে সকল মিথ্যা ধ্যান ধারণা এই সব কুসংস্কারকে জন্ম দেয় তার খণ্ডণে অনেক বড় বড় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে কিন্তু তা এখনো সমাজের কাঠামোর মধ্যে প্রবিত্তি রয়েছে এবং তা ব্যক্তির মানকে গভীর ভাবে অঙ্কিত। এটা সকলের নিকট স্পষ্ট হতে হবে গ্রহব্যাপী পরিকল্পনার বর্তমান ধারাবাহিকতা দ্বারা যে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে তা তার গৃহীত পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে, যে পদ্ধতি তা ব্যবহার করে, প্রত্যেকটি মানব দলে, কোন শ্রেণী বা ধর্ম নির্বিশেষে, কারো জাতি বা বর্ণের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে, লিঙ্গ অথবা সামাজিক মর্যাদা না দেখে সার্মথ্য গড়ে তুলে সভ্যতার অগ্রগতির জন্য উঠে দাড়াতে এবং নিজ অবদান রাখতে চায়। আমরা পার্থনা করি যে রূপে দৃঢ়তার সাথে পরিকল্পনা উন্মুচিত হচ্ছেতা মানবতার সুদীর্ঘ শৈশবে এক দলকে নিপীড়ন করার জন্য উদ্ভাবিত অন্য দলের প্রতিটি মাধ্যমগুলিকে নিষ্কৃয় করার সম্ভাবনা তার মধ্যে রয়েছে।

৩৫। প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষা প্রক্রিয়া অবশ্যই আধ্যাত্মিক অবস্থার উৎসাহ প্রদান করেছে যার উল্লেখ অভিভাবক দ্যা এ্যাডভেন্ট অব ডিভাইন জাস্টিস ছাড়াও তাঁর অন্যান্য অনেক লিখনাবলীতে উল্লেখ করেছেন যা বাহা’ই সমাজ জীবনকে অবশ্যই বৈশিষ্ট মণ্ডিত করে। একতার চেতনা যা বন্ধুদেরকে উদ্দীপ্ত করবে, ভালোবাসার সম্পর্ক যা তাদের পরস্পরের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ করবে, ঐশী চুক্তি পত্রের দৃঢ়তা যা তাদেরকে শক্তি দান করে এবং ঐশী সহায়তা তাদের নির্ভরতা এবং আস্থা তার মধ্যে কয়েকটি। এটা বিশেষভাবে লক্ষনীয় যে, এমন অপরিহার্য গুণাবলীর উন্নতি সাধন হচ্ছে সেবাদানের জন্য সক্ষমতা অর্জনের অনুসঙ্গ হিসেবে এমন এক পরিবেশ যা নিয়মাবদ্ধ কার্যকলাপ চর্চাকে উৎসাহ দান করে। এই জাতীয় পরিবেশের চচার্ উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্য এবং তাদের  সহায়কগণকে দুইটি পরস্পর জড়িত মৌলিক নীতির গুরুত্ব স্বীকার করতে হবে: এক দিকে বাহা’উল্লাহর প্রত্যাদেশে চরিত্রের যে সুউচ্ছ মান নিদিষ্ট করে তার বিষয় কোন আপোষ হতে পারে না, সেই মান কোন ক্রমেই কমানো যাবে না, সকলকেই তাদের দৃষ্টি সেই সুউচ্ছ মানের দিকে আবদ্ধ থাকবে। অপর দিকে এটাও স্বীকার করতে হবে যে মানুষ হিসেবে আমরা পূর্ণতা থেকে অনেক দূরে; যা সকলের নিকট হতে আশা করা যেতে পারে তা হলো প্রতিনিয়ত আন্তরিক প্রচেষ্টা। নিজেকে অন্যদের চেয়ে বেশী ধার্মীক ভাবার মনোভাব পরিহার করতে হবে।

৩৬। একটি পবিত্র বাহা’ই জীবনের জন্য অপরিহায্য আধ্যাত্মিক গুণাবলী ছাড়াও রয়েছে চিন্তার অভ্যাসগুলি যা বিশ্ব ব্যাপী পরিকল্পনার উন্মোচনকে প্রভাবিত করে তাই সেগুলির বিকাশকে সাংস্কৃতিক স্তরে উৎসাহিত করতে হবে। তাছাড়া এমন প্রবনতা সমূহও রয়েছে যেগুলিকে ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে হবে। এই প্রবনতাগুলির মধ্যে অনেকই বৃহত্তর সমাজে প্রচলিত ধ্যানধারণা দ্বারা শক্তি প্রাপাত হয় এবং যার বাহা’ই কার্যক্রমে প্রবেশ এমন অযৌক্তিও না এই ক্ষেত্রে বন্ধুরা যে চ্যালেঞ্জের সন্মুখিত তার বিশালতা আমাদের থেকে লুকানো নয়। তাদেরকে (বাহা’ইদেরকে) ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে সমাজের জীবনে অন্তর্ভূক্ত হতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। তার শিক্ষামূলক কর্মসূচী থেকে উপকৃত হতে বানিজ্য ও পেশাজীবনে উৎকৃষ্টতা লাভ করতে, তার যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে এবং কলা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির লক্ষ নিজেদেরকে নিযুক্ত করতে বলা হয়েছে। একই সময় তারা যেন কখনো সমাজের রুপান্তর তার প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিসমূহের এমন মাত্রায় পুনগঠন যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায় নাই। ধর্মের লক্ষ তাদের দৃষ্টির আড়ালে না হয়, যে লক্ষ হলেঅ এই লক্ষে তাদেরকে চিন্তা ও কর্ম পন্থার অপযাপ্তত্ সম্পর্কে অতন্ত সচেতন থাকতে হবে এটা করতে হবে কোন উন্নাসীকতা, কোন ধরনের গোপনীয়তার মনোভাব পরিহার করে এবং সমাজের প্রতি কোন ধরনের অপ্রয়োজনীয় সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ না করে। এই প্রসঙ্গে আমরা কিছু নিদিষ্ট বিষয় উল্লেখ করতে চাই।

৩৭। বন্ধুরা পরিকল্পনা সম্পকৃত সার্বজনীন বিচারালয়ের বার্তাগুলি এত অধ্যবসায়ের সাথে অধ্যয়নের জন্য এগিয়ে আসছেন তা উৎসাহজনক। প্রাপ্ত দিকনির্দেশনাকে বাস্তবে প্রয়োগের চেষ্টা এবং অভিজ্ঞতা থেকে শিখার সময়ে যে আলোচনার জন্ম হয় তার স্তরটি অসাধারন। কিন্তু আমরা স্পষ্ট ভাবে এটাও লক্ষ করেছি যে সব অঞ্চলে, বন্ধুরা বার্তাগুলি প্রদক্ত দিক নির্দেশনাকে তার সম্পুর্নতায় বুঝার চেষ্টা করেছেন সেখানে অর্জনগুলি অধিকতর দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং যখন বাক্য বাক্যের  অংশগুলিকে প্রসঙ্গ থেকে আলাদা করা হয় এবং বিছিন্নভাবে দেখা হয় তখন সমস্যা দেখা দেয়। ধর্মের প্রতিষ্ঠান এবং এজেন্সীগুলির উচিৎ হবে বিশ্বাসীদেরকে সাহায্য করা যেন তারা বিশ্লেষণ করুক সংকুচিত না, অর্থের প্রতি মনোযোগী হোক, বিছিন্ন ,শব্দ নিয়ে ব্যস্ত না হোক, কর্ম ক্ষেত্রের নিদিষ্ট দিক চিহৃিত করুক কিন্তু কর্ম ক্ষেত্রকে যেন পরস্পর থেকে বিছিন্ন না করে ফেলে। আমরা জানি এটা কোন সহজ কাজ না। সমাজের ভাষা দিনে দিনে স্লোগানে পরিণত হচ্ছে। আমরা আশা করি যে, বন্ধুরা অধ্যয়ন চক্রে পুর্ণবহুল স্তর বিশিষ্ট চিন্তা নিয়ে কাজ করার এবং উপলব্ধি অর্জন করা যে অর্ভ্যাসগুলি গড়ে তুলেছেন তা কার্যক্রমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসারিত হবে।

৩৮। একটি সম্পূর্ণ বিষয়কে একটি বা দুইটি আকর্ষণীয় বাক্যাংশে হ্রাস করার অভ্যাসটির সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত প্রবনতা হচ্ছে এমন সব জায়গা দ্বিবিভাজন বা বিরুদ্ধ কল্পনা করা যেখানে তা অনুপস্তিত। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন যে একটি সম্পূর্ন সংগতিপূর্ণ একটি বিষয়ে উপস্থাপিত ধারণাগুলিকে এক অপরের বিরুদ্ধে দাড় করানো না হয়। শৌগি এফেন্দী তাঁর পক্ষে লেখা একটি চিঠিতে সর্তক করেছেন “আমাদেরকে (বাহা’ই) শিক্ষাকে একটি মহত্ব, সামঞ্জস্যপুর্ণ একক হিসেবে দেখতে হবে, না কি দুইটি জোড়ালো এবং পরস্পর বিরোধী দুইটি বক্তব্য যা বিপরিত অর্থবহন করে, খঁুজে বের করা তাদের মাঝখানেই তাদেরকে দুইটাকে একতাবদ্ধ করার যোগ সুত্র রয়েছে।” আমরা এটা লক্ষ করে কতই না উৎসাহ বোধ করছি যে, পরিকল্পনার বিধানগুলির সম্পর্কে উপলব্ধি বৃদ্ধির সাথে সাথে অতীতের অনেক ভূল ধারণাগুলি ঝরে পড়েছে। প্রসারণ এবং দৃঢ়করণ ব্যক্তি উদ্যাগে এবং যৌথ অভিযান, অভ্যন্তরীন চরিত্রের পরিশোধন এবং নিস্বার্থ সেবার প্রতি উৎসর্গ বাহা’ই জীবনের এই দিকগুলির মধ্যে সমন্বয়পূর্ণ সম্পর্কের প্রতি এখন সহজেই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। আমরা একইভাবে এটা জেনে আনন্দীত যে, বন্ধুরা এখন সর্তক যেন তারা এই জাতীয় নতুন কোন মিথ্যা দ্বিবিভাজন তাদের চিন্তায় অনুপ্রবেশ করতে না পারে। তারা ভালোভাবেই অবগত আছেন যে, কোন বৃদ্ধির কর্মসূচী ভিন্ন ভিন্ন উপাদানগুলি পরস্পর পরিপুরক। বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং যে সকল এ্যাজেন্সিগুলি তাকে সমর্থন যোগাচ্ছে সেসগুলি পরস্পরের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত মনে করার প্রবনতা যা বৃহত্তর সমাজে খুবই প্রচলিত, তা বাহা’ই সমাজ কতৃর্ক এড়ানো হচ্ছে।

৩৯। পরিশেষে সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, যা আমরা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে অনুসরন করেছি যা ঘটনাসমূহকে একটি প্রক্রিয়ার আলোকে দেখার সামথ্য বৃদ্ধি দ্বারা চিহৃিত। ধর্মের প্রথম জাতীয় পরিকল্পনাগুলি সম্পর্কে অভিভাবকের প্রথম দিকের বার্তাসমূহের একটি সযত্ন পাঠ থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে বন্ধুদেরকে শুরু থেকেই যে প্রসস্ত প্রক্রিয়াগুলি তাদের কার্যকলাপকে সংজ্ঞায়িত করে তার সম্পর্কে সচেতন হতে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু এমন এক পৃথিবীতে যা ক্রমান্বয় ঘটনাকে  বা খুব বেশী হলে প্রকল্পগুলিকে তুলে ধরা ব্যস্ত যার মানসিকতা তার পরিতৃপ্তি লাভ করে প্রতাশার অনুভূতি এবং তা থেকে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তা থেকে সেই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রম যে স্তরের উৎসর্গের প্রয়োজন হয় তা অসাধারন উদ্যামের দাবী করে। বাহা’ই সমাজের প্রসারণ এবং দৃঢ়করণ একাধিক পরস্পর ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ে গঠিত, যার প্রত্যেকই মানবতার বাহা’উল্লাহর নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার কল্পদৃষ্টির দিকে মানবতার অগ্রযাত্রায় নিজ নিজ অবদান রাখে। যে কোন প্রক্রিয়ার জন্য গৃহিত পদক্ষেপ গুলির মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী অনুষ্ঠান আয়োজন করার ব্যবস্থা রয়েছে এবং সময় সময় কার্যক্রমগুলি বিশেষ প্রকল্পের রূপ নেয় যার নিদিষ্ট একটি শুরু এবং শেষ থাকে। কিন্তু যদি একটি প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক উন্মচনের মধ্যে কোন অনুষ্ঠান (ঘটনা) চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তা প্রক্রিয়ার সুস্থ্য বিকাশ কে ব্যাহত করবে। যদি কোন ক্লাস্টারে গৃহিত প্রকল্পগুলি ঐ স্থানে উন্মোচনশীল প্রক্রিয়াগুলির সুনিদিষ্ট প্রয়োজনগুলির অধীনে করা না হয় তাহলে সেগুলি এমন ফলপ্রসু হবে না।

৪০। পরস্পরের প্রতি ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়াগুলি যারা তাদের সম্পুর্ণতায় ধর্মের সম্প্রসারণ এবং দৃঢ়করণনকে জন্ম দেয় তার প্রকৃতি বুঝা পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উপলব্ধিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টায় আপনি এবং আপনাদের সাহায্যকারীদের এই ধারনাকে মনে রাখতে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। যে ধারণা বর্তমান গ্রহ ব্যাপী উদ্যোগ, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের বস্তুত তা ঐশী পরিকল্পনার প্রত্যেকটি ধাপের অন্তরতম স্থান দখল করে রেখেছে, অথাৎ প্রগতি অর্জিত হয় তার তিনটি অংশগ্রহণকারীর উন্নতির উপর মানব ইতিহাস ধরে এই তিনটির মধ্যে মিথাক্রিয়ার প্রত্যেকটি বাঁক্যে সমসার সমন্মুখিন হয়েছেন। ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য বিক্ষোপ করেছে, প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রতি আত্মসম্পন্ন দাবি করে এবং সমাজ নিজের জন্য প্রাধান্য দাবি করেছে। প্রত্যেকটি সমাজ এই সম্পর্ককে যা এই তিনটি পক্ষকে একত্রবেধে রাখে, কোন কোন ভাবে সংস্থায়ীত্ব করার চেষ্ট করেছে যা স্তিতিশীলতার যুগগুলিকে জন্ম দিয়েছে যা সময় সময় অশান্তি বিপরীত ছিলো। আজকে এই অন্তবতীর্ যুগে, যখন মা তার সমস্টিগত পরিপক্কপাত অর্জনের জন্য সংগ্রাম করে এই জাতীয় সম্পর্কই নয় স্বয়ং ব্যক্তি; সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং সমাজের ধারনাই অসংখ্যা সংকট দ্বারা আক্রন্ত। বিশ্বব্যপী কতৃত্বের সংকটই তার যথেষ্ট প্রমাণ। কতৃর্ত্বের অপব্যবহার এতই বেদনা এবং তার প্রতি এমনই গভীর সন্দেহ এবং ক্রোধের উদ্রেক হয় যে পৃথিবী ক্রমন্বয় শাসনের অসাধ্য হয়ে পড়েছে এই পযার্য় সামাজিক বন্ধন দূর্বল হয়ে যাওয়ার ফলে আরো অধিকতর বিপজ্জনক হয়েছে।

৪১। বাহা’উল্লাহর প্রত্যেক অনুসারী ভালভাবে জানে যে তাঁর প্রত্যাদেশের উদ্দে্যশ হলো নতুন সৃষ্টিকে সভায় আনয়ন করা। যেই মাত্র তাঁহার প্রথম আহ্বান ধ্বনী তাঁহার ওষ্টদ্বয় হইতে নি:সৃত হইয়াছে সমগ্র সৃষ্টিজগতকে আমুল পরিবর্তন করা হইয়াছিল এবং যাহারা স্বর্গসমূহে রহিয়াছে এবং যাহারা পৃথিবীতে রহিয়াছে তাহাদের সকলের হৃদয়ের অন্তর্স্থল আন্দোলীত হইয়াছে। ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং সমাজ ঐশী পরিকল্পনার তিন মুখ্য চরিত্র তাঁর প্রত্যাদেশের প্রত্যক্ষ প্রভাবে আকার ধারন করছে এবং প্রত্যেকটির একটি নতুন ধারনা যা একটি বয়:প্রাপ্ত মানবজাতির জন্য যথাযথ আবিভূত হচ্ছে। যে সম্পর্কগুলি প্রগাঢ় রুপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং সেই সত্যতা নির্মানকারী শক্তিগুলিকে অস্তিত্বের রাজ্যে আনয়ন করছে যা শুধূ মাত্র তাঁর আইনের প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে বিমুক্ত হতে পারে। মৌলিক স্তরে এই সম্পর্কগুলির বৈশিষ্ট হলো সহযোগীতা এবং পরস্পর আদান প্রদান, যা মহাবিশ্বকে যে অন্তসংযুক্তি পরিচালনা করে তারই প্রকাশ। সুতরাং ব্যক্তি তার ‘ব্যক্তিগত লাভ’ এবং স্বার্থপর সুবিধঅগুলির বিবেচনা না করে, নিজেকে “সর্বাধিকারী ঈশ্বরের একজন সেবক” রূপে দেখতে পায় যার একমাত্র আকাঙ্খা হলো তাঁর বিধানগুলি পালন করা, এইভাবে বন্ধুরা এই সত্যের স্বীকৃতিতে উপনিত হয় যে, “আবেগের প্রাচুর্য, শুভ চিন্তা এবং প্রচেষ্টার প্রাপ্যতা” সামান্যই কাজে আসে যদি তাদের প্রবাহ সঠিক প্রনালিতে পরিচালিত করা না হয়, যদি ব্যক্তির অশৃঙ্খলিত স্বাধীনতাকে পরস্পর পরামর্শ এবং ত্যাগ দ্বারা প্রাকাশিত করা না হয়; এবং যদি সৃজনশীলতা এবং উদ্যাগের চেতনাকে সম্মলিত প্রচেষ্টা সর্বসাধারনের মঙ্গলের গভীরতর উপলব্ধী দ্বারা শক্তিশালী না করা হয়।” এইভাবে সকলেই সহজেই বুঝতে পারবে কোন ক্ষেত্রগুলি এমন যেখানে একক ব্যক্তি তার সর্বাত্তম প্রচেষ্টা অনুশীলন করতে পারে এবং ক্ষেত্র এমন যা কেবল মাত্র প্রতিষ্ঠানের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। বন্ধুরা “সর্বান্তকরণে” তাদের প্রতিষ্ঠানের নিদের্শনাগুলি পালন করে, যেন যেভাবে আব্দুল—বাহা বলেছেন “বিষয়াবলী সুবিন্যস্ত এবং সুশৃঙ্খলিত” হতে পারে। এটা অবশ্যই অন্ধ আনুগত্য নয়; এটা এমন এক আনুগত্য যা একটি পরিপক্ক মানবজাতির উভয়কে চিহৃিত করে, যা বাহা’উল্লাহ্ নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার মত সুদূর প্রসারী একটি পদ্ধতির নিহিতার্থগুলি হৃদয়ঙ্গম করে।

৪২। এই প্রজ¦লিত আত্মাগুলির সারি থেকে যাদের সেই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলিতে সেবাদানের জন্য আহ্বান করা হয়েছে তারা অভিভাবকের বাণীর অর্থর্ ভালভাবে উপলব্ধি করে যে “তাদের কাজ নির্দেশ প্রদান করা নয় বরং পরামর্শ করা এবং পরামর্শ শুধু নিজেদের মধ্যে নয় বরং যতদূর সম্ভব বন্ধুদের সাথে যাদের তারা প্রতিনিধিত্ব করে।” তারা কখনো এই ধারনার দিকে পরিচালিত হবে না যে ধর্মের দেহের প্রধান অলঙ্কারসমূহ, যারা অন্যদের থেকে সামর্থ্য বা মেধায় সহজাতভাবে শ্রেষ্ট এবং ধর্মের শিক্ষা এবং নীতিসমূহের একমাত্র সমর্থক”। তারা অত্যন্ত ন¤্রতা সহকারে তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করবে এবং তাদের খোলা মন, ন্যায় বিচার এবং কর্তব্য সম্পর্কে তাদের সুউচ্চ বোধ, তাদের অকপটতা, তাদের বিনয়, বন্ধুদের ধর্মের এবং মানবতার কল্যাণ ও স্বার্থের্র প্রতি তাদের অবিমিশ্র নিষ্ঠা, যাদের তারা সেবাদান করেন শুধু তাদের আস্থা এবং প্রকৃত সমর্থন এবং সম্মান অর্জন নয় বরং তাদের শ্রদ্ধা ও অকৃত্তিম ভালবাসা অর্জন করতে প্রতিষ্ঠান সমূহ নিজেকে মানব সম্ভাবনার প্রতিপালনের মাধ্যম হিসেবে দেখে, যারা সম্ভাবনাগুলির জন্য ফলদায়ক এবং গুণ সম্পন্ন পথগুলি উন্মোচন নিশ্চীত করবে।

৪৩। এখন ব্যক্তিবর্গ এবং এমন প্রতিষ্ঠান সমূহের সমন্বয়ে গঠিত মহত্তম নামের সমাজ এমন আধ্যাত্মিকভাবে শক্তি প্রাপ্ত ক্ষেত্রে পরিনত হয়, যার শক্তি একতাবদ্ধ কার্যক্রমে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এটাই সেই সমাজ যার সম্পর্কে আব্দুল বাহা বলেছেন: যখন আত্মাগুলি প্রকৃত বিশ্বাসী হয়ে উঠে তারা এক অপরের সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক অর্জন করবে এবং এমন স্নেহশীলতা প্রদর্শন করবে যা এই জগতের নয়। তারা প্রত্যেকেই ঐশী প্রেমের চুমুক দ্বারা পরমোল্লাসিত হবে এবং তাদের এই ঐক্য সেই সংযোগ চিরস্থায়ী হবে। সে আত্মাগুলি যারা নিজেদের সত্তাকে বিস্মরনের কাছে সম্পর্ন করবে এবং নিজেদেরকে মানবীয় ক্রটিবিচুতি থেকে মুক্ত করবে এবং নিজেদেরকে মানবীয় দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে স্বাধীন করবে এবং সন্দেহাতীতভাবে একতার স্বর্গীয় দীপ্তি দ্বারা আলোকিত হবে এবং পৃথিবীতে প্রকৃত ঐক্য উপনীত হবে যার মৃত্যু নেই।

৪৪। যখন অধিক সংখ্যায় ধারণক্ষম আত্মাগুলি ঈশ্বরের ধর্মকে আলিঙ্গন করবে এবং ইতিমধ্যেই যারা চলমান উদ্যাগে অংশগ্রহণ করছে তাদের সাথে নিজের ভাগ্যকে সম্মৃক্ত করবে, তখন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সমাজের উন্নতি এবং কর্মকাণ্ড নিশ্চিত রূপে অগ্রসর হওয়ার একটি শক্তিশালী প্রেরণা লাভ করবে। কিংকর্তব্য বিস্মৃত মানবতা যেন বাহা’উল্লাহর অনুসারীগন এই তিনটি মূখ্য চরিত্রের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে তুলছেন তার মধ্যে সমষ্টিগত জীবনের এমন ধারা দেখতে পারে যা মানবতাকে তার সুউচ্চ নিয়তির দিকে চালিত করবে। পবিত্র সমাধিগুলিতে এটাই আমাদের আকুল প্রার্থনা।

-সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়।