সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়ের বার্তা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১
সার্বজনীন ন্যায় বিচারালয়
৩০ ডিসেম্বর, ২০২১
মহাদেশীয় উপদেষ্টা বোর্ডসমূহের সম্মেলনের প্রতি
পরম প্রিয় বাহাই বন্ধুগণ,
১। এই বছর আমরা রিজওয়ানে বর্ণনা করেছিলাম যে, কিভাবে বিগত পঁচিশ বছর যাবত বাহাই বিশ্ব একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গিয়েছে যা তাদেরকে শেখার, বিকশিত হওয়ার এবং মানবতার সেবা করার স্বপ্নাতীত সামর্থ্য প্রদান করেছে। কিন্তু এই সময়ের অর্জনগুলি যতই উজ্জ্বল হোক না কেন, সেগুলিকে অবশ্যই যা আসছে তার সামনে নিষ্প্রভ হয়ে যেতে হবে। সম্প্রতি শুরু হওয়া পরিকল্পনারক্রমসমূহের সমাপ্ত হওয়ার সময় বাহাই সমাজকে এমন সামর্থ্যসমূহ অর্জন করতে হবে বর্তমানে যার ক্ষীণতম আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। আগামী দিনগুলিতে আপনাদের আলোচনার মধ্যে আপনারা বিশ্লেষণ করে দেখবেন এমন একটি সুরক্ষিত ও শক্তিশালী সমাজ গড়ে তোলার জন্য ঠিক কী প্রয়োজন?
২। বাহা’উল্লাহ্ বলেন যে, “যে উদ্দেশ্যে নশ্বর মানুষ পরম শূন্যতা থেকে অস্তিত্বলোকে পদার্পণ করেছে, তা হলো যেন তারা পৃথিবীর উন্নতির জন্য কাজ করতে পারে এবং ঐক্য ও সম্প্রীতির সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে পারে।” তিনি এমন শিক্ষাসমূহ প্রকাশ করেছেন যা এটাকে সম্ভব করে। এমন এক সমাজ নির্মাণ করতে হবে যা সচেতনভাবে এই সমষ্টিগত উদ্দেশ্যের অনুসরণ করবে— যে দায়িত্ব কেবল এই প্রজন্মেরই নয় বরং আগামী প্রজন্মগুলিরও, এবং বাহা’উল্লাহ্র অনুসারীগণ তাদের সকলকেই স্বাগত জানায় যারা এই উদ্যোগে তাদের পাশাপাশি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর অর্থ হলো কিভাবে স্পন্দনশীল বহির্মুখী সমাজ গড়ে তোলা যায়, অথার্ৎ সম্প্রদায়গুলি শিখছে কিভাবে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক প্রগতি আনয়ন করা যায়, অর্থাৎ সেই প্রগতির গতিপথকে যে সকল কথোপকথন প্রভাবিত করে তাতে অবদান রাখতে শেখা। প্রচেষ্টার এই সকল ক্ষেত্রগুলি স্বভাবতই পরিচিত। এক দৃষ্টিকোন থেকে তারা প্রত্যেকেই বেশ স্বতন্ত্র, প্রত্যেকের নিজস্ব বিশিষ্টতা এবং প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তথাপি তারা সকলেই মানব আত্মার মধ্যে সুপ্ত শক্তিসমূহের জাগরণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং সেগুলিকে সমাজের উন্নতির দিকে প্রবাহিত কের, অভিভাবকের বর্ণনা অনুযায়ী সমষ্টিগতভাবে তারা হলো “ধর্মের সমাজ নির্মাণকারী শক্তি” অবমুক্ত করার মাধ্যম। বাহা’উল্লাহ্র ধর্মের এই সহজাত শক্তি যে কোনো বাহাই সমাজে মানবজাতির সেবা এবং ঈশ্বরীয় বাণী প্রসারের প্রারম্ভিক প্রচেষ্টাসমূহের মধ্যেও দৃশ্যমান। যদিও তাঁর প্রত্যাদেশ যে বিশ্বসমাজের পূর্বাভাস দিয়েছে তা অবশ্যই বহুদূর, কিন্তু এখনযেসম্প্রদায়সমূহ তাঁর শিক্ষাগুলি তাদের সামাজিক বাস্তবতার আলোকে প্রয়োগ করা শিখছে তার সংখ্যা প্রচুর। সেই আত্মাগুলি কতই না আশীর্বাদপ্রাপ্ত যারা তাদের পদক্ষেপগুলির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং ঐশী শিক্ষায় রূপায়িত সমাজের অভ্যুদয়ের জন্য প্রচেষ্টারত।
৩। গ্রহব্যাপী পরিকল্পনাসমূহের ধারা যা রিজওয়ানে শুরু হবে,তা úূর্ণ পঁচিশ বছর স্থায়ী হবে। ইহা ধর্মের তরীকে বাহাই যুগের তৃতীয় শতাব্দীতে নিয়ে যাবে এবং রিজওয়ান ২০৪৬—এ গিয়ে সমাপ্ত হবে। এই সময়কালে বাহাই বিশ্ব একটি একক লক্ষ্যে মনোনিবেশ করবে; ধর্মের সমাজ নির্মাণকারী শক্তির ক্রমবর্ধমান মাত্রায় উন্মোচন। এই লক্ষ্যের অনুসরণের জন্য প্রয়োজন হবে ব্যক্তিবিশ্বাসী, স্থানীয় সম্প্রদায় এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠানসমূহের সামর্থ্য এর অধিকতর বৃদ্ধি। পরিকল্পনার অন্তর্গত এই তিন নিত্য মুখ্য চরিত্রের প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে এবং প্রত্যেকেরই সামর্থ্য এবং গুণাবলি রয়েছে যেগুলো বিকশিত করতে হবে। কিন্তু কেউই এককভাবে তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা প্রকাশ করতে পারবে না। তাদের অগ্রসরমান পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করলেই তাদের শক্তিসমূহ একতাবদ্ধ এবং বহুগুণ বর্ধিত হবে। আব্দুল—বাহা ব্যাখ্যা করেছেন যে, কোনো জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরস্পর সহযোগিতা ও সহায়তার গুণাবলি যত বেশি প্রকাশ পাবে ‘তত বেশি মানবসমাজ প্রগতি এবং সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হবে’। বাহাই ধর্মে এই নীতিটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সম্প্রদায় এর মিথস্ক্রিয়াকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও রূপায়িত করে, ধর্মের কায়াকে নৈতিক বল এবং আত্মিক সুস্থতা দান করে।
৪। পরিকল্পনার অন্তর্গত প্রক্রিয়াগুলিরমাধ্যমে উত্থিত প্রজ¦লিত আত্মাগুলি বাহা’উল্লাহ্র শিক্ষাসমূহ যা“প্রত্যেকটি ব্যাধির অবিসংবাদিত প্রতিকার” প্রগাঢ়তরউপলব্ধি অর্জনের এবং সেগুলিকে সমাজের প্রয়োজনে প্রয়োগ করার প্রচেষ্টায় নিমগ্ন। তারা সকলের সমৃদ্ধির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ, তারাস্বীকার করে যে, ব্যক্তির কল্যাণ, বৃহত্তর সমাজের কল্যাণের উপর নির্ভরশীল। তারা কর্তব্যনিষ্ঠ নাগরিক, যারা দলাদলি এবং বৈষয়িক ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দিতা এড়িয়ে চলে। এর পরিবর্তে তারা বিভেদসমূহের ঊর্ধ্বেওঠার, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মাধ্যম হিসেবে পরামর্শের ব্যবহার কেপ্রসারেরপ্রচেষ্টায় নিবেদিত চিত্ত। তারা বিশ্বস্ততা, সহযোগিতা এবং সহনশীলতার গুণাবলীওমনোভাব এরউপর গুরুত্ব দেয়, যে গুলিএকটি স্থিতিশীল সমাজ ব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদানস্বরূপ। তারা মানব প্রগতির জন্য যুক্তিও বিজ্ঞানের অপরিহার্যতার মুখ্য সমর্থক। তারা সহিষ্ণুতাওসহমর্মিতারপ্রবক্তা এবং মানবজাতির সহজাত একতা তাদের মননেরসর্বোচ্চস্থানে অধিষ্ঠিত, ফলতঃ তাদের দৃষ্টিতে সকলেই সম্ভাব্য অংশীদার ও সহযোগী, এমন কি যেসব গোষ্ঠীগুলিঐতিহ্যগতভাবে একে অপরের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন তাদের মধ্যেও সহমর্মিতার অনুভূতি লালনকরতে তারা সচেষ্ট। চতুর্দিকে ক্রিয়াশীল বস্তুবাদী শক্তিগুলি সম্পর্কে তারা সচেতন, এবং পৃথিবীতে অবিরত চলমান নানা অবিচারসমূহ সম্পর্কে তারাসম্পূর্ণ সজাগ, সেইসাথে একতার সৃজনশীল শক্তি এবং পরার্থপরতার সামর্থ্য সম্পর্কেও তাদের দৃষ্টিস্বচ্ছ। প্রকৃত ধর্ম হৃদয়গুলিকে রূপান্তর ও অবিশ^াসকে অতিক্রম করার যেশক্তি ধারণ করে তা তাদের নিকট দৃশ্যমান, আর তাই ভবিষ্যত সম্ভাবনার প্রতি আস্থা রেখে তারা প্রগতির অনুকুলআবহ সৃজনে পরিশ্রমরত। তারা প্রত্যেক আত্মার বিবেকের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেনিজেদের বিশ্বাস অকুন্ঠ চিত্তে সবার সাথে ভাগ করে নেয়তবে তারা কখনোই নিজেদের আদর্শ অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয় না। একদিকে তারা এমন আচরণ করে না যে সকল প্রশ্নের উত্তর তাদের কাছে আছে, অপরদিকেইতিমধ্যে তারা কী শিখেছে এবং এখনো তাদের কী শেখার প্রয়োজন রয়েছে সে বিষয়ে তাদের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ্যাকশন ও রিফ্লেকশন—এর ছন্দে এগিয়ে যাওয়ায় প্রচেষ্টায় কোনো সাময়িক ব্যর্থতা তাদের বিচলিত করে না। যেসকল স্থানে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মানুষ এই চরিত্রের সম্প্রদায় গড়ে তুলতে সাহায্য করছে, সেই সকল স্থানে মানুষের সামাজিক ও অন্তরস্থ জীবন উভয় ক্ষেত্রেই রূপান্তর ঘটাতে ধর্মের শক্তি ক্রমবর্ধমানভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। আমরা নিশ্চিত, পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় লক্ষ্যের ঐকান্তিক অনুসরণ এমন অনেক অনেক সম্প্রদায় উদ্ভবের কারণ হবে।
ক্লাস্টারের অগ্রগমন
৫। ধর্মের সমাজ নির্মাণকারী শক্তির ব্যাপক প্রকাশের জন্য প্রথম এবং সবোর্পরি প্রয়োজন হলো পৃথিবীর প্রত্যেকটি অঞ্চলে দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়ার অধিকতর অগ্রগতি। বাহা’উল্লাহ্র প্রত্যাদেশের আলোর বিচ্ছুরণ যা মূলত আধ্যাত্মিক কর্মোদ্যোগ তার আরও ব্যাপকপ্রসার এবং তাঁর ধর্মের শিকড়কে সমাজের মাটিতে গভীরতরভাবে প্রোথিত করার পরিমাপযোগ্য ফলাফল রয়েছে, আর তা হচ্ছে— যে সব ক্লাস্টারে বৃদ্ধির কর্মসূচীর সূচনা করা হয়েছে তার সংখ্যা এবং সেই সব ক্লাস্টারে উপনীত তীব্রতার মাত্রা। বর্তমানে উভয় মাত্রাতেই ত্বরিত অগ্রগতির উপায় বিদ্যমান। গ্রহব্যাপী পরিকল্পনাসমূহের বর্তমান ধারায় যে লক্ষ্যপূরণ করার জন্য মহত্তম নামেরবাহাক সম্প্রদায়কে আকুলভাবে সচেষ্ট হতে হবে তা হলো পৃথিবীর সকল ক্লাস্টারে নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করা। এই দুরূহলক্ষ্যের তাৎপর্য এই যে, কার্যক্রমগুলিকে অভূতপূর্ব মাত্রায় প্রশস্ততর এবং প্রবলতর করতে হবে। নয়সালা পরিকল্পনার মধ্যে অবশ্যই এই লক্ষ্যের দিকে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করতে হবে।
৬। প্রাথমিক পদক্ষেপস্বরূপ আমরা আহ্বান জানাবো যে, আপনারা জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ এবং আঞ্চলিক বাহাই কাউন্সিলসমূহকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সাহায্য করুন যেন, তাদের অঞ্চলগুলিকে ক্লাস্টারে ভাগ করার পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন করা হলে তারা উপকৃত হবে কি না। আপনারা জানেন যে, একটি ক্লাস্টারকে এমন একটি এলাকা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যেখানে পরিকল্পনার কার্যক্রমের উদ্দীপন পরিচালনযোগ্য এবং টেকসইভাবে করা যেতে পারে। বিগত একুশ বছরে, ক্লাস্টারের “পরিচালনযোগ্য” আকার সম্পর্কে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক কিছু শেখা হয়েছে। কিছু কিছু দেশে বৃদ্ধির ফলস্বরূপ এই আকার পরিমার্জনের বিষয় ইতিমধ্যেই বিবেচনাধীন। অনেক ক্ষেত্রে এই জাতীয় পুনর্মূল্যায়ন কোনো পরিবর্তনের কারণ হবে না। কিন্তু কতিপয় ক্ষেত্রে তার ফলে কোনো ক্লাস্টারকে বিভক্ত অথবা আকারে হ্রাস করা যেতে পাের, আবার কোনো ক্লাস্টারের আয়তন বৃদ্ধিও পেতে পারে। প্রাকৃতিক কারণে জনবিরল এলাকাগুলিকে ক্লাস্টার পদ্ধতির আওতা থেকে বাদও দেওয়া যেতে পারে। অবশ্যই সে সকল এলাকায় বসবাসকারী বিশ্বাসীরা তাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী কার্যক্রমের মূলকাঠামোর যে উপাদানগুলি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেগুলি যতটা সম্ভব গ্রহণ করবেন।
৭। অব্যাহত উন্নয়নের পথে ক্লাস্টারসমূহের ধারাবাহিক অগ্রগতি সম্প্রদায়ের প্রসারণ এবং দৃঢ়করণের জন্য একটি মৌলিক নকশারূপে বহাল থাকবে। উন্নয়নের গতিপথেরযে বৈশিষ্ট্যগুলিকে অনুসরণ করতে হবে, বিশেষ করে যেগুলি এই পথে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাইলস্টোনগুলিকে চিহ্নিত কের, সেগুলির সাথে বন্ধুরা আমাদের পূর্ববতীর্ বার্তাসমূহ এবং তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ভালোভাবেই অবগত আছেন, তাই আমরা পূর্বে যা বলেছি তার পুনরুল্লেখ প্রয়োজন মনে করছি না। একসালা পরিকল্পনার শেষে আমরা আশা করছি যে, বৃদ্ধির প্রকল্পগুলি ৬০০০—এর অধিক ক্লাস্টারে চলমান থাকবে এবং তার মধ্যে প্রায় ৫০০০ দ্বিতীয় মাইলস্টোন অতিক্রম করে থাকবে এবং তার মধ্যে ১৩০০ ক্লাস্টারে বিশ্বাসীরা আরও এগিয়ে যাবে।এই সংখ্যাগুলিকে আগামী নয় বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে হবে। প্রত্যেকটি দেশে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলি নির্দিষ্ট হয়ে যাবার পর, আমরা আপনাদেরকে জাতীয় পরিষদ এবং আঞ্চলিক কাউন্সিলগুলির সাথে কাজ করার জন্য বলব যেন পরিকল্পনা চলাকালীন পর্যায়ক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মাইলস্টোন অতিক্রম করতে পারে এমন ক্লাস্টারের সংখ্যা সম্পর্কে একটা পূর্বাভাষ দেয়া যেতে পারে। মনে রাখা দরকার যে,এর উদ্দেশ্য শুধু একটি তথ্যভিত্তিক অনুমান: যার প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা যেতে পারে এবং তার পিছনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করার প্রয়োজন নাই। তাই আমরা অনুরোধ করব যেন এই সকল পুনর্বিবেচনার ফল নওরোজের মধ্যে বাহাই বিশ্ব কেন্দ্রে প্রেরণ করবেন। তাহলে আমরা নয়সালা পরিকল্পনার জন্য রিজওয়ানে বাহাই বিশ্বের যৌথ আকাক্সক্ষা ঘোষণা করতে সক্ষম হব।
৮। আমরা সচেতন যে, কিছু অঞ্চল এবং দেশে প্রভুধর্ম উন্নতির প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এটা নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন যে, বাহাই বিশ্ব বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার বিষয়ে যা শিখেছে তার সুফল যেন এই সমস্ত অঞ্চলসমূহের নিকট পেঁৗছায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সুস্পষ্ট যে, একটি অঞ্চলের মধ্যে যে ক্লাস্টার তৃতীয় মাইলফলক অতিক্রম করেছে তার মূল্য অপরিমেয়। যখন কোনো নির্দিষ্ট ক্লাস্টারের বন্ধুরা এই মাত্রার অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় বহুবিধ সামর্থ্য অর্জন করে নেয় এবং সম্প্রদায় গঠনকারী প্রয়াসে আহরিত অন্তদৃর্ষ্টিসমূহ ছড়িয়ে দেয়ার এবং অর্জিত অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রক্রিয়াগুলিও আয়ত্ব করে নেয় তখন পাশ^বর্তী ক্লাস্টারগুলিতে প্রসারণ এবং দৃঢ়করণের ত্বড়িত বৃদ্ধি সম্ভবপর হয়ে উঠে। এই লক্ষ্য সামনে রেখে ইহা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক, নয়সালা পরিকল্পনার সময়বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার প্রগাঢ়তার এই মাত্রা যেন প্রত্যেক দেশ ও অঞ্চলেঅন্তত একটি ক্লাস্টারে অর্জিত হয়, ইহা পরিকল্পনার একটি মুখ্য উদ্দেশ্য যা বহু পবিত্র—উৎসগীর্কৃত আত্মার একাগ্র প্রচেষ্টার দাবী জানায়। এই লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে উপযোগী বিভিন্ন কর্মকৌশল প্রয়োগ করার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষা কেন্দ্র আপনাদের সহযোগী হবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সবার্গ্রে আন্তর্জাতিক এবং স্বদেশী পথিকৃতদের দল পাঠানো দরকার, যারা এই কর্ম কাঠামোর সাথে পরিচিত এবংপ্রভু ধর্মের জন্য বহু বছর যাবৎ ব্যাপক সময় ও উদ্যমউৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। আপনাদের জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ এবং আঞ্চলিক বাহাই কাউন্সিলগুলিকেএটা বোঝাতে হবে যেবিশ্বাসীদের উৎসাহিত করাঅত্যন্ত জরুরী, যেন তারা অতীতের অসংখ্য বীর আত্মাসমূহের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারে এবং প্রত্যেক অঞ্চলে ধর্মের আলোর উজ্জ্বল দীপ্তি নিশ্চিত করার জন্য উত্থিত হতে পারে। আমাদের দৃষ্টি বিশেষভাবে সে সকল দেশ, অঞ্চলও ক্লাস্টারগুলিতে নিবদ্ধ যেখানে অর্জিত শক্তি এবং অভিজ্ঞতা পুঞ্জিভূত হয়েছে যাতে তারাপথিকৃতদের এক প্রবাহসৃষ্টি করে, যেখানেসাহায্য প্রয়োজন সেখানেতা চালিত করে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তাও প্রদান করে। সহায়তার এই প্রবাহ আর একটি পথ যার মাধ্যমে সহাযোগিতা এবং পারস্পরিকসাহায্য, যা অগ্রগতির জন্য একান্ত প্রয়োজন তা একটি নিয়মাবদ্ধ কর্মরূপে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে।
৯। পূর্ববতী পরিকল্পনার ধারাগুলিতে, বিশেষ করে সর্বশেষ পাঁচসালা পরিকল্পনায়অর্জিত সাফল্যসমূহ শিক্ষাদান কার্যেঅসাধারণ অগ্রগতি ব্যতীত সম্ভব হতো না। এই শিক্ষাদান কার্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল আধ্যাত্মিক বিষয় ভিত্তিক কথোপকথনে সম্পৃক্ত হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করা, যে সামর্থ্য সম্পর্কে আপনাদের ২০১৫ সালের সম্মেলনের উদ্দেশ্যে আমাদের বার্তায় বিশ্লেষণ করা হয়েছিল, সেই বার্তায় আমরা বর্ণনা করেছিলাম যে, কিভাবে ইন্সটিটিউট কোর্সগুলিতে অংশগ্রহণ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে এই সামর্থ্যবিকশিত করা যায়। এটা প্রমাণিত যে, তৃণমূল পর্যায়েপ্রসারণশীল কার্যক্রমের ছক বিভিন্ন পরিস্থিতিকে উন্মুক্ত করে, যেখানে গ্রহণক্ষম আত্মাগুলি, যারা অনেক সময় সম্পূর্ণ পরিবার অথবা সমমনা মানুষের সমষ্টি, তারা অর্থবহ কথোপকথনে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়, যা প্রভু ধর্মের রূপকল্প এবং বাহা’উল্লাহ্র ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তাদের আগ্রহকে জাগ্রত করে তোলে। সময়ের সাথে সাথে এদের মধ্যে অনেক আত্মা নিজেকে বাহাই সম্প্রদায়ের একজন ভাবতে শুরু করে, বিশেষ করে যখন তারা সেবাদানের মাধ্যমে সম্প্রদায়ের জীবনধারায় অংশগ্রহণ করার আত্মবিশ্বাস অর্জন করে। সেই ব্যক্তি বেশি বা কম যে মাত্রাতেই সংযুক্ত থাকতে চায়, অবশ্যই সম্প্রদায় উহাকে স্বাগত জানায়। তবে বাহা’উল্লাহকে ঈশ্বরের প্রকাশরূপে স্বীকৃতি প্রদান এবং বাহাই সমাজের সদস্যপদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিশেষ সম্মান এবং দায়িত্ব গ্রহণ করা যে কোনো ব্যক্তিরই আধ্যাত্মিক উন্নতির ক্ষেত্রে একটি অনন্য সাধারণ মুহূর্ত, যা বাহাই কার্যক্রমসমূহে নিয়মিত অংশগ্রহণ অথবা বাহাই নীতিগুলির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা থেকে বেশ ভিন্ন। অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে কোনো এলাকায় সম্প্রদায় নির্মাণকারী প্রচেষ্টা এমন একটি আবহ সৃষ্টি করে যা কোনো ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণকে তুলনামূলকভাবে সহজ করে দেয়। যেখানেই এই সকল প্রচেষ্টা চলছে সেখানেই বন্ধুদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে, প্রভু ধর্মের দ্বারগুলি যেন সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত থাকে এবং যারা দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে তাদেরকে যেন উৎসাহ প্রদান করা হয়। যে সকল এলাকায় এই জাতীয় উদ্যোগ বেশ কিছু সময় যাবৎ সুপ্রতিষ্ঠিত, সেখানে অনেক বিশ^াসীরা দেখতে পাচ্ছেন যে, একটি স্পন্দনশীল, প্রসারমান কার্যকলাপের ছক স্বাভাবিকভাবেই পরিবারবর্গ, বন্ধুদের দল, এমন কি গুচ্ছ পরিবারসমূহকে প্রভু ধর্মে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত করে তুলছে। যে সকল স্থানে সমষ্টিগত পরিচয়ের অনুভূতি পোষণকারী ব্যক্তিদের মাঝে বাহাই সম্প্রদায়ে যোগদানের বিষয়টি খোলাখুলি ও মিলিতভাবে আলোচিত হয়, সে সকল স্থানে আত্মাগুলির পক্ষে একযোগে এই সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ আরও সহজ হয়ে যায়। বাহাই প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিশেষ করে স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলিকে এমন মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে যেখানে এইরূপ ঘটনা সম্ভব হবে সেখানে তারা নিশ্চিত করবে যে, কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা যেন অপসারণ করা হয়।
১০। আমরা আপনাদের এবং আপনাদের সাহায্যকারীদের বন্ধুৃদের আহ্বান জানাচ্ছি বিশ^াসীদের সহায়তা করতে তা তারা যেখানেই বসবাসরত হন না কেন, যেন তারা নিয়মিতভাবে তাদের চারপাশে প্রভু ধর্মের শিক্ষাদানের কার্যকর পন্থাগুলি সম্পর্কে ভেবে দেখেন এবং তাদের মনে শিক্ষাদানের জন্য সেই তীব্র আবেগ উদ্দীপ্ত করেন যা ঐশী রাজ্যের অনুমোদনকে আকৃষ্ট করবে। যে আত্মাগুলি বিশ্বাসের আশিস প্রাপ্ত হয়েছে তাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ইচ্ছা থাকে যে আত্মীয়—স্বজন, বন্ধু, সহপাঠী, সহকর্মী এমনকি যাদের সাথে পূর্বে কখনও সাক্ষাতও হয় নাই তাদের সঙ্গে কথোপকথোনের মাধ্যমে এই উপহার ভাগ করে নেওয়ার, তারা প্রত্যেক স্থানে এবং প্রতি মুহূর্তে শ্রবণ ইচ্ছুক কর্ণ অন্বেষণ করে। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি কার্যকর হয়। তাই বন্ধুরা যে স্থানে রয়েছেন সেখানে কোনটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর তা শেখার চলমান প্রক্রিয়ায় বিজড়িত থাকতে হবে।
সর্বাধিক অগ্রসর ক্লাস্টারসমূহ থেকে শেখা
১১। ছয়বছর পূর্বে আমরা আপনাদের জন্য এমন একটি ক্লাস্টারের বর্ণনা দিয়েছিলাম যেখানে বন্ধুরা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় তৃতীয় মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এতদূর অগ্রসর হওয়া একটি নির্দিষ্ট পাড়া বা গ্রামে সংঘটিত নিবিড় কার্যক্রমের ফলই কেবল নয়, বরং তা সেই ক্লাস্টারে বসবাসরত সকল বিশ্বাসীদের সমবেত প্রচেষ্টারও ফল; অন্য কথায় তা সম্প্রদায় নির্মাণ প্রচেষ্টায় সার্বজনীন অংশগ্রহণের উদীয়মান চেতনার প্রকাশ। বাস্তবে এর অর্থ দাঁড়ায়, একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাহাইদের সংহত করা যারা সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিকল্পনার কর্ম কাঠামোকে নিজেদের পরিবেশের বাস্তবতা অনুযায়ী প্রয়োগ করছে। এটার জন্য অপরিহার্য পরিবারসমূহ এবং একক বিশ্বাসীদের একত্রে কাজ করা এবং সচেতনভাবে নিজেদেরকে একটি নিউক্লিয়াস হিসেবে দেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। বন্ধুদের এই গ্রুপগুলি যে সকল নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত সেগুলিকে তাদের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অংশগ্রহণের চক্রকে প্রসারণ করতে শুরু করে—নেটওয়ার্কগুলি কর্মস্থল অথবা অধ্যয়ন, স্থানীয় বিদ্যালয় অথবা সামাজিক অন্যকোনো মিলনস্থানে সৃষ্টি হয়েছিল—তাছাড়াও যারা তাদের সাথে সেবাদানের জন্য এগিয়ে এসেছে তাদেরকে সাহচর্য প্রদানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল। এই প্রচেষ্টাসমূহের মূল্য অপরিসীম। এমনকি যখন কোনো ক্লাস্টারে একাধিক নিবিড় বৃদ্ধির কার্যক্রমের কেন্দ্রের উন্নতি হতে থাকে, তখনও ক্লাস্টারের অবশিষ্ট অংশে যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে তা কার্যক্রমের একটি বৃহৎ অংশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এই বিষয়ে আমরা ইহাও জানি যে, কতিপয় ক্লাস্টারে প্রভু ধর্মের প্রতি গ্রহণশীল কোনো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী যারা সমস্ত ক্লাস্টারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে তাদের কাছে পেঁৗছানোর জন্য পদ্ধতিগত পদক্ষেপগুলিগ্রহণ করা হচ্ছে। এটাকে সম্প্রদায় নির্মাণে একটি বিশেষায়িত রূপ বলে দেখা যেতে পারে যা অব্যাহতভাবে সম্ভাবনাময় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। পরিকল্পনার সকল প্রকার কাজে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে বন্ধুদের জন্য একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা এবং একে অপরের মধ্যে শিক্ষাদানের আনন্দ উদ্রেক করার অনেক সুযোগ আবির্ভর্ূত হয়।
১২। স্বাভাবিকভাবেই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গ্রহণশীল পাড়া বা গ্রামগুলো কার্যক্রমের জন্য বিশেষ মনোযোগের কেন্দ্র ছিল। যখনই স্থানীয় অধিবাসীরা বৃহৎ সংখ্যায় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা আরম্ভ করে, তখনই সেই অবস্থার সহজাত জটিলতা সামলানোর জন্য সমন্বয়ের প্রতি অধিক মনোযোগ প্রদান করতে হবে। প্রত্যেকটি নিবিড় কার্যক্রমের কেন্দ্রে পরিবারগুলোর দলে সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে উঠে, যারা পাশ্ববর্তী পরিবারসমূহকে অনুরূপ কার্যক্রমের বিস্তৃত আলিঙ্গনে আনার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে সমাজ গঠনমূলক কার্যক্রম সংগঠিত করে, তখন বন্ধুদের ঘরোয়া নেটওয়ার্ক চলমান প্রয়াসগুলিকে উৎসাহ এবং সহায়তা প্রদান করে। এই সকল স্থানে দৈনন্দিন জীবনের এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যেখানে উপাসনা এবং সেবা এমন একটি কাক্সিক্ষত কার্যক্রম যাতে অনেক ব্যক্তি একত্রে অংশগ্রহণ করে। এইরূপ সামাজিক সমাবেশগুলো, যা অনেক ক্ষেত্রে শিবির এবং উৎসবের আকার গ্রহণ করে, তা অনুপ্রেরণাদায়ক ও সুপরিকল্পিতভাবে প্রায়শই সংঘঠিত করা হয় এবং সেখানে যন্ত্রসঙ্গীত ও গানের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি থাকে। সকল প্রকার শিল্পকলা, যা সূচনালগ্ন থেকেই একটি সমাজের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা আনন্দদান, সুদৃঢ় একতার বন্ধন, জ্ঞানের প্রসার এবং উপলব্ধির গভীরকরণ এবং পাশাপাশি বৃহত্তর সমাজের মানুষকে প্রভু ধর্মের নীতিসমূহ সম্পর্কে অবগত করানোর এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমহিসেবে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বহির্মুখিতার প্রতি তীক্ষè মনোযোগ প্রদান বজায় থাকে; যে সকল আত্মা এখনো প্রভু ধর্মের সাথে পরিচিত নন, তাদের সাথে সমৃদ্ধিশীল কর্মছক—এর ফল ভাগ করে নেওয়ার পথ খঁুজে বের করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে।
১৩। এই সব কিছুর মধ্যে আমরা একটি সুনিদিষ্ট হৃদয়গ্রাহী ঘটনা লক্ষ্য করেছি, যার প্রাথমিক আভাসকে আমরা আপনাদের ২০১৫ সালের সম্মেলনের উদ্দেশ্যে প্রেরিত বার্তায় একটি নতুন সীমান্তরূপে বর্ণনা করেছিলাম। যদিও বৃহৎ সংখ্যায় মানুষকে আলিঙ্গন করা সম্পর্কে শেখা যে কোনো ক্লাস্টার যা তৃতীয় মাইলফলক অতিক্রম করেছে তার একটি বৈশিষ্ট্য, তথাপি যখন এক সময় কোনো বিশেষ এলাকার জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সম্প্রদায় নির্মাণকারী কার্যক্রমে যোগ দেয় তখন স্বাভাবিকভাবেই বন্ধুদের মনোযোগের কেন্দ্র বিস্তৃত হতে থাকে। এটা একটি ক্লাস্টারের শুধু একটি বা কয়েকটি পাড়া বা একটি গ্রামে বাস্তবায়িত হতে পারে, ক্লাস্টারের অন্যান্য অংশ তখনও হয়তো সেই পর্যায়ে পেঁৗছায় নাই। কিন্তু এই সকল এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ে পরিশ্রমরত বন্ধুদের চিন্তা ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের কাছাকাছি বসবাসরত সকলের অগ্রগতি এবং কল্যাণের উপর নিবদ্ধ হচ্ছে। বাহাই প্রতিষ্ঠানগুলি শিশু এবং কিশোরদের সম্পূর্ণ একটি প্রজন্মের, যাদের বেশিরভাগ বা কোনো ক্ষেত্রে সকলেই ইতিমধ্যেই সম্প্রদায় নির্মাণকারী কার্যক্রমের সাথে জড়িত, তাদের আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে আরও গভীরভাবে অনুভব করছেন। স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহ এলাকার কতৃর্পক্ষ এবং স্থানীয় নেতৃবর্গের সাথে তাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করছে এবং আশেপাশের প্রয়োজনগুলির প্রতি সাড়া দিয়ে জুনিয়র ইয়ুথ, যুবক, নারী, পরিবারসমূহ অথবা অন্যান্যদের দলগুলি দ্বারা গৃহীত ক্রমবর্ধমান সামাজিক কার্যক্রমগুলির দিকে আরও বেশি মনোনিবেশ করছে। এই কার্যক্রমগুলির স্তর এবং বৈচিত্র্য এমনই যে সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যদেরকে একটি গ্রাম বা পাড়ায় সেবাদানের জন্য একাধিক সহকারী নিয়োগ করতে হচ্ছে, যাতে প্রত্যেক সহকারী, এক বা একাধিক কর্মধারা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করতে পারে এবং চলমান প্রক্রিয়াসমূহে গতি সঞ্চার করতে পারে।
১৪। যে সকল স্থানে পরিকল্পনার কার্যক্রম এমন ব্যাপকতা অর্জন করেছে যে, এখন সেখানকার অধিবাসীরা নিজেদের অগ্রগতির গতিপথ নিজেরাই পরিচালনা করার লক্ষণীয় সামর্থ্য অর্জন করেছে, এবং প্রভু ধর্মের প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সীসমূহ এখন নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে একটি সম্প্রসারিত রূপকল্প অর্জন করেছে। অবশ্যই এই সকল দায়িত্বের মধ্যে অব্যহতভাবে সামর্থ্য গড়ে তোলার বলিষ্ঠ পদ্ধতি বিদ্যমান রাখা এবং যারা উদ্যোগ গ্রহণ করছে তাদের প্রতি সমর্থন দান করা এখনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু সমাজের অগ্রগতি আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় এই বিষয়ে নির্ভর করে যে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং এজেন্সীসমূহ তাদের পরিবেশে ক্রিয়াশীল সামাজিক শক্তিগুলি সম্পর্কে কতটুকু সচেতন এবং তাদের সমাজে গৃহীত উদ্যোগগুলির অখণ্ডতা বজায় রাখতে কতটা কর্মরত। একই সঙ্গে তাদের চতুর্পাশের সমাজের সাথে বাহাই সম্প্রদায়ের সম্পর্ক প্রগাঢ়ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক কাঠামো এবং অন্যদের সাথে অনানুষ্ঠানিক সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাহাই সম্প্রদায় তার নিজ যোগ্যতা বলে জনসাধারণের মধ্যে মুখ্য চরিত্ররূপে সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, এমন সম্প্রদায় যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত, এবং আধ্যাত্মিক ও জাগতিক অগ্রগতি সম্পর্কে শেখার একটি বিস্তৃত, সম্মিলিত প্রক্রিয়াকে তীব্রতর করতে তৎপর। একই সময় বৃহত্তর সমাজ বাহাই সামাজিক জীবনের নানা দিকও আলিঙ্গন করছে এবং ইহারঐক্য সৃজনকারী চেতনা আত্মীকরণ করছে ও তাহার ফলে সৃষ্ট গতিশীলতা বাহা’উল্লাহ্র মানবজাতির একতার রূপকল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে একটি সম্মিলিত আন্দোলনে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। অদ্যাবধি যে সকল স্থানে বাহাই সমাজ জীবনের আদর্শ এই মাত্রায় ব্যাপকতা অর্জন করেছে তার সংখ্যা তেমন বেশি নয়, কিন্তু তা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে প্রভু ধর্মের সমাজ বিনির্মাণকারী শক্তির অবমুক্তির এমন নিদর্শন পরিলক্ষিত হচ্ছে যা পূর্বে কখনো দেখা যায় নাই।
১৫। স্বাভাবিকভাবেই বাহাই কার্যক্রমের ব্যাপকতা এই মাত্রায় থাকার সম্ভাবনা সকল স্থানে থাকতে পারে না। এটা উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, কোনো ক্লাস্টারে অথবা একটি ক্লাস্টারের কোনো অংশের পার্থক্য সেই স্থানের জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ পরিস্থিতির বাস্তবতার আলোকে সৃষ্টি হয়। তদানুসারে, ধর্মের সমাজ বিনির্মাণকারী শক্তি বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পাবে। কিন্তু কোনো বিশেষ এলাকায় যারা বসবাস করেন তারা কতদূর বাহাই সমাজ জীবনকে আলিঙ্গন করেছেন তা নির্বিশেষে, এমন কি কোনো ক্লাস্টারে বৃদ্ধির কর্মসূচী কতটুকু তীব্রতা লাভ করেছে অথবা একটি পাড়া বা গ্রামে কার্যক্রমের স্তর যাই হোকনা কেন যে সকল বন্ধু তৃণমূল পর্যায়ে সেবাদান করছেন তারা যে সকল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন তা মূলত সকল স্থানে একই। তাদেরকে অবশ্যই নিজের বাস্তবতা উপলব্ধিকরে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে: উপস্থিত সম্ভাবনা এবং প্রয়োজনের আলোকে আগামী চক্র অথবা চক্রসমূহে কোন লক্ষ্যগুলির অনুধাবন যথাযথ হবে? আপনারা এবং আপনাদের সাহায্যকারীগণ এই প্রশ্ন উত্থাপন এবং যথোপযুক্ত কৌশল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আদর্শ অবস্থানে রয়েছেন। একই স্তরে অবস্থানরত ক্লাস্টারগুলির বন্ধুদের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শেখা যায়, কারণ যদি কোনো একটি সম্প্রদায় একই পথে চলার ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে তাহলে তারা পরবর্তী কোনো লক্ষ্য অর্জন করার জন্য চেষ্টা করতে হবে সে বিষয়ে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে। যখন বন্ধুরা তাদের সম্মুখে কি রয়েছে তা নিয়ে চিন্তা—ভাবনা করে তখন তারা স্পষ্টতই দেখতে পাবে যে, প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের নাগালে অন্তত একটি লক্ষ্য রয়েছে এবং প্রত্যেক লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার একটি পথ রয়েছে। সেই পথের দিকে তাকালে আমরা কি দেখতে পাই না যে, স্বয়ং বাহা’উল্লাহ্ একহাতে মানবজাতির বিষয়াবলির হাল ধরে রেখেছেন এবং অন্য হাত দিয়ে আমাদের সকলকে আহ্বান জানাচ্ছেন ত্বরান্বিত হও, ত্বরান্বিত হও।
সামাজিক রূপান্তরে অবদান
১৬। বাহা’উল্লাহ্র প্রত্যাদেশ মানবের অভ্যন্তরীন জীবন এবং তার সামাজিক পরিমণ্ডল উভয়ের রূপান্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট। শোগি এফেন্দীর পক্ষে লেখা একটি পত্রে বর্ণিত হয়েছে, সামাজিক পরিমণ্ডল কিভাবে সেই “আবহ” প্রদান করে, যার মধ্যে আত্মাগুলি আধ্যাত্মিকভাবে বিকশিত হতে পারে এবং ঈশ্বরের আলো তাঁর প্রত্যাদেশের মাধ্যমে সেই আত্মাগুলিতে পরিপূর্ণরূপে প্রতিফলিত হতে পারে”। কোনো একটি ক্লাস্টারে প্রভু ধর্মের সমাজ গঠনকারী শক্তিগুলি যে অবমুক্ত হচ্ছে তার একটি স্পষ্ট চিহ্ন হলো যে উক্ত ক্লাস্টারের অধিবাসীদের একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বাহাই শিক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বৃহত্তর সমাজের আধ্যাত্মিক চরিত্র এবং সামাজিক অবস্থা উন্নত করার সহায়তা প্রদানের জন্য প্রচেষ্টারত হয়। এই ক্ষেত্রে বাহাইদের বিশিষ্ট অবদান হচ্ছে সেবার জন্য সামর্থ্য বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা, এটা এমন এক প্রণালী যার মূলে রয়েছে যে কোনো জনগোষ্ঠীর নিজের উন্নয়নের মুখ্য চরিত্র হওয়ার সক্ষমতার প্রতি আস্থা স্থাপন।
১৭। কোনো ক্লাস্টারে সমাজ নির্মাণের কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে, সেই স্থানের বন্ধুরা সেখানকার সামাজিক অর্থনৈতিক অথবা সাংস্কৃতিক যে সকল বাধা তাদের আধ্যাত্মিক ও জাগতিক অগ্রগতিকে বিঘ্নিত করছে সে সম্পর্কে অধিকতর সচেতন হয়ে ওঠে। শিশু ও কিশোরদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তার অভাব, অল্পবয়সে বিয়ের চিরাচরিত প্রথার কারণে মেয়েদের প্রতি চাপ, পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত করার সাহায্য না থাকা, একটি গ্রামের কতিপয় মৌলিক প্রয়োজনগুলি পূরণের সংগ্রাম অথবা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘকালীন বিবাদের ফলস্বরূপ বৈরিতা ইত্যাদির মতো পরিস্থিতি যখন বাহাই সম্প্রদায়ের প্রসারণ ও দৃঢ়করণ প্রচেষ্টায় প্রভাব ফেলে তখন তারা ঐসকল পরিস্থিতির বাস্তবতার প্রতি সাড়া দিতে বাধ্য হয়। এই সকল পরিস্থিতির প্রতি মনোনিবেশ করলেই এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, ক্লাস্টারের অভ্যন্তরে তৃণমূল পর্যায়ে প্রসারণ ও দৃঢ়করণ, সামাজিক কর্মকাণ্ড, এবং বিদ্যমান কথোপকথনে অবদান রাখা—এ সবগুলোই একটি একক সমন্বিত এবং বহিমুর্খি প্রচেষ্টারই বিভিন্ন দিক। এই সকল প্রচেষ্টা কার্যক্রমের একটি অভিন্ন কাঠামোকে সামনে রেখে পরিচালিত হয় এবং সবোর্পরি তা কার্যক্রমগুলিতে সামগ্রিকভাবে সমন্বয় সাধন করে।
১৮। কোনো ক্লাস্টারে তৃণমূল পর্যায়ে যখন উপলব্ধ মানবসম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং কার্যক্রমের পরিধি প্রশস্ততর করার সামর্থ্য অর্জিত হয় তখন সেখানে সামাজিক উদ্যোগের প্রাথমিক জাগরণ দেখা যায়। সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা ধরে রাখার ক্ষেত্রে গ্রামগুলি বিশেষভাবে উর্বর ক্ষেত্র প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু শহরের পরিবেশে ও বন্ধুরা সামাজিক পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যক্রম এবং প্রকল্পসমূহ, অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় বিদ্যালয়, সুশীল সমাজের বিভিন্ন এজেন্সী এমন কি সরকারী সংস্থাগুলির সহায়তায় পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছেন। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, যার মধ্যে পরিবেশ, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিল্পকলা এবং শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত। নয়সালা পরিকল্পনাচলাকালীন, সুনির্দিষ্ট ইন্সটিটিউটের কোর্সগুলির অধ্যয়ন যখন এই ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে, তখন আমরা আশা করছি যে, আমরা মানুষের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বর্ধিত করার আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক প্রচেষ্টাগুলির দ্রুত সম্প্রসারণ দেখতে পারবো। এই সকল সমাজভিত্তিক কতিপয় উদ্যোগসমূহের জন্য মৌলিক প্রশাসনিক কাঠামোর প্রয়োজন হবে। যেখানে পরিস্থিতি অনুকূল, সেখানে স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলিকে উৎসাহিত করতে হবে যেন তারা কিভাবে নতুন, অনভিজ্ঞ উদ্যোগসমূহকে উত্তমরূপে লালন করা শিখতে পারে এবং সম্ভাবনাময় প্রচেষ্টাগুলির উন্নতি বিধান করতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ উদ্যোগের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য বাহাই অনুপ্রাণিত সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন হতে পারে এবং আমরা ধারণা করছি যে, আগামী পরিকল্পনার সময়কালে এই জাতীয় আরো সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদগুলিকে তাদের সমাজে তৃণমূল পর্যায়ে কি শেখা হচ্ছে তার সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত থাকতে হবে এবং তা থেকে উপলব্ধ অভিজ্ঞতাকে বিশ্লেষণ করতে হবে, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামাজিক উদ্যোগ বিষয়ে নিবেদিত একটি সংস্থা স্থাপন করার দাবি রাখবে। বাহাই বিশ্বের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা এটা লক্ষ্য করে আনন্দিত যে, ইতিমধ্যেই বাহাই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার উৎসাহ এবং সহায়তাদানের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে অনেকটা গতিবেগ সঞ্চারিত হয়েছে!
১৯। সামাজিক উদ্যোগে নিযুক্ত হওয়ার সামর্থ্যের সাথে নিবিঢ়ভাবে জড়িয়ে আছে সমাজের কথোপকথনে অবদান রাখার সামর্থ্য। এই সামর্থ্যমুলত মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব বিষয়ে কথোপকথনে অংশগ্রহণের এবং ঐ সব বিষয়ে বাহাই নীতি এবং বাহাই অভিজ্ঞতা ভিত্তিক দৃষ্টিকোণ প্রদান করার সামর্থ্য। বিষয়টাকে এইভাবে দেখলে, এটা এমন এক দক্ষতা যা অনেক বাহাই প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন তাদের পড়াশোনায় বা পেশাজীবনে চর্চা করার সুযোগ পায়। এই দক্ষতা ইন্সটিটিউট কোর্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিশীলিত হয়, এবং তার অধিকতর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ বাহাই আন্তর্জাতিক কমিউনিটি (বি, আই, সি) ও বহিঃসম্পর্ক বিষয়ক জাতীয় কার্যালয়ের কার্যক্রম এর মুল কেন্দ্র। তৃণমূল পর্যায়ে ধর্মের সমাজ বিনির্মাণকারী শক্তির উন্মোচনের ক্ষেত্রে এটা এমন একটি সামর্থ্য যার প্রয়োজন কোনো জনগোষ্ঠীর সাথে প্রসারণ এবং দৃঢ়করণের কাজের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসলে আরও বেড়ে যায়, যার ফলে কোনো এলাকায় বিদ্যমান সামাজিক সমস্যাগুলি এবং তার পাশাপাশি জনগোষ্ঠীসমূহের সেই সমস্যাগুলিকে কাটিয়ে ওঠার আকাক্সক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। সম্প্রদায় নির্মাণকারী উদ্যোগগুলিতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাহাই সম্প্রদায় যে বিষয়গুলিকে সামাজিক অগ্রগতির প্রতি প্রতিবন্ধকতা মনে করে এবং যে বিষয়গুলি তাদের সংস্পর্শে আসা মানুষের চিন্তা চেতনাকে উদ্বিগ্ন করে সেগুলির প্রতি একটি একতাবদ্ধ সত্তারূপে তাদের সুচিন্তিত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করার প্রয়োজনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিষয়টি স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। যে সকল স্থানে পরিকল্পনার কার্যক্রমগুলি ব্যাপকতার একটি বিশেষ মাত্রা অর্জন করেছে, সেখানে আধ্যাত্মিক পরিষদ নৈতিক অন্তর্দৃষ্টির উৎসরূপে আরও ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। সময়ের সাথে সাথে সামাজিক কথোপকথনে অবদান অধিকতর পদ্ধতিগত হয়ে ওঠে এবং বাহাইরা তাদের চারিপাশের মানুষকে গঠনমূলকভাবে কথোপকথনে অংশ নেওয়া ও ঐক্যমত খঁুজে বের করতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে পারদশীর্ হয়ে ওঠে। তারা সমাজের নেতৃবর্গ এবং কর্তৃপক্ষের সাথে প্রভু ধর্মের দৃষ্টিকোণ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগগুলি অন্বেষণ করতে থাকে এবং এমন ক্ষেত্রসমূহ সৃষ্টি করে যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও লক্ষ্যের প্রতিনিধিদেরকে পরামর্শের মাধ্যমে একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে উপনীত হতে সাহায্য করা হয়। বাহা’উল্লাহ্র প্রত্যাদেশ এবং বাহাই সম্প্রদায়ের স্থানীয় স্তরে অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে আহরিত অন্তর্দৃষ্টি জরুরি সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধানে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা হয়েছে তার প্রতি আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। নয়সালা পরিকল্পনার সময় নিশ্চিতরূপে আরও অনেক কিছু শেখার রয়েছে।
২০। আমরা এই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে চাই যে, ঐতিহাসিকভাবে এবং বর্তমান সময়ে, সামাজিক উদ্যোগ এবং সমাজের প্রচলিত কথোপকথনে অংশগ্রহণের প্রচেষ্টাগুলি শুধু মাত্র বৃদ্ধির সূত্র ধরে উদ্ভুত হয় না সেই সাথে তা সমাজের অগ্রগতিতে অবদান রাখার ক্ষেত্রে একক বাহাইয়ের গ্রহণসাধ্য উপায়গুলো প্রয়োগের প্রচেষ্টার ফলস্বরূপও উদ্ভুত হয়। পৃথিবীর উন্নতি সাধনের কাজ করার জন্য বাহা’উল্লাহ্র আহ্বানের প্রতি ব্যক্তিগত সাড়াদানরূপে বিশ্বাসীরা অনেক ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ পেশাকে বেছে নিয়েছেন এবং তারা সমমনা বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করার সুযোগ খঁুজে নিচ্ছেন। নানা ধরণের সামাজিক সমস্যাসমূহেরপ্রতি সাড়াদানের জন্য বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র আকারে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। বাহাইদের বিভিন্ন দলগুলি বিভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করার জন্য বাহাই—অনুপ্রাণিত নানা সংস্থা গড়ে তুলেছেন এবং কোনো বিশেষ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ প্রদান করার লক্ষ্যে বিশেষায়িত সংস্থাও গড়ে তোলা হয়েছে। এই সকল প্রচেষ্টার পরিধি যাই হোক না কেন, সেগুলো বিশ্বব্যাপী বাহাই সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের কার্যক্রম থেকে দিক—নিদের্শনা প্রদানকারী নীতি এবং অন্তদৃর্ষ্টি লাভ করেছে এবং স্থানীয় ও জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের বিজ্ঞতাপূর্ণ পরামর্শ থেকেও লাভবান হয়েছে। আমরা একটি বিভ্রান্ত এবং নিদারুণভাবে অশান্ত পৃথিবীর দুঃখ দুর্দশার প্রতি পুতঃপবিত্র সুষমা’র একনিষ্ঠ অনুসারীদের বিশ্বাসের এই সকল বৈচিত্র্যময়, সমন্বয়পূর্ণ প্রকাশ দেখে আনন্দিত।
শিক্ষামূলক প্রচেষ্টাসমূহ এবং প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট
২১। আধ্যাত্মিক ও সামাজিক রূপান্তর সম্পর্কিত বাহাই ধারণায় শিক্ষার গুরুত্বকে কোনো ক্রমেই অবমূল্যায়ন করা সম্ভব না। বাহা’উল্লাহ্্ বলেন, “পরম শিক্ষাদাতা, ঈশ^রের এই নামের প্রকাশের আলোয় বিষয়টি বিবেচনা কর। দেখ, কিরূপে সকল কিছুর মধ্যে এইপ্রকাশের সাক্ষ্যসমূহ প্রকটিত, কিভাবে সমস্ত কিছুর উন্নতি তার উপর নির্ভরশীল”। সমাজ বিনির্মাণ কাজে শিক্ষার গুরুত্ব প্রশ্নাতীত এবং সামাজিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে শিক্ষার সংস্থান বিশে^র বেশিরভাগ স্থানে বাহাই অবদানের বৈশিষ্ট্যরূপে বিদ্যমান রয়েছে। শিক্ষাদানের লক্ষ্যে বাহাই বিশ^ যেসকল কাঠামো এবং এজেন্সীগুলি দিয়েছে তাদের মধ্যে অবশ্যই প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট অগ্রগণ্য। বাস্তবিকই এমন সুদক্ষভাবে বিশ^জুড়ে পরিচালিত জাতীয় এবং আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের এই নেটওয়ার্কবিগত বিশ^জনীন পরিকল্পনাসমূহের ধারার উৎকৃষ্টতম ফল। ইন্সটিটিউট প্রক্রিয়া থেকে লাভবান হয়ে সম্প্রদায়সমূহের মাঝে সেবাদানের সামর্থ্য তৈরীতে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ব্যক্তিদের সক্ষমকরে তোলা বর্তমান ধারাবাহিক পরিকল্পনাগুলির মুখ্য বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি হিসেবে অব্যাহত থাকবে। সমাজের উন্নয়নের যে সামর্থ্য ইতিমধ্যেই বিকশিত হয়েছে, যার প্রতিনিধিত্ব করছে টিউটর, এ্যানিমেটর অথবা শিশু ক্লাসের শিক্ষক হিসেবে সেবা দান করতে সমর্থ লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি, তা এক ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহীসম্পদ।
২২। আমরা যখন প্রথম প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের ধারণা প্রবর্তন করে ছিলাম, তা ছিল প্রসারণ এবং দৃঢ় করণের জন্য মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে। এই সন্ধিক্ষণে সবেমাত্র যখন পরিকল্পনাসমূহের একটি নতুন ক্রমধারার সূচনা হয়েছেতখন আমরা আপনাদেরকে একটি অধিকতর বিস্তৃত দৃষ্টিতে বিষয়টিকে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। ইন্সটিটিউট কোর্সে অংশগ্রহণ ঈশ^রের বন্ধুদেরকে ক্রমবর্ধমানভাবে বৃহত্তর সমাজ জীবনের সাথে আরও গভীরভাবে বিজড়িত করছে; এটা তাদেরকে সেই জ্ঞান, অন্তর্দৃষ্টি এবং দক্ষতাসমূহ দান করছে যা তাদেরকে শুধু তাদের নিজের সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অবদান রাখতে সামর্থ্য প্রদান করে না বরং সমাজের অগ্রগতিতেও অবদান রাখে। মোট কথায়, ইন্সটিটিউট হলো ধর্মের সমাজ বিনির্মাণকারী শক্তি উন্মুক্ত করার এক অত্যন্ত কার্যকর মাধ্যম। যদিও এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সহায়তাদানকারী প্রয়োজনীয় পাঠ্য উপকরণ প্রস্তুত করার কর্মভার একটি দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রম, কিন্তু বর্তমানে উপলদ্ধ উপকরণগুলি ইতিমধ্যেই বহুমাত্রায় নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের সামর্থ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। তাছাড়া এই পাঠ্যসূচীগুলি পাঁচবছর বয়স থেকে শুরু করে কিশোর এবং পরিশেষে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য একটি নিরবিচ্ছিন্ন ও সুসঙ্গঁত শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে এবং তা তৃণমূল পর্যায়ে কার্যক্রমের যে ধারা উন্মোচিত হচ্ছে উহার সরাসরি পরিপূরকরূপে কাজ করছে। এই বিষয়টি লক্ষ্য করে আমরা আনন্দিত যে, বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে নানা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পটভূমিকায় বন্ধুরা সমাজ উন্নয়নের বিভিন্ন দিকে সমৃদ্ধ অন্তর্দৃষ্টির জন্ম দিচ্ছেন। এইসব অন্তর্দৃষ্টি এবং ভবিষ্যতে আরও যেসব অন্তর্দৃষ্টি উদ্ভূত হবে, সেগুলিকে যদি বাহাই সম্প্রদায়ের জন্য অধিকতর ব্যাপকভাবে লাভদায়ক করতে হয়, তাহলে শিক্ষা উপকরণগুলির প্রস্তুতি এবং পরিমার্জনার কাজটিকে আরও প্রসারিত করতে হবে। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে আমরা শীঘ্রই একটি পদ্ধতির সূচনা করতে যাচ্ছি যা আগামী বছরগুলিতে এই উদ্যোগকে পরিচালনা করবে।
২৩। শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার তিনটি স্তরের প্রত্যেকটি প্রদান করার ক্ষেত্রে ইন্সটিটিউটসমূহের সামর্থ্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা এটা লক্ষ্য করে আনন্দিত যে, শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতার মানোন্নয়নের প্রতি ক্রমবর্ধমান মনোযোগ প্রদান করা হচ্ছে। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয় এই যে, যারা ইন্সটিটিউটের সেবাদান কর্মের সাথে জড়িত, তারা যেন শিক্ষামূলক উপকরণ, তার লক্ষ্যসমূহ, তার কাঠামো, তার শিক্ষাদান নীতি, তার শিক্ষাদান প্রণালী এবং তার আন্তঃসংযোগ সম্পর্কে তাদের উপলদ্ধিকে ক্রমান্বয়ে উন্নত করতে সক্ষম হয়ে ওঠে। অনেক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট বোর্ড এই বিষয়ে সহযোগি গ্রুপগুলির সহায়তা পেয়েছেন, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাদের ২০১৫ সালের সম্মেলনে আমাদের বার্তায় দিয়েছিলাম। অনেক স্থানে পৃথক পৃথক টিমগুলি যথাক্রমে শিশুদের ক্লাস, জুনিয়র ইয়ুথ গ্রুপ এবং অধ্যয়ন চক্রের প্রতি বিশেষ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে, তারা যেসকল উপাদান তাদের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে তা চিহ্নিত করে এবং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সেবাদানরত বন্ধুদেরকে তাদের নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পথ খুঁজে বের করে নিতে সহায়তা করে। সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্য এবং তাদের সহকারীগণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথমে এটা নিশ্চিত করে থাকেন, যে শিক্ষা অর্জিত হচ্ছে তা যেন সংলগ্ন ক্লাস্টার এবং নিবিড় কার্যক্রমের কেন্দ্রগুলোতে বন্ধুদের বৃহত্তর সংখ্যার নিকট পেঁৗছায়। ইন্সটিটিউট কার্যক্রমের প্রসারে গভীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা রিসোর্স পারসন হিসেবে সেবাদান করছেন এবং যেসব ইন্সটিটিউট বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তাদের অগ্রগতিতে সাহায্য করায় বিশেষভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছেন। এতদসত্ত্বেও, সাধারণভাবে উপদেষ্টাগণই নিশ্চিত করছেন যে, প্রত্যেকটি ইন্সটিটিউট তাদের প্রতিবেশী দেশ এবং অঞ্চলসমূহের সহযোগী এজেন্সিগুলোতে যেসব অত্যাবশ্যক অন্তর্দৃষ্টিসমূহ উৎপন্ন হচ্ছে তার সাথে যেন পরিচিত হয়ে যান। উপদেষ্টাগণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন যেন, ইন্সটিটিউটগুলোকে এমনভাবে বিভিন্ন আকারে সংগঠিত করা হয়, যেন তারা অধিকতর অভিজ্ঞ ইন্সটিটিউটে যা শেখা হয়েছে তা ক্রমবর্ধমানভাবে আনুষ্ঠানিক সেমিনারের মাধ্যমে আরও ব্যাপকভাবে ভাগ করে নিতে সক্ষম হয়। এই সকল ব্যবস্থাকে আগামী পরিকল্পনায় শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে। যে সকল স্থানে জুনিয়র ইয়ুথ আধ্যাত্মিক ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচী ক্রিয়াশীল রয়েছে, সে সকল স্থানে লার্নিং সাইট এবং সংযুক্ত ইন্সটিটিউটসমূহের মধ্যে সহযোগিতা ইতিমধ্যেই অত্যন্ত ফলপ্রসু প্রমাণিত হয়েছে, এবং এই সহাযোগিতাকে তীব্রতর করতে হবে; তাদের একটি অভিন্ন লক্ষ্যের অন্বেষণ এবং ক্লাস্টারগুলোকে অগ্রসর হতে দেখার সম্মিলিত আকাক্সক্ষা পারস্পারিক সহযোগিতার ও সহায়তার চেতনার উন্নতির জন্য একটি আদর্শ অবস্থার সৃষ্টি করে। ইন্সস্টিটিউট প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে কোন উপাদান অবদান রাখে সে সম্পর্কে এখন ব্যাপক জ্ঞান পুঞ্জীভূত হয়েছে, আমরা আশা করছি যে, যা শেখা হয়েছে তা সুবিন্যস্ত করে আন্তর্জাতিক শিক্ষা কেন্দ্র আপনাদেরকে প্রদান করবেন।
২৪। আমরা উপরে এমন একটি শিক্ষামূলক পদ্ধতি বর্ণনা করেছি যা পরিমার্জনার এক অবিরত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এর অধিকতর উন্নতির জন্য বহু ব্যক্তির সহায়তা প্রয়োজন, এর জন্য আরও প্রয়োজন যে, ইন্সটিটিউটসমূহ এবং আরও ব্যাপক অর্থে বাহাই প্রতিষ্ঠানসমূহ, আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন যেন এমন ব্যক্তিবর্গ যারা সমাজের শিক্ষামূলক কার্যক্রমকে সহায়তা প্রদান করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সামর্থ্য অর্জন করেছে, যখন তাদের জীবনে অবস্থার পরিবর্তন আসে তারা যেন তখনও তাদের সেবা কর্ম ধরে রাখতে পারে এবং অন্যান্য অর্থবহ পথে ইন্সটিটিউটের কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে। বাহা’উল্লাহ্্র প্রত্যেক অনুসারীরা বিশেষ করে যুবকগণ যখন ইন্সটিটিউট প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা উপলদ্ধি করতে পারবে তখন তারা কোনো না কোনোভাবে ইহার অগ্রগতিতে অবদান রাখার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করবে। ইন্সটিটিউটসমূহ ভালোভাবে অবগত আছে যুুবসমাজের মাঝে যে সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে তা উন্মুক্ত করা তাদের একটি পবিত্র দায়িত্ব; তাই আমরা এখন বাহাই যুবকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারাও ইন্সটিটিউটের ভবিষ্যৎ উন্নয়নকে সেই একই আলোয় দেখে। আমরা এরূপ দেখার আশা করি যে, আগামী নয়বছর ইন্সটিটিউটের কার্যকারিতাকে এক উচ্চতর স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্প্রদায়—ব্যাপী প্রচেষ্টার মানদণ্ড যুবকদের এক ব্যাপক আন্দোলন সম্মুখসারিতে থেকে নিধার্রণ করবে। তারা তাদের বিদ্যালয়, বিশ^বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র, পরিবার অথবা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার স্থলে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যায় আত্মাগুলিকে, ইন্সটিটিউটের কর্মসূচীগুলো থেকে লাভবান হওয়ার জন্য উৎসাহিত করার প্রত্যেকটি সুযোগ অঁাকড়ে ধরবে। কিছু যুবক শিক্ষা প্রদানে বিশেষ করে তাদের বয়োকনিষ্ঠদের শিক্ষাদানে একটি নির্দিষ্ট সময় উৎসর্গ করতে সক্ষম হবে যা হয়তো পরপর কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে। আবার অনেকের জন্য ইন্সটিটিউট কার্যক্রমের প্রতি সহায়তা প্রদান জীবনের সকল ক্ষেত্রে, যা তাদের শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে যখন তারা এই জগতে তাদের জীবিকার সন্ধানের বেরিয়ে যাবে তখন পর্যন্ত সর্বদা উপস্থিত থাকবে, কিন্তু যেকারও জন্য এটা একটি সযত্নে লালিত অঙ্গীকারের চেয়ে কমকিছু হওয়া উচিত নয়।
২৫। সকল ধরণের শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি বিশে^র অনেক অঞ্চলে ব্যক্তি এবং পরিবারসমূহের ইন্সটিটিউটের কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের একটি স্বাভাবিক ফলাফল। যেসব বন্ধুগণ শিশু ক্লাসের শিক্ষক হিসেবে সেবাদান করছেন, তারা যাদেরকে শিক্ষাদান করছেন তাদের সামগ্রিক শিক্ষা অর্জনের বিষয়ে গভীরভাবে আগ্রহী থাকেন, অপরদিকে যেসকল বন্ধু টিউটর ও এ্যানিমেটর হিসেবে সেবাদান করছেন তারা স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন যে, বয়ঃপ্রাপ্তির দ্বার প্রান্তে উপনীত ছেলে—মেয়েরা যেন ইন্সস্টিটিউট প্রদত্ত কোর্সগুলো ছাড়াও অন্যান্য নানা ধরণের শিক্ষার সুযোগ থেকে উপকৃত হয়। উদারণস্বরূপ তারা যুবকদেরকে বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা অথবা বিশ^বিদ্যালয় পড়াশোনার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে উৎসাহ দান করতে পারে। আমরা অভিভূত যে, অনেক সম্প্রদায়ে, যেখানে অধিক সংখ্যক মানুষ ইন্সটিটিউট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছে সেখানে ঐ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতির এই দিকের পর্যায়ক্রমিক পুনর্গঠন ঘটছে। প্রভু ধর্মের প্রতিষ্ঠানসমূহকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে যে, যখন এইভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং ইহার ফলে যুব সমাজে উন্নত আদর্শের, অর্থাৎ সেইশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অর্জন করার আকাক্সক্ষার উদ্ভব হয় যা তাদেরকে সমাজের জন্য জীবনব্যাপী অর্থবহ সেবাদানে সক্ষম করবে, তা যেন পূর্ণ হয়। একটি সম্প্রদায়ের এবং চূড়ান্তভাবে একটি জাতির, প্রজন্মের পর প্রজন্মের দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন অনেকটাই নির্ভর করে, যারা সমষ্টিগত সামাজিক অগ্রগতির দায়িত্বভার গ্রহণ করবে তাদের উপর কি পরিমাণ উদ্যম বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
২৬। বাহাই নীতিভিত্তিক কোনো সমাজে শিক্ষার কেন্দ্রীয় স্থান সম্পর্কে অন্বেষণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি না আর একটি বিষয় বিবেচনা করা হয়। শোগি এফেন্দী “অব্যাহত প্রচেষ্টার” মাধ্যমে বাহা’উল্লাহ্্র বিস্ময়কর প্রত্যাদেশের তাৎপর্য সম্পর্কে যথাযথ উপলদ্ধি অর্জনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অসংখ্য আত্মাকে পদ্ধতিগতভাবে প্রত্যাদেশের জীবনদায়ী জল প্রদান ও ঈশ^রের অফুরন্ত বাণীর সাথে পরিচয় ঘটানোর জন্য, প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের সমকক্ষ অন্য কিছু নাই। প্রভু ধর্ম ও ইহার শিক্ষাসমূহের উপলব্ধি উন্নত করায় বন্ধুদের প্রচেষ্টা অবশ্যই কেবল ইন্সটিটিউট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃত পক্ষে কোনো ইন্সটিটিউটের কার্যকারিতার একটি স্পষ্ট সূচক হলো যে, যারা ইহার উপকরণগুলির সাথে বিজড়িত তাদের মধ্যে বাহা’উল্লাহ্র ধর্মের অধ্যয়নের এক তৃষ্ণা লালিত হয়, এই অধ্যয়ন তারা ব্যক্তিগত বা সম্মিলিতভাবে, প্রতিষ্ঠানসমূহের সৃষ্ট স্থানে অথবা বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক স্থানে অব্যাহত রাখে। প্রত্যাদেশের অধ্যয়ন ছাড়াও মানব কর্মকাণ্ডের অসংখ্য প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে শিক্ষাসমূহের অন্তর্নিহিত প্রভাবসমূহ বিশাল গুরুত্ব বহন করে। শিক্ষার ধরণের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ইন্সটিটিউট ফর স্টাডিজ ইন গ্লোবাল প্রোসপারিটি আয়োজিত সেমিনারগুলিতে অংশগ্রহণ, যার মাধ্যমে যুব বিশ^াসীরা মানবতার প্রগতি বিষয়ক প্রাসঙ্গিক বাহাই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আরও ভালোভাবে পরিচিত হতে পারে। প্রত্যাদেশের বিশালতার দিকে লক্ষ্য করলে এটা স্পষ্ট হয় যে, সেবার পথে অগ্রসর হতে চাওয়া প্রত্যেকটি আত্মার জন্য ইহার গভীরতার অন্বেষণ এক জীবনব্যাপী ব্রত।
২৭। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সমাজের অগ্রগতির জন্য প্রভুধর্ম যে অবদান রাখছে তা অধিকতর দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথে,বাহাই সম্প্রদায় যেসকল নীতিসমূহের প্রবক্তা সেই নীতিগুলি ব্যখ্যা করার জন্য এবং মানবতা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি তাতে সে সকল নীতির প্রাসঙ্গিকতা প্রদর্শন করার জন্য, তাদেরকে অধিকতরভাবে আহ্বান জানানো হবে। কোনো সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন যত বেশি প্রস্ফুটিত হবে এবং উন্নতি লাভ করবে, তত বেশিই তাদের এই আহ্বানের প্রতি সাড়া প্রদানের সামর্থ্য বৃদ্ধি পাবে। ইহা বাহা’উল্লাহ্র অনুসারীদেরই দায়িত্ব যে, কর্মের জগতে আধ্যাত্মিক এবং বস্তুগত উন্নতির প্রতি তারা যেরূপ অঙ্গীকারাবদ্ধ,অনুরূপভাবে তারা চিন্তার জগতে, বুদ্ধিবৃত্তিক বলিষ্ঠতা এবং ভাবনার স্বচ্ছতা প্রদান করবে।
সকল স্তরে প্রশাসনের সামর্থ্য বৃদ্ধি করা
২৮। আশি বছর পূর্বে, শোগি এফেন্দীর পক্ষ থেকে লেখা একটি পত্রে তিনি বাহাই প্রশাসনের এইরূপ বর্ণনা করেছেন; “ভবিষ্যতের সামাজিক জীবন যাত্রা এবং সাম্প্রদায়িক জীবনযাপনের আইন কীরূপ হবে তার প্রাথমিক অবয়ব”। বর্তমানে, অর্থাৎ সাংগঠনিক যুগের দ্বিতীয় শতাব্দীর সূচনা লগ্নে, বাহাই প্রশাসন যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে এবং সমাজ নির্মাণে প্রভু ধর্মের শক্তি উন্মুক্ত করার জন্য তার অব্যাহত উন্নতি অপরিহার্য।
২৯। তৃণমূল পর্যায়ে প্রভু ধর্মের পরিচালনা, অবশ্যই স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের উন্নয়নের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। প্রারম্ভিক অবস্থায় থাকা এই বিচারালয়গুলোকে শোগি এফেন্দী “বাহাই সমাজের প্রধান পেশিতন্তু এবং পাশাপাশি ইহার প্রশাসনিক কাঠামোর চূড়ান্ত ভিত্তি” বলে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি ইহাদের গঠনের গুরুত্বের প্রতি সবিশেষ জোর দিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে আমরা সকল স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের পুনঃনির্বাচন ও নতুন পরিষদ গঠন, বছরের যে কোনো সময় না করে রিজওয়ানের প্রথম দিনেই করার নিয়ম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আহ্বান জানাই। এই ক্রমবিকাশ এই বাস্তবতার সাথে সংযুক্ত ছিল যে, যদিও অন্য এলাকার বিশ্বাসীরা কোনো স্থানে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহায়তা প্রদান করতে পারে, কিন্তু যে কোন স্থানে পরিষদকে নির্বাচিত করার এবং তার কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব মূলত সেই এলাকার অধিবাসী বাহাইদেরই, এবং তা প্রধানত প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদের প্রস্তুতির উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লক্ষ্য করা হয়েছে যে, কোনো স্থানে বসবাসকারী ব্যক্তি এবং পরিবারগুলোর মধ্যে বাহাই শিক্ষাভিত্তিক কর্মধারা প্রতিষ্ঠা হওয়ার সাথে সাথে কিভাবে বাহাই পরিচয়ের অনুভূতি ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়। এর ফলে স্থানীয় পরিষদ গঠন সম্ভপর হওয়ার সময় আসতে আসতে দেখা যায় যে ইতিমধ্যেই তারা সম্প্রদায় বিনির্মাণের কার্যক্রমের একটি নির্দিষ্ট স্তর অর্জন করেছে। এই সময় যখন কাছে চলে আসে তখন বিলম্ব করা উচিত হবে না, তখন বাহাই প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত সম্প্রদায় জীবনের আনুষ্ঠানিক দিকগুলোর চর্চাকে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এমন পরিবেশে যে স্থানীয় পরিষদের জন্ম হয়, তাদের একটি স্পন্দনশীল সম্প্রদায়কে টেকসই করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রমগুলিকে উৎসাহদান ও শক্তিশালী করার দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে অধিকতর সচেতন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু এইসব পরিষদগুলোকে অন্যান্য বহুবিধ দায়িত্ব পালনেও দক্ষতা অর্জন করতে হবে, এই ক্ষেত্রে আপনাদের ও আপনাদের সাহায্যকারীদের প্রদত্ত সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের ২০১০ সালের সম্মেলনে আমাদের বার্তায় আমরা এই ধরনের পরিষদের অগ্রগতির পথ বর্ণনা করেছিলাম এবং তার কার্যক্রমের যেসব বিভিন্ন দিকের প্রতি মনোযোগ প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে সেগুলির প্রতি ইঙ্গিত করেছিলাম, যার মধ্যে স্থানীয় তহবিল—এর উন্নতি ও তার ব্যবস্থাপনা, যথাসময়ে সামাজিক উদ্যোগের প্রতি সমর্থন দান এবং স্থানীয় সরকার ও সুশীল সমাজের সাথে যোগাযোগ অন্তর্ভুক্ত। এই ধরণের পরিষদ দ্বারা সেবা প্রাপ্ত সমাজ যে উপকার লাভ করে তার কোনো বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়োজন হয় না।
৩০। জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ আঞ্চলিক বাহাই কাউন্সিলসমূহের সাথে আপনাদের যোগাযোগের সময় আমরা আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাব যেন, আপনারা স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ গঠন এবং তাদের কার্যক্রম দৃঢ়করণের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদান করবেন, বিশেষ করে সেই সব এলাকায় যেখানে বৃদ্ধির এই দিকটা হয়তো কম গুরুত্ব পেয়ে আসছে। আমরা প্রত্যাশা করছি যে, এই মনোযোগ স্থানীয় পরিষদসমূহের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধিতে বছরের পর বছর ধরে অবদান রাখবে। কতিপয় দেশে আপনাদের আলোচনায় এই বিষয়েও বিবেচনা করতে হবে যে, গ্রামাঞ্চলের প্রত্যেকটি এলাকার সীমানা নির্ধারণের বর্তমান ব্যবস্থা যথোচিত কিনা।
৩১। এক চিত্তাকর্ষক অন্তদৃর্ষ্টি যা উদিত হয়েছে তা হলো, কোনো সমাজে স্থানীয় পরিষদের মর্যাদা এবং নেতৃত্ব কোন মাত্রায় স্বীকৃতি প্রাপ্ত হবে তা নির্ভর করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পবিত্রতা রক্ষা, এবং কোনো ধরনের প্ররোচনা এবং ক্ষমতা বিষয়ক জাগতিক মনোভাবের দূষণ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তভাবে নির্বাচনেঅংশগ্রহণের দায়িত্ব সম্পর্কে বিশ্বাসীদের উপলব্ধি কতটা গভীর। একটি সম্প্রদায়ে যখন বাহাই নির্বাচনের অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক নীতিগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় তখন প্রতিষ্ঠানে সেবাদানের জন্য কারো প্রতিআহ্বান আসার অর্থ কি সে সম্পর্কে একটি নতুন ধারণার উদয় হয় এবং ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং স্থানীয় পরিষদ ও তার এজেন্সীগুলোর পারস্পরিক সম্বন্ধ সম্পর্কে উপলব্ধি বৃদ্ধি পায়। যেসব সম্প্রদায়ে স্থানীয় পরিষদের গঠন এবং তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কথোপকথনের পদ্ধতিগত প্রচেষ্টাকেউৎসাহিত করা হয়েছে এবং সেই আলোচনা বছরের পর বছর চালিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের সবলতা ও সমাজ জীবনের গতিশীলতা একে অপরকে আরো শক্তিশালী করে।
৩২। উভয় পক্ষের এই পারস্পরিক প্রচেষ্টার প্রভাব বিশেষভাবে সেই সকল স্থানে লক্ষণীয় ছিল যেখানে আমরা গত দুই বছরে স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের জন্য একটি দুই স্তর বিশিষ্ট নির্বাচনী প্রক্রিয়া গ্রহণের অনুমোদন প্রদান করেছিলাম, এই পদ্ধতির উৎস হলো তেহরানের আধ্যাত্মিক পরিষদকে দেওয়া আব্দুল—বাহার নির্দেশনাবলী। এই সময়কালে আটটি দেশে বাইশটি স্থানীয় পরিষদ এই পদ্ধতিতে নির্বাচিত হচ্ছে। এই পদ্ধতি অনেক দিক দিয়ে জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ নির্বাচনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, এতে কোনো একটি এলাকাকে ইউনিটে ভাগ করে নেওয়া হয় এবং প্রত্যেকটি ইউনিট থেকে এক বা একাধিক প্রতিনিধি (ডেলিগেট) নির্বাচন করা হয় এবং তারপর এই প্রতিনিধিরা স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদের সদস্যদেরকে নির্বাচিত করেন। যে অনুপাতে কোনো এলাকায় বাহাইদের সংখ্যা বৃহৎ আকার ধারণ করে এবং সম্প্রদায়ের জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেই এলাকায় দুই স্তর বিশিষ্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দাবি অধিকতর জোরদার হয়। অতএব, আগামী পরিকল্পনায় আমরা আশা করছি যে, যে সকল স্থানে পরিস্থিতি এমন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সময়োপযোগী হয়েছে, সেইরূপ আরও অনেক নগর ও গ্রাম উভয় স্থানেই আমরা স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনের এই পদ্ধতির অনুমোদন দিতে পারব।
৩৩। একটি স্থানীয় আধ্যাত্মিক পরিষদ তার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় সর্বোত্তমভাবে কিরূপে সম্প্রদায় নির্মাণের কাজ শেখা যেতে পারে তার প্রতি গভীর আগ্রহ বজায় রাখে, সেই জন্য তারা ক্লাস্টারে যে সকল বন্ধুরা সমন্বয় সাধনের কাজ করছেন তাদের সাথে নিয়মিতভাবে পরামর্শ করে থকেন। তারা তাদের এলাকায় যেকোনো নিবিড় কার্যক্রমের কেন্দ্রগুলোর বিকাশকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে, বিশেষকরে সেই স্থানে বন্ধুদের যে দলগুলো গড়ে উঠেছে এবং বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করছে তাদেরকে সহায়তা দানের মাধ্যমেই ইহা সম্পাদিত হয়। সাধারণত, এলাকা পর্যায়ে বা এলাকার বিশেষ কোনো অংশে কার্যক্রমসমূহ—যেমন গৃহ সাক্ষাৎ অভিযান পরিচালনা, যে সকল পরিবার ভক্তিমূলক সভার আয়োজন করছে তাদের সাহচর্য প্রদান করা অথবা তাদেরকে একসাথে কাজ করার জন্য দল গঠন করার প্রতি উৎসাহ দান করা—যত তীব্রতর হয়ে ওঠে ততই সাংগঠনিক ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় এবং স্থানীয় পরিষদ তত বেশি লক্ষণীয় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। যেসকল অঞ্চলে বৃহৎ সংখ্যায় মানুষকে বাহাই কার্যক্রমে স্বাগত জানানো হচ্ছে সেই সকল এলাকার পরিষদের কাজে জটিলতাও বহুবিধ দায়িত্ব বাড়ছে, ফলত অনেক ক্ষেত্রে তার সেক্রেটারীর কমীর্ সম্বলিত কার্যালয়ের প্রয়োজন হয় এবং পরিশেষে একটি উপযুক্ত স্থানীয় হাজিরাতুল কুদুস্—এর প্রয়োজন খুব জরুরি হয়ে পড়ে।
৩৪। স্থানীয় পরিষদ হলো যখন সমাজের উন্নয়ন লালনের দায়িত্বের ভাগ অধিক থেকে অধিকতর গ্রহণ করা শুরু করে তখন আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের সহায়তা প্রচেষ্টায় আরো প্রণালীবদ্ধ হয়। আমরা লক্ষ্য করে আনন্দিত যে, এই বিষয়টিকে সুশৃক্সক্ষলভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, উদাহরণ স্বরূপ জাতীয় পরিষদ অথবা আঞ্চলিক কাউন্সিলসমূহ কার্যক্রমের গতিপথ উন্মোচনের জন্য স্থানীয় পরিষদের সেক্রেটারী এবং অন্যান্য অফিসারদের সাথে নিয়মিতভাবে আলোচনার জন্য মিলিত হচ্ছেন।
৩৫। কোনো আঞ্চলিক কাউন্সিল যখন প্রশাসন পরিচালনায় এমন উন্নত সামর্থ্য অর্জন করে যার মধ্যে একাধিক ক্লাস্টারকে একযোগে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের সামর্থ্যও অন্তর্ভূক্ত, তা সমগ্র অঞ্চলের জন্য দ্রুত অগ্রগতির জন্য সহায়ক হয়েছে। আপনাদের ২০১৫ সালের সম্মেলনে দেওয়া আমাদের বার্তায় আমরা ইঙ্গিত দিয়েছিলাম আয়তনে ক্ষুদ্রতম দেশগুলিতে যেখানে আঞ্চলিক বাহাই কাউন্সিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা নাই সেখানে জাতীয় স্তরে এমন একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামোর অভ্যুদয়ের প্রয়োজন রয়েছে যাদেরকে ক্লাস্টারসমূহের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। আমরা আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, আপনারা এখন একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো—জাতীয় বৃদ্ধি কমিটি গঠনের জন্য জাতীয় পরিষদসমূহের সাথে পরামর্শ গ্রহণপূর্বক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন যার তিন, পাঁচ বা সাত সদস্য থাকবে। এই এজেন্সীকে ক্লাস্টারগুলোকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পরিষদকে প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা দিতে হবে, এই বিষয়ে তারা আঞ্চলিক কাউন্সিলের অর্জিত অন্তর্দৃষ্টির অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারেন। কমিটির দায়িত্বের মধ্যে এরিয়া শিক্ষা কমিটিগুলো নিয়োগ এবং তাদেরকে তাদের পরিচালনায় উৎসাহদান করা স্বদেশীয় পথিকৃৎ প্রেরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মূল লিখনাবলির বিতরণ অন্তভুর্ক্ত থাকতে পারে। কমিটি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের যা স্বয়ং জাতীয় পরিষদের একটি এজেন্সী তাদের দেশে সেবাদানরত সাহায্যকারী বোর্ডের সদস্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ সহগোগিতায় উপকৃত হবে। তারা সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার সাথেও সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে। যদিও একটি জাতীয় পরিষদ স্বাভাবিকভাবেই কমিটির কাজের সাথে একটি চলমান ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে ইচ্ছা পোষণ করবে এবং তাকে দিক—নির্দেশনা, সহযোগিতা এবং উৎসাহ প্রদান করবে, এমন একটি কাঠামো সৃষ্টি করা যা পুরোপুরিভাবে বৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে নিবিষ্ট তা পরিষদকে অন্যান্য গুরুত্বপুর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে সমর্থ করবে। যে সকল দেশে এখন পর্যন্ত কাউন্সিল গঠন হয় নাই কিন্তু অবশেষে তা প্রতিষ্ঠিত হবে সে সকল স্থানে ঐ সময়ে জাতীয় বৃদ্ধি কমিটি নিয়োগ করা যেতে পারে।
৩৬। পরিকল্পনার একনিষ্ঠ অনুধাবনের ফলে যে আধ্যাত্মিক শক্তিসমূহ উন্মুক্ত হয়েছে তা এমন বিপরীত মুখী শক্তিসমূহের প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে যা মানবতাকে পূর্ণ পরিপক্কতা লাভ থেকে বিরত রাখছে। এই জাতীয় শক্তিগুলোর মোকাবেলায় স্থানীয় স্তরে চলমান বিভিন্ন কর্মধারাকে সংরক্ষণ ও শক্তিশালী করতে হবে। এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বিশেষ করে দুইটি সাহায্যকারী বোর্ডের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, যাদের অসংখ্য এবং দুরূহ দায়িত্বগুলো তাদেরকে তৃণমূলপর্যায়ে পরিস্থিতির সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত থাকে এবং যেকোনো বিষয়ে যা সমাজের উদ্দীপনাকে প্রভাবিত করতে পারে তার সম্পর্কে সর্তক রাখে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক পরিবেশ জুড়ে বন্ধুগণ যে সকল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা অবশ্যই তাদেরকে তাদের মোকাবেলায় সহায়তা প্রদান করবে। তারা পূর্বে পরস্পর বৈরীভাবাপন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি অভিন্ন লক্ষ্যের অন্বেষণের মাধ্যমে একতার সন্ধান পেতে সাহায্য করবে। যেন তারা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মানবতার বয়ঃসন্ধিকালের রীতিনীতি এবং মনোভাব ত্যাগ করতে শিখে এবং সমস্ত প্রকার কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠতে তাদের সাহায্য করবে, তারা বিষয়গুলোকে সংশয়ের দৃষ্টি থেকে দেখার অথবা অন্যদের ভুল খোঁজার প্রবণতা থেকে সতর্ক থাকতে এবং তার পরিবর্তে একটি উৎসুক এবং গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রাখতে সাহায্য করবে। তারা নারী—পুরুষের সমতাকে বাস্তবে পরিণত করবে, তারা ব্যক্তি উদ্যোগকে উৎসাহ দানের চর্চার মাধ্যমে জড়তা, উদাসীনতা পরিত্যাগ করতে, পরিকল্পনাসমূহের সহায়তায় সম্মিলিত উদ্যোগকে ব্যক্তিগত পছন্দ—অপছন্দের অনুভূতির ঊর্ধ্বে রাখা; আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষমতাকে তার সম্ভাব্য দুর্বল করার প্রভাবের প্রলোভনে না পড়ে কাজে লাগানো, ধর্মের শিক্ষাদানের মধুরতাকে মূল্যবান জ্ঞান করাএবং মানবজাতির সেবার আনন্দকে জাগতিক স্বার্থসমূহের ঊর্ধ্বে রাখা, ভোগবাদের মাদকতাকে প্রত্যাখ্যান করা, বস্তুবাদী মতাদর্শ এবং তার খুবই আগ্রহী বিশ্ব দর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে সেই উজ্জ্বল আলোকবর্তিকার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যা হলো ঈশ্বরের আইন এবং নীতিসমূহ। এই সমস্ত এবং তা অতিরিক্ত বিশ্বাসীদের দল যখন মানবজীবনের কোলাহলপূর্ণ বছরগুলোতে তাদের পথ পাড়ি দিচ্ছে তাদের সামনে দুরূহ অনেক দায়িত্বের এক সমষ্টি রয়েছে। আপনাদের সাহায্যকারীদের, যারা দলে দলে যোগদানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াকে অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্যভাবে সম্পাদন করছেন, তারা যখনই এবং যেখানেই দাঁড়াবেন তখন নিজেকে এই চ্যালেঞ্জের সমকক্ষ প্রমাণ করবেন। তারা তাদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ এবং তাদের সদুপদেশের স্বচ্ছতার শক্তির মাধ্যমে যেন তারা বন্ধুদেরকে ধর্মের বিকশিত, নিশ্চিত এবং সেবামূলক জীবনের দায়বদ্ধতা ও সাহচর্যের মাধ্যমে এমন সমাজ গড়ে তুলতে সহায়তা দান করবে, যে সমাজ শান্তির আশ্রয়স্থল, এমন স্থান যেখানে নিঃগৃহীত এবং দ্বন্দ্বে ক্ষত বিক্ষত মানবতা রক্ষা পেতে পারে।
৩৭। পরিকল্পনাসমূহের গত ধারায় ধর্মের অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার সমাজের সামর্থ্য তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তিরূপে আর্বিভূত হয়। কিন্তু মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার এই অনুভূতিকে কর্মক্ষেত্রে অনেক পথের জন্য স্থান করে দিতে হয়েছে, এই সকল কর্মপন্থাকে এক অপরের প্রতিযোগি না হয়ে একত্রে অগ্রসর হতে হবে। এটা একটি প্রসারিত কল্পদৃষ্টির সহ অবস্থানরত প্রয়োজনসমূহের সম্পর্কে একটি বহুস্তর বিশিষ্ট উপলব্ধি, অধিককতর নমনীয়তা এবং আন্তঃপ্রতিষ্ঠান সহযোগিতার একটি উচ্চতর স্তরের আহ্বান জানায়। আমরা অবগত আছি যে, ধর্মের সম্পদগুলো সীমিত এবং ব্যক্তি বাহাইদের সময়ের প্রতি অন্যান্য দাবিও রয়েছে। কিন্তু যখন একটি নির্দিষ্ট স্থানে পরিকল্পনা উন্মোচিত হয় এবং যারা সেবাদানে ইচ্ছুক তাদের সংখ্যা স্ফীত হতে থাকে, তখন বাহাই সমাজ জীবনের স্পন্দনশীল এবং সমৃদ্ধ বিভিন্ন দিকগুলো এগিয়ে আসে এবং ধর্মের সমাজ বিনির্মাণকারী শক্তি উজ্জ্বলভাবে প্রদান করে।
একটি ঐতিহাসিক দৌত্যকার্য
৩৮। আমরা আশা করছি এই পৃষ্ঠাগুলোতে আমরা বর্তমান সময়ে বাহাই সমাজের সামর্থ্য এবং একটি সুশৃঙ্খলকর্ম কাঠামোর প্রতি দৃঢ়সংলগ্নতা নিয়মাবর্তীতার সাথে যুক্ত হয়ে সমাজ তার সমস্ত আধ্যাত্মিক এবং বস্তুগত সম্পদের একটি ব্যাপক এবং খুবই কড়া মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুত করেছে। যে পরিকল্পনা শীঘ্রই শুরুতে যাচ্ছে, যা পঁচিশ বছরব্যাপী পবিত্র উদ্যোগের প্রথম প্রধান উদ্যোগ যা তার পরিসর এবং গুরুত্বের দিকে কয়েক প্রজন্মকে অন্তর্ভূক্ত করে, তা এ সকল বিশ্বাসী, সমাজ এবং প্রতিষ্ঠানসূহের যে দাবিগুলো উপস্থাপন করবে তা আমাদেরকে শোগি এফেন্দী দশসালা ধর্ম অভিযানের শুরুতে বাহাই বিশ্বের সামনে যে দাবিগুলো রেখেছিলেন তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শক্তিমান ঈশ্বরের অনুগ্রহে বন্ধুদেরকে বীরত্বের যে উচ্চতায় আরোহণের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে তারা যদি তা অর্জন করতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে ইতিহাস তাদেরকে কোনো ক্রমেই ধর্মের সাংগঠনিক যুগের প্রথম শতাব্দীতে যারা তাদের মহিমান্বিত কর্মের জন্য ইতিহাসের পাতায় যেরূপ অলঙ্কৃত করে রেখেছেন ইতিহাস তাদেরকেও নিঃসন্দেহে তার চেয়ে কম প্রদীপ্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করবে না।
৩৯। আমরা আপনাদের এবং জাতীয় আধ্যাত্মিক পরিষদসমূহের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখি যে, আপনারা বন্ধুদেরকে এই যৌথ উদ্যোগের প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত করার সমস্ত প্রচেষ্টায় তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অবশ্যই দৃষ্টিতে রাখবেন। আজকের সভ্যতা তার সমস্ত বৈষয়িক ক্ষমতা সত্তেও প্রমাণিত হয়েছে এবং সবোর্চ্চ লেখনী তার ক্রটিপূর্ণ রায় ঘোষণা করেছে; “আমরা কি অবগত নই যে, মানুষেরা যার অধিকার ছিল তা গুটিয়ে নিয়েছি এবং তার পরিবর্তে একটি নতুন ব্যবস্থা উন্মোচন করেছি?” অভিভাবকের ভাষায় ঐশী সভ্যতা প্রতিষ্ঠা “বাহাই ধর্মের মূল দৌত্যকার্য।” এটা যে ভক্তিমূলক গুণাবলির উপরে নির্মিত হবে আজকের পৃথিবীর যার অনেক প্রয়োজন অর্থাৎ: একতা, বিশ্বস্ততা, পারস্পরিক সহায়তা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, নিঃস্বার্থপরতা, সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা, দায়িত্ববোধ, শেখার জন্য তৃষ্ণা, একটি সর্বালিঙ্গনকারী হৃদয়ের ভালোবাসা।
৪০। আমরা মানবতাকে তার প্রভুর ভালোবাসা দ্বারা আলোকিত দেখতে কতই না আকাক্সক্ষা করি: আমরা আকুলভাবে প্রত্যেকটি রসনায় তাঁর প্রশংসাগীত শ্রবণ করতে ইচ্ছুক। আমাদের আকাক্সক্ষার আকুলতা সম্পর্কে অবগত হয়ে আপনারা তাহলে আমাদের আবেগ সম্পর্কে জানেন আমরা যখন আমাদের মস্তক পরম পবিত্র সমাধির দোরগোড়ায় নত করি, আমরা বাহা’উল্লাহ্র কাছে মিনতি করি যেন, আপনারা এবং সকলেই যারা তাঁর অমূল্য ধর্মকে ভালোবাসেন তারা যেন তাঁর বর্ণনাতীত অনুগ্রহের অধিকতর নিখঁুত প্রণালীতে পরিণত হতে পারেন।
-সার্বজনীন বিচারালয়।